লোকটা ভিখেরি নয়; বেশভূষায় মনে হলো খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ। দিনমজুর। ঘরে তার পাঁচ পাঁচটি মেয়ে। আছে প্রিয়তমা স্ত্রী। সবার মুখে অন্ন তুলে দেবার বাসনায় আর অভাবের তাড়নায় ঢাকা শহরে এসেছে একটা কাজের সন্ধানে। এসেছে সুনামগঞ্জের কোন এক হাওর থেকে।
আমি বসে আছি কমলাপুর রেলস্টেশনে ৯.১০ এর রংপুর এক্সপ্রেসে চেপে মায়ের কাছে ফিরব বলে। মলিন মুখে ঘুম মরা দুটি চোখ নিয়ে মুখে কি ভীষণ আকুতি ঝরিয়ে আদ্র গলায়- সালাম ঠুকে লোকটা বললো-স্যার, কিছু মনে করবেন না। আমি ভিক্ষা করিনা। সুনামগঞ্জ থেকে এসেছি একটা কাজের জন্য। গাবতলি যাব। পকেটে টাকা নাই। নাস্তাও খায় নাই। গাবতলিতে আমার মত আরও লোকজন আছে। তাদের কাছে গিয়ে একটা কাজ খুঁজে নিব। কিন্তু ক্ষুধার জ্বালায় নড়তে পারতেছি না। কিছু খাব। খেয়ে গাবতলি যাব। যদি কিছু সাহায্য করতেন। আমি বললাম- এই মুহুর্তে আমি যেটা দিতে পারব তা দিয়ে আপনার একবেলার খাবার হবে, তারপর?
স্যার, তাই দেন। খেয়েই ওখানে চলে যাব। আমার লোকজন আছে। সে গরীব কিন্তু ভিক্ষুক নয় কিছু টাকা ধরিয়ে দিতেই খুশির বাষ্প ছড়িয়ে সালাম ঠুকে লোকটা গেট পেরিয়ে মিলিয়ে গেল চোখের পলকে! আমি অপলক সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। বুকের ভেতর থেকে একটা তপ্ত নিশ্বাস বেরিয়ে এলো মনের অজান্তে। হঠাৎ খেয়াল করলাম- চোখ দুটো আমার আদ্র হয়ে আসছে। নিজেকে সামলিয়ে নিলাম। শুধু ভাবনার আকাশে একটি বেখাপ্পা ঘুড়ি ডিগবাজি খেয়ে আছড়ে পড়ল- হায়! আমার সোনার বাংলা; অন্ন যদি নাই-ই দিবার পারো তবে কেন ধারণ করেছিলে নিষ্ঠুর জঠরে?!
নূরনবী বেলাল
কমলাপুর || ২৩.০১.২০২২