৯০ থেকে ১২০ মিনিট পর্যন্ত একটা পুরো পৃথিবী দুই ভাগে ভাগ হয়ে যেতে দেখেছেন কেউ? বিজ্ঞান এই তত্ত্ব স্রেফ গাল-গল্প হিসেবে উড়িয়ে দিলেও এটাই সত্যি। এই গল্পকে সত্যি প্রমাণ করে দেখিয়েছে লাতিন আমেরিকার দুই প্রতিবেশি দেশ।
ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। বারো মাসে তেরো পার্বণ কিংবা সার্বজনীন বাঙালি উৎসবের মতোই চাতক পাখির মতো হাঁ করে আমরা দিন গুনি কবে ছাদের মাথার সবচেয়ে উঁচু লোহার রডে সাদা-আকাশি, হলুদ-নীল পতাকা ওড়াব। কবে পাড়ার তিন রাস্তার মোড়ে চায়ের মধ্যে লেড়ো টোস্ট বিস্কুট ভিজিয়ে বন্ধুর চোখে চোখ রেখে প্রমাণ করব ম্যারাডোনার ওই হাত ছিল ঈশ্বরের হাত। বাঙালির জীবনকে রাঙিয়ে দিতে রবিবার আরও একবার মুখোমুখি হচ্ছে ফুটবলপ্রেমিদের কল্পনার ম্যাচের দুটি দল ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা।
ইতিহাস বলে, সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১১১ বার মুখোমুখি হয়েছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে ৪৬ ম্যাচ জিতেছে ব্রাজিল। আর্জেন্টিনা জিতেছে ৪০টি। বাকি ২৫টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। ফিফার হিসেবে ১০৫ ম্যাচে ৪১টি জিতেছে ব্রাজিল। আর্জেন্টিনার জয় ৩৮টি। ড্র ২৬টি। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছিল ১৯১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। ১০৭ বছরের পুরোনো এই লড়াই।
১৯৪০ সালে বড় জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনা দল।ওই ম্যাচে ৬-১ গোলে ব্রাজিলকে হারায় তারা।তারপর ১৯৪৫ সালে আর্জেন্টিনাকে ৬-২ গোলে হারিয়েছিল ব্রাজিল। এবার নিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে দুবার মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল।
অর্থনৈতিক দিক থেকে গরিব আর্জেন্টিনা বরাবরই তাদের অস্তিত্ব জানান দিয়ে এসেছে ফুটবলের মাধ্যমে। অন্যদিকে প্রচুর বনজ সম্পদে ভরপুর ব্রাজিলও ফুটবলে চোখ রাঙিয়েছে প্রতিবার।একদম সেয়ানে সেয়ানে লড়াই। যাকে বলে সুপার ক্লাসিকো।
আর্জেন্টিনার কিংবদন্তীর প্রসঙ্গ আসলে চোখ বন্ধ করে মাথায় একটা নামই আসবে-
ডিয়াগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা। আর ব্রাজিলের জীবন্ত কিংবদন্তি পেলে। এই দুই কিংবদন্তির পরিসংখ্যানে দেখা যায়-
ম্যারাডোনা মোট ম্যাচ খেলেছেন ৬৮৯টি। তার অফিশিয়াল গোল সংখ্যা ৩৫৬। অপর দিকে পেলের অফিশিয়াল গোল সংখ্যা ৭৫৭টি।
সব মিলিয়ে রেকর্ড ভাঙা-গড়া এবং সাপে নেউলের এই লড়াই দেখে দেখে আমাদের বড় হয়ে ওঠা। ছেলেবেলা থেকে দল নিয়ে ঝগড়া করা, দলের জন্য দোয়া করা, এমনকি প্রিয় দল জিতলে বিজয় মিছিল করা! আসুন আরও একবার মুখোমুখি হই এমন মধুর বিরোধের!
এডারসন-(গোলকিপার)
রেনান লোদি-(লেফট ব্যাক)
মারকুইনহিস-(সেন্টার ব্যাক)
থিয়াগো সিলভা-(সেন্টার ব্যাক)
দানিলো-(রাইট ব্যাক)
ক্যাসেমিরো-(সেন্টার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার)
ফ্রেড-(সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার)
পাকুয়েটা-(সেন্ট্রাল এটাকিং মিডফিল্ডার)
নেইমার-(লেফট উইঙ্গার]
রিচারলিসন-(স্ট্রাইকার)
এভারটন(রাইট উইঙ্গার)
পাপু গোমেজ-(রাইট উইঙ্গার)
লাউতারো মার্টিনেজ-(স্ট্রাইকার)
মেসি-(লেফট উইঙ্গার)
ডি পল-(মিড ফিল্ডার)
লো সেলসো-(মিড ফিল্ডার)
প্যারদেস-(মিড ফিল্ডার)
ওটামেন্ডি-(সেন্টার ব্যাক)
পেজ্জেলা-(সেন্টার ব্যাক)
মন্টিয়েল-(রাইট ব্যাক)
মার্টিনেজ-(গোলকিপার)
এই আগুন ঝরানো ম্যাচে স্বাভাবিক ভাবেই বাজপাখির মতো সবার চোখ থাকবে মেসি এবং নেইমারের উপর। হয়তো কোপা আমেরিকার মঞ্চে এবারই শেষ পদচিহ্ন আঁকবেন মেসি। আবার ভয়ংকর বাজে ইনজুরিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নেইমারও দারুণ ফর্মে আছেন।
আর্জেন্টাইন দেয়াল এমিলিয়ানো মার্টিনেজের কথা বলতেই হয়। বিগত ম্যাচে কলম্বিয়ার খেলোয়াড়দের পায়ের লক্ষ্যভেদে একেবারে জল ঢেলে দিয়েছিলেন
অ্যাস্টন ভিলা ক্লাবের এই তরুণ গোলকিপার।তাছাড়া ডি পল, লাউতারো মার্টিনেজও নতুন হিসেবে সেরাটা দিচ্ছেন।
ব্রাজিল শিবিরে চোখ ফেরালে দেখা যায়- নতুন হিসেবে পাকুয়েটা এবং নেইমারের ককটেল দারুণ কাজে দিচ্ছে। পেরুর বিপক্ষে গোল পেয়েছিলেন পাকুয়েটা। এছাড়াও মিলিটাও যথেষ্ট সময় না পেলেও ভালো খেলছেন।
সর্বোপরি বিশ্লেষণ করলে একটা ব্যাপার খেয়াল করা যায় আর্জেন্টিনার অ্যাটাকিং সাইড চোখে পড়ার মতো। ব্রাজিলের ডিফেন্স, মিডফিল্ড এবং অ্যাটাকিং যথেষ্ট শক্তিশালী।
তাই আশা করাই যায় একটা চমৎকার ম্যাচ উপভোগ করতে যাচ্ছি আমরা।
দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের ডিএনএতে অদ্ভুত ভাবে একটা ফুটবল প্রেম আছে। বিশেষ করে ভারত আর বাংলাদেশে। লাতিন আর ইউরোপের বেশিরভাগ ফুটবলই হয় রাতে। তাও আবার শুধু রাত না মধ্যরাত। এই মধ্যরাতে টিভি স্ক্রিন, মোবাইল স্ক্রিন, ল্যাপটপের স্ক্রিনে হাজার হাজার জোড়া ঠাণ্ডা নির্ঘুম চোখ স্থির হয়ে থাকে। চোখ বুজে আসলেও হাত দিয়ে কচলে চোখকে আবার স্থির করানো হয়।
টানা তিন চার রাত ফুটবল দেখে কেউ কেউ হাসতে হাসতে, কাঁদতে কাঁদতে ভোরের আলো দেখে ঘুমায়। শহুরে রাস্তায় সব রিক্সা থেমে যায়, চায়ের দোকানে রীতিমতো উৎসব শুরু হয়।
এই যে উন্মাদনা, নির্ঘুম কয়েক হাজার জোড়া চোখ, ঝগড়া বিতর্কের সাক্ষী আমরা। এই খবর হয়তো আমাজনের আকাশে ওড়া ম্যাকাও জানবে না, বুয়েন্স আয়ার্সের গলির হামাগুড়ি দেয়া শিশুও জানবে না।
তবু আমরা জানি ঠিক! পরীক্ষার টেবিলে চোখ কথা না শুনলেও ফুটবলে আমাদের চোখ কথা শোনে। চিড়িয়াখানার খাঁচার মতো দড়ির জালে বল ঢোকার যে স্বর্গীয় আনন্দের সাক্ষী আমরা, এই কথাটা আমরা সাদা-আকাশি কিংবা নীল-হলুদ পতাকা মাথায় বেঁধে বারবার বুঝিয়ে যাব।
আগামী ১১ জুলাই, রবিবার। বাংলাদেশ সময় সকাল ৬ঃ০০ টায় কোপা আমেরিকার ফাইনালে আবার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা।
সনি টেন ২ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এছাড়াও অনলাইনে বিনগি, টফি অ্যাপে এই ম্যাচ দেখা যাবে।