মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

আপনার গৃহবন্দী শিশুর জন্য করণীয়

সিরাজুম মনিরা

২৪ মার্চ, ২০২০ , ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

করোনা পরিস্থিতি: আপনার গৃহবন্দী শিশুর জন্য করণীয়

বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকার বেশ কিছু দিন আগেই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। অফিস আদালতও ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করেছে।

আবার অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মঘণ্টা সীমিত করে দিয়েছে এবং বাসায় থেকে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন জনসমাগমস্থল যেমন – শপিং কমপ্লেক্স, মার্কেট, সিনেমাহল ইত্যাদি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।

এমতাবস্থায় আমরা অনেকটাই গৃহবন্দী হয়ে পড়েছি। এই অবস্থার সাথে মানিয়ে চলা যেখানে আমাদের মত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে সেখানে শিশু কিশোরদের পক্ষে মেনে নেয়াটা আরও বেশি কষ্টকর।

এই ধরনের পরিস্থিতিতে শিশুরা নানা ধরনের আবেগিয় প্রতিক্রিয়া (যেমন – খিটমিটে মেজাজ, অল্পতেই উত্তেজিত ও রাগান্বিত হওয়া) দেখাতে পারে। এছাড়া শিশুদের দৈনন্দিন রুটিন অনেক বেশি এলমেলো হয়ে যেতে পারে, যেমন – গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকা ও সকালে অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠা। এসকল ক্ষেত্রে সন্তানের সাথে পিতামাতা হিসেবে আপনার দ্বন্দ্ব কিছুটা বেড়েও যেতে পারে।

তবে কিছু ছোটখাটো কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজ এই ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় আপনাকে সাহায্য করতে পারে –

১. পিতামাতা হিসেবে আপনার প্রথম কাজ হল সন্তানকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে খুলে বলা ও সতর্কতামূলক কাজগুলোর ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারনা দেয়া। তবে মনে রাখবেন আপনি যে বিষয়ে কথা বলছেন তার ভাষা ও মাধ্যম যেন আপনার সন্তানের বয়স উপযোগী হয়। এক্ষেত্রে আপনার সন্তানের বয়স যদি কম হয়ে থাকে তবে আপনি নানা সৃজনশীল উপায় (যেমন – খেলা, ছবি আঁকা) ব্যবহার করে শিশুকে এই বিষয়ে সচেতন করতে পারেন।

২. স্কুল না থাকলেও আপনার সন্তানের যেন একটি দৈনন্দিন রুটিন থাকে এবং তাকে ঐ রুটিন অনুযায়ী চলতে উদ্বুদ্ধ করুন। তবে রুটিনটি যেন আপনার সন্তানের জন্য খুব বেশি কঠিন না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখাও জরুরী। রুটিন তৈরিতে তাকেও সংযুক্ত করুন।

৩. শিশুকে তার বয়স অনুযায়ী ঘরের কাজে অংশগ্রহণ করাতে পারেন এবং পাশাপাশি তার নিজের কাজ নিজে করার ব্যাপারে উৎসাহ দিন। এমনকি আপনার সন্তানের বয়স যদি কম হয়ে থাকে তারপরও তাকে তার বয়স অনুযায়ী কাজ দিন যেমন – খেলনা গুছানো।

৪. গৃহ পরিমণ্ডলে খেলা যায় এমন খেলাধুলার ব্যবস্থা করা।

৫. সারাবছর পড়াশুনার চাপে হয়ত আপনার সন্তান তার শখের কাজগুলো করার সময় পায় না তাই এই সময়টাকে কাজে লাগাতে পারেন। সন্তানকে নানা সৃজনশীল কাজে (যেমন – গল্পের বই পড়া, ছবি আঁকা, গল্প লিখা, কোন কিছু তৈরি করা ইত্যাদি) অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিন ও উৎসাহ দিন।

৬. এসময় যেহেতু পরিবারের সকলেই একত্রে বাসায় অবস্থান করছেন তাই সকলে মিলে ভালো কিছু সময় কাটাতে পারেন। এজন্য সকলে মিলে একত্রে কিছু করার চেষ্টা করতে পারেন, যেমন – বাসার কোন কাজ বা সিনেমা দেখা ইত্যাদি।

৭. সন্তানকে তার বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের সুযোগ করে দিন।

৮. সকল কিছুর মাঝেও তার পড়াশুনার প্রতি নজর দিন। এই কাজে আপনিও তাকে সাহায্য করতে পারেন।

৯. মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি ব্যবহারের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিন।

১০. ধর্মীয় কাজকর্ম বা নীতি-নৈতিকতার শিক্ষায় শিশুকে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করুন।

সকল প্রতিকুলতার মাঝেও এই সময়টি আপনার সন্তানের সাথে ভালো সময় কাটানোর একটি বড় সুযোগ। সন্তানের কর্ম চঞ্চলতাকে কাজে লাগিয়ে তাকে নানা ধরনের ফলপ্রসূ কাজে ব্যস্ত রাখার পাশাপাশি সন্তানের কথা শোনার ও সন্তানকে বোঝার চেষ্টা করুন।

সিরাজুম মনিরা
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর।
চেম্বার: রিদম ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার (ধাপ আট তলা মসজিদের পশ্চিমে)
সিরিয়াল: ০১৭৭৭৩৩৭০৮৯

 

সিরাজুম মনিরা