মূল : জালাল উদ্দিন রুমী
রূপান্তর : রেজাউল ইসলাম হাসু
উৎস : অল পোয়েট্রি.কম
মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। ইরানি সাহিত্যকে তিনি দিয়েছেন বিশ্বজুড়ে সম্মান। কবি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমীর জন্ম ১২০৫ সালের (মতান্তরে ১২০৭) ২৯ সেপ্টেম্বর, আফগানিস্তানের বালখে। তার প্রকৃত নাম মুহাম্মদ। জালাল উদ্দিন ছিল তার উপাধি।
সুলতান মুহাম্মদ বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন মাওলানা রুমীর পিতা।
তিনি শুধু কবি ছিলেন না, ছিলেন একজন আধুনিক আধ্যাত্মিক চিন্তা চর্চার সাধক। অন্য মরমি কবি-দার্শনিকদের থেকে তিনি ভিন্ন।
মরমিয়াবাদী হিসেবে তিনি ছিলেন নীতি-শিক্ষক এবং সংস্কারক।
দর্শন ও বিশ্বসাহিত্যের একজন অগাধ পাণ্ডিত্যপূর্ণ মনীষী মাওলানা রুমী সাহিত্যচর্চা করেছেন ফারসিতে। তার স্বাভাবিক প্রবণতা আল্লাহর সঙ্গে একাকার হয়ে যাওয়ার ব্যাকুলতার স্তর পেরিয়ে তাকে ঘিরে বিরাজ করে তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
তিনি ফারসি ভাষায় অনেক জ্ঞানগর্ভ শিক্ষামূলক গ্রন্থ রচনা করেন। তার আধ্যাত্মিক ও উপদেশমূলক একাধিক প্রবন্ধও আছে। তন্মধ্যে ‘ফিহি মা ফিহি’ অন্যতম। তার সর্বশ্রেষ্ঠ উল্লেখযোগ্য কীর্তিমান অমরত্ব পাওয়া গ্রন্থ ‘মসনবী’।
মসনবী শুধু ফারসি সাহিত্য ভাণ্ডারে নয়, এটি বিশ্বসাহিত্য ভাণ্ডারেরও একটি অমূল্য সম্পদ। এই গ্রন্থে দ্বিপদী ছন্দবদ্ধ কবিতার সংখ্যা পঁচিশ হাজার। মসনবীকে বলা হয় একটি ধর্মীয় নীতিশাস্ত্র গ্রন্থ। এখানে ইংরেজিতে অনূদিত কিছু কবিতার বাংলা রূপান্তর করা হলো।
আমি কোনো এক মরে যাওয়া পাথর
কোনো এক গাছ হয়ে জন্মালাম।
আমি কোনো এক মরে যাওয়া গাছ
কোনো এক ফুল হয়ে জন্মালাম ।
আমি কোনো এক মরে যাওয়া ফুল
কোনো এক মানুষ হয়ে ফিরে এলাম।
আমি কোন অকারণে ভীত হবো-
মৃত্যুতে কী এমন হারিয়েছিলাম?
English : A stone I died
আমার তীব্র কাঙ্ক্ষার মুক্তি এনেছে
কোনো এক গুঞ্জন।
আমি আজ ভাষাহীন, পরমানন্দদায়কের
দয়ার প্রস্রবণ।
আমার আঁধারে উজ্জ্বল করো
পরমাশ্বরের নক্ষত্র-নন্দন।
English : Birdsong
ঈশ্বরকে ভাবেনি এমন অন্ধ জীবনও আছে
হয় সে মুত্যৃর ছদ্মবেশে অনিদ্রা অতল।
যে জল তোমাকে দূষিত করে সেই হলো বিষ;
যে বিষ তোমাকে শুদ্ধ করে সেই হলো জল।
English : Any Lifetime
কোনো এক আত্মা যে গভীর প্রণয়ে
পান করেছিলো উৎক্ষিপ্ত ফুলের মধু,
জীবনের কোনো এক করুণা থেকে
কোনো এক অহমের মঞ্জরি থেকে শুধু।
মৃত্যু এসেছিলো মোহনীয় হতে
টের পেয়ে তার সুধা,
তারপর থেকে মরণই আমার
মিটিয়েছে সেই ক্ষুধা!
English : Any Soul That Drank the Nectar
কোনো একদিন পেছনে তাকালে তোমার
নিজেকে দেখে নিজেরই হাসি পাবে
এতটা ঘোরে অন্ধ ছিলাম আমি
অবিশ্বাসের অতলে নেমে যাবে।
কেমন করে সত্যকে ভুলে যাবো
হায় দুঃখ ও দুরদশা!
আজ সে কতো করুণ ও হাস্যকর
এ যেন দুঃস্বপ্ন-হতাশা!
English : Bad Dreams
তুমি জাদুকর, উপাসক, মৃত্যুর আশিক;
এ তো ক্ষুদ্র ব্যাপার,
তবু ধেয়ে এসো ক্ষীণ সংকল্পসমূহ
আমরা কাফেলা নই হতাশার।
অজস্র বার
এসো, এসো, ধেয়ে এসো তুমি যেই হও আর।
English : Come, Come, Whoever You Are
কতোদিন আর বেদনাদায়ক
ঘোড়ার পেছন দৌড়াবে,
কতোদিন আর অভিশপ্ত
মোহের পাথার সাঁতরাবে।
মানেহীন সব, অন্ধ ভাবনা
শরীর ব্যাতীত কিছুই যাবে না
English : How Long
আমি নিজেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি,
কোনো চোখের ব্যবহার ছাড়া
সব স্বচ্ছ দেখতে পাচ্ছি।
রক্তমাংসের চোখকে বিরক্ত করতে চাই না
বোধ হয় তার চোখ দিয়েই পৃথিবী দেখছি…
English : I See so Deeply Within Myself
অবশেষে মায়ার বিশালতায়
একটি ঘর ছাড়া সব ফিকে,
এই দুর্দান্ত জীবন যেন অজুহাতের ঘোড়া
অন্ধের মতো ছুটছে সবদিকে।
এতদিন ধরে এ গদ্যই শুনেছো
সহানুভূতিশীল স্বর,
বস্তুত কোনো এক আষাঢ়ে গল্প যেন
মায়ার বিশালতায় একটি ঘর!
English : In the End
আমি লবণের মতো গলে গেলাম
পবিত্রতার জলে,
তাতে না আছে নিন্দা, না আছে সন্দেহ
পুড়ে যাবার দ্বিধানলে!
আমার হৃদয়ে কোনো এক
নক্ষত্র হয়েছে উদয়,
সাতটি সুখের শ্বেত কবুতোর
তাতে মিশে গেছে নির্ভয়।
English : In the Waters of Purity
লেখক : তরুণ সাহিত্যিক।
জন্ম : রংপুর, ১৯৮৭সাল।
প্রকাশিত বই দুইটা।
এক. ওকাবোকা তেলাপোকা (২০১৬) -শিশুতোষ
দুই. এলিয়েনের দেশ পেরিয়ে (২০১৭)-শিশুতোষ।