চারদিকে এশার নামাজের আজান হচ্ছে। বসন্তের উদাস বাতাস জানালা দিয়ে ঢুকে শরীর স্পর্শ করে যাচ্ছে। একজন যুবক ঘরের ভেতরে একা। গত এক সপ্তাহ থেকে অনেকটা একাই থাকতে হচ্ছে তাকে। আজানের ধ্বনিতে যখন লম্বা টান পড়ছে, হঠাৎ করে তার ভেতরে একটা হাহাকার তিরতির করে বইতে লাগল। পুরো শরীর কাঁপিয়ে কান্নার গমক আসতে লাগল। যুবক মানুষটা একলা ঘরের ভেতরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। মনে হচ্ছে, মুয়াজ্জিন মাইকে আজান দিচ্ছে না, দীর্ঘ সময়জুড়ে গভীর আর্তনাদ করে চলেছে। আজানকে কেন আহাজারি মনে হচ্ছে, আর কান্নাই বা কীসের জন্যে পাচ্ছে পরিস্কার করে বোঝা যাচ্ছে না। হয়তো বেশ কিছুদিনের বন্দিত্বের বেদনা, মসজিদের জামাতে শরিক হতে না পারা- এসবই তার ভেতরে কোন ভাঙন এনে দিচ্ছে। যুবক নিজেও ঠিক করে বুঝে উঠতে পারে না কান্নার কারণ।
এক সময়ে আযান শেষ হয়। মুয়াজ্জিন এর কিছুক্ষণ পরে অদ্ভুত একটা ঘোষণা দেয়। এমন ঘোষণা যুবক এই জীবনে কোনোদিন শোনেনি, কোনোদিন কল্পনা করেনি। মুয়াজ্জিন যেন তার ভারী গলায়, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকে, সম্মানিত মুসল্লিবৃন্দ, আজ থেকে আপনারা পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত মসজিদে আসবেন না। সবাই নিজ নিজ জায়গায় নামাজ আদায় করে নিন। আগামী শুক্রবারও শুধু দশজন মুসল্লিকে নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করা হবে। সবাই ঘরে থাকুন, সাবধানে থাকুন।
…
শহরের অন্য প্রান্ত থেকে এই ঘোষণা শুনতে পান একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। ঘোষণাটি শুনতে পান একজন ডাক্তার, গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে তিনি চোখের কোণের পানি মোছেন। ঘোষণা শুনতে পান একজন পুলিশ সদস্য, তিনি অদূরে ঘুমিয়ে থাকা শিশু সন্তানের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকেন।
[করোনার দুঃসময়ে লেখা গল্প]