মার্চের উত্তাল দিনগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনায় এক ভিন্ন মাত্রা পায়। নিজেরা সম্মুখ বা গেরিলা যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন তাঁরাই আবার লিখেছেন সেইসব দিনের বর্ণনা। নির্মোহ দৃষ্টিতে এরকমই বর্ণনা দিয়ে একাত্তরের উত্তাল মার্চের অনেক তথ্য তুলে ধরেছেন মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন। সাত পর্বের এই ধারাবাহিকটির দ্বিতীয় পর্ব আজ প্রকাশিত হলো।
…………………………………………………………
৮ মার্চ থেকেই গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর সবখানে অসহযােগ আন্দোলনের পাশাপাশি প্রতিরােধ আন্দোলন গড়ে উঠে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতই প্রত্যেক পাড়ায়-মহল্লায় স্বেচ্ছাসেবক কমিটি গঠিত হতে থাকে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলাে কেবল আন্দোলন সংগিঠত করা নয়। আন্দোলনের নামে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা। বিশেষত অবাঙালিদের ওপর যাতে কোন অত্যাচার-নির্যাতন না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণেই অবাঙালিদের জান মাল রক্ষার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। স্বেচ্ছাসেবকরা দিন-রাত পাড়ায় পাড়ায় সতর্ক পাহারা দিতে থাকে। অন্যদিকে, ক্যান্টনমেন্ট থেকে বাইরে যাওয়ার রাস্তাগুলাে বিক্ষুব্ধ জনতা গাছ ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে যাতে সেনাবাহিনী বা প্রশাসনের লােকেরা সহজে শহরের বাইরে যেতে না পারে। তখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, কোথাও কোন নির্দেশনা বা নেতার প্রয়ােজন ছিল না। মনে হয় সবাই একেকজন বঙ্গবন্ধুর সৈনিক।
১৯৭১ সালে রংপুর সেনানিবাসের কর্মকর্তা ছিলেন কর্ণেল সাগির। তিনি ৩ মার্চের পর থেকেই জেলা প্রশাসক সৈয়দ শামীম আহসানকে আইন-শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণভার সেনাবাহিনীর হাতে ন্যস্ত করতে চাপ দিতে থাকেন। ৭মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর সেনাবাহিনীর চাপ আরও বাড়তে থাকে। তারা রাস্তার বেরিকেড অপসারণ ও অসহযােগ আন্দোলন দমানাের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। জেলা প্রশাসক সৈয়দ শামীম আহসান কৌশলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়ােজন করেন। সেখানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কর্ণেল সাগিরকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন নির্বাচিত গণপরিষদের অধিবেশন আহবান করে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মত প্রতিরােধ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সেদিন কর্ণেল সাগির মুখ অন্ধকার করে নীরবে সভা শেষ না করেই বেরিয়ে যান। জেলা প্রশাসক শামীম আহসান তখন নেতৃবৃন্দদের বলেন, আর কোন পথ খােলা নেই। সংঘর্ষ অনিবার্য। আপনাদেরকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিস্থিতি মােকাবিলা করতে হবে। স্থানীয় গণপরিষদ সদস্য সিদ্দিক হােসেন, নুরুল হক, আব্দুল আউয়াল, ন্যাপ নেতা মাহফুজ আলী জররেজ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের সাথে একাত্তে সলা-পরামর্শ করেন। নেতৃবৃন্দ পরে জানান যে, রংপুরে পরিস্থিতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু সবকিছু অবহিত আছেন। পরিস্থিতি মােকাবিলায় নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যান। ইতােমধ্যে ছাত্র নেতারা অন্ত্র সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে থাকেন এব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন ছাত্রলীগ নেতা কারমাইকেল কলেজের ভিপি শহীদ খােন্দকার মুখতার এলাহী। তাঁর বাসা ছিলাে ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন মেডিকেল মােড়ে। তিনি সেনাবাহিনীর গতিবিধির ওপর কড়া নজর রাখতেন এবং নিশ্চিত হন যে, দেশকে পাকিস্তানি জান্তার কবল থেকে মুক্ত করতে হলে যুদ্ধ অনিবার্য। সেজন্য তিনি অতি গােপনে স্থানীয় যুবকদেরকে সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের আয়ােজন করেন।
মার্চ থেকে রংপুরে রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি চলে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সরাসরি বেতার-টেলিভিশনে প্রচার করতে দেয়া না হলে শিল্পীরা ধর্মঘটের ডাক দেয়। ৮ মার্চ সকালে শিল্পী-কলাকুশলীদের আন্দোলনের চাপে বাংলাদেশ বেতারে ভাষণটি প্রচার করতে দেয়া হয়। বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা থেকেও ভাষণের অংশবিশেষ প্রচার করা হয়। এই ভাষণটি গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় শিল্পীসমাজ দারুণভাবে উজ্জীবিত হয়। অন্যান্য এলাকার মত রংপুরেও শিল্পীরা ইয়াহিয়া ভূট্টোর বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়ােজনের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। তারা গণসংঙ্গীত, পথ-নাটক, গীতিনাট্য, ছায়ানাট্য, গীতি নকশা ইত্যাদি পরিবেশন করে গণজাগরণ সৃষ্টি করে। তারা কেবল শহরে নয় গ্রামাঞ্চলেও ভ্রাম্যমান দল গঠন করে অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। তখন সারগম অর্কেট্ট্রা ও কলাকৃষ্টি নামে দুটি সংগঠন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ সংগঠনগুলাের সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদের অন্যতম
হলেন- কনিকা রায়, অজিত রায়, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, আয়েনুজ্জামান, জেড.এ রাজা, নীলুফার আহমেদ ডলি, তার বােন ডজি, মহসিন আলী, খাদেমুল ইসলাম বসুনিয়া, আব্দুল গফুর, মুকুল মােস্তাফিজুর রহমান, মােঃ আজিম কচি, রামকৃষ্ণ সােমানী, কায়সুল হক, ওয়াজেদুল করিম, নুরুজ্জামান আহমেদ দুলাল, রঞ্জন ঘটক, মােস্তাফিজার রহমান, মনােয়ারা আলী মনু, আব্দুল বাতেন সরকার, রুস্তম আলী, খালেকুজ্জামান বসুনিয়া, তােজাম্মেল হােসেন টুনু, মােহাম্মদ ইলিয়াস, শফিকুল ইসলাম সন্টু, শরীফা রাণী, লায়লা আর্জুমান্দ বানু, আশরাফুজ্জামান সাজু, খােকা, সাইফুল ইসলাম, শহিদুর রহমান বিশু, রনী রহমান, আবুল কালাম আজাদ, পানােয়ার রহমান ভূইয়া, বিনয় কুমার বনিক, আবু ইউনুছ বাদশা, এনামুল হাফিজ বাচ্চু, শামসুন নাহার রেনু, খুকু রাণী হালদার, মিহির কুমার হালদার, আহমেদ নুর টিপু, রবী পাল, আদিনা, নিউমি, মমতাজ বেগম রুমা, ম্যানিলা, রেবেকা সুলতানা, জাকিয়া সুলতানা, মেরী, লােনা, রীনা, সাথী, ভাইয়া, মুক্তি, পােখরাজ, ইকবাল প্রমূখ। আর একজন ছিলেন সাজ্জাদ হােসেন খান তুতলী, যিনি পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে নিহত হন। তুতলী ৯ মাসে অনেক বাঙালি নারীকে খান সেনাদের হাতে তুলে দেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে রংপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শতাব্দীর আহবান ও উদীচী শিল্পীগােষ্ঠী গণজাগরণ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব সংগঠনের অধিকাংশ শিল্পী মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। যদিও অনেকেই এখনও মুক্তিযােদ্ধার তালিকাভূক্ত হতে পারেনি। প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা ৯ মাস যুদ্ধ না করলেও সে সময় শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলােয়াড়, সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে তাদের অবদানও কম নয়।
১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও জুলফিকার আলী ভূট্টোর চক্রান্তের কারণে ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে তিনি রাজী ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীর ওপর শােষণ, নির্যাতন, বঞ্চনা শুরু করে। প্রথমেই তারা আঘাত করে মাতৃভাষার ওপর। তারা চেয়েছিল উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ এটা মেনে নেয়নি।
ফলে ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার আন্দোলনে পাকিস্তানি জান্তার পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফক, জব্বার সহ ৮ জন। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৬২’তে হামিদুর রহমানের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে শুরু হয় আহয়ুব বিরােধী ছাত্র আন্দোলন। তখন মােনায়েম খান ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর। মােনায়েম খান রংপুর রেল ষ্টেশনে আসলে রংপুরের ছাত্ররা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। মােনায়েম খানের লেলিয়ে দেয়া গুগ্তা বাহিনী ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। এতে অনেক ছাত্র আহত হন। এসময় ছাত্র আন্দোালনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ছাত্রনেতা আনিস, রওশন, মােহাম্মদ অফজাল, হালিম বান, গােলাম মােস্তফা বাটুল, কাশেম, গােলাম কিবরিয়া, ওয়াজেদুল করিম, আবু আলম, ফজলুর রহমান, আবু বক্কর, আশেক হােসেন প্রমুখ।
১৯৬৬’তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানিদের মুক্তির লক্ষ্যে ৬ দফা দাবী পেশ করেন। আইয়ুব খান ৬ দফা মেনে নেয়ার পরিবর্তে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর দেশব্যাপী আইয়ুব বিরােধী আন্দোলন জোরদার হয়। ১৯৬৯ সালে ছাত্র নেতৃবৃন্দ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ১১ দফা দাবী পেশ করে এবং দেশের আনাচে-কানাচে তীব্র আন্দোলন গড়ে তােলে। আইয়ুব বিরােধী তীব্র আন্দোলনের ফলে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়া হয় এবং আইয়ুব খানকে হটিয়ে ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারী করে ১৯৭০ সালে দেশে সাধারণ নির্বাচন দেন। এতে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগের এই বিপুল বিজয় মূলত: ২৩ বছর পাকিস্তানিদের শােষণ, নির্যাতন, বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারাবাহিকতার ফসল।
১২ মার্চ ১৯৭১ এর এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারাদেশে চলছিল অসহযােগ আন্দোলন। তাঁর হুকুমেই অফিস, আদালত, ব্যাংক, বীমা সবকিছু পরিচালিত হচ্ছিলাে। অবস্থা বেগতিক দেখে ইয়াহিয়া খান আবার আলােচনার প্রস্তাব দেয়। এবার ভূট্টোকেও সেই আলােচনায় বসার জন্য ইচ্ছা ব্যক্ত করে। এদিকে, আওয়ামী লীগের নির্বাচিত গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ গ্রামে-গঞ্জে প্রতিরােধ আন্দোলন গড়ে তােলেন। তারা ক্যান্টনমেন্টে স্থানীয়ভাবে সরবরাহকৃত খাদ্যদ্রব্য বন্ধের উদ্যোগ নেন। উপায়ান্তর না দেখে সেনা সদস্যরা আশপাশের গ্রামগুলাে থেকে তরিতরকারী, ডিম, মুরগী ইত্যাদি সংগ্রহে বেরিয়ে পড়ে। গ্রামবাসী তাদের কাছে কোন জিনিস বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন তারা অবাঙালিদের সহায়তায় স্থানীয় হাট-বাজার থেকে প্রয়ােজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে। অন্যদিকে, ইয়াহিয়া খান আলােচনার কথা বলে কালক্ষেপণ করতে থাকে এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সামরিক সরঞ্জাম চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠাতে থাকে। এ বিষয়টি বাঙালী সেনা কর্মকর্তারা বুঝতে পেরে নিজেদের মধ্যে সলাপরামর্শ করে কীভাবে পরিস্থিতি মােকাবিলা করা যায়। রংপুরে ইপিআর (পরে বিডিআর, এখন বিজিবি) সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ক্যাপটেন নওয়াজেশ হােসেন। তিনি অতি গােপনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে যােগাযােগ করেন। তারা রংপুর ক্যান্টনমেন্ট দখল করে নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সে অনুযায়ী রংপুর সদর, মিঠাপুকুর ও গংগাচড়া এলাকার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব দেয়া হয় নেতৃবৃন্দকে। মিঠাপুকুরের আদিবাসীদের মধ্যে তীর, ধনুক, বল্লম ইত্যাদি যুদ্ধাস্ত্র বানানাের সাজ সাজ রব পড়ে যায়।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্তমানের মত যােগাযােগ ব্যবস্থা ছিল না। তখন সংবাদ মাধ্যম বলতে বাঙালীর ভরসা ছিল বিবিসি ও ভােয়া। দেশে সংবাদপত্র ছিল আজাদ, ইত্তেফাক, সংবাদ, দৈনিক পাকিস্তান, মর্নিং নিউজ অন্যতম। এসব কাগজের খবর পুরােপুরি সেন্সর করা হতো। সংবাদ প্রেরিত হতাে টেলিগ্রাফের মাধ্যমে টরে-টরে-টক্কা। টেলিফোন ব্যবস্থাও ততটা উন্নত ছিল না। ট্রাংকল বুক করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতাে। কোন কোন সময় ২ দিন ৩ দিন পর কল পাওয়া যেত। সংবাদপত্রে প্রেরিত সব খবর ছাপা হতাে না। বিশেষ করে পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠির বিরুদ্ধে কিংবা গণ আন্দোলনের খবরগুলাে ব্লাক-আউট করা হতাে। সাংবাদিকদের সব সময় পুলিশের গােপন শাখার নজরদারিতে থাকতে হতাে। কোন খবর পছন্দ না হলে তথ্য অফিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দপ্তরে ডাক পড়তাে। অনেক সময় পালিয়ে আত্মগােপন করে থাকতে হতাে। এর মধ্যেও সাহসিকতার সংগে সাংবাদিকতায় নিবেদিত ছিলেন আব্দুল মজিদ (দৈনিক পাকিস্তান ও মর্নিং নিউজ), নােয়াজেশ হােসেন খােকা (ইত্তেফাক), মােনাজাত উদ্দিন (আজাদ), মােজাম্মেল হক (অবজারভার), এ্যাড. ফেরদৌস (সংবাদ), আজমল হােসেন খান খােকন (এপিপি), আবু সাদেক পেয়ারা (অবজারভার) প্রমূখ। তখন সংবাদপত্র আসতাে একদিন পর। সর্বসাধারণকে তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করতে হতাে দৈনিক পত্রিকা পাঠের জন্য। স্থানীয়ভাবে কোন দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হতাে না অনিয়মিতভাবে মাঝে মধ্যে দুই একটি সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকা লেটার প্রেসে ছাপা হতাে কিন্তু সেগুলােতে রাজনৈতিক খবর খুব একটা বের হতাে না। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ও মুক্তিযুদ্ধের সময় বিবিসি রেডিওর খবর ছিল বাঙালির ভরসা। বিশেষ করে “মার্ক টালীর খবর শােনার জন্য সারা দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাে। বিবিসি’র ওপর পাকিস্তানি জান্তার কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। মার্ক টালী বাংলাদেশের সংঘটিত সংবাদগুলাে অত্যন্ত যত্ন সহকারে পরিবেশন করে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।