মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

আমার চিঠিবেলা

প্রমথ রায়

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ২:০৬ অপরাহ্ণ

আমার চিঠিবেলা

চিঠি যোগাযোগের সুপ্রাচীন মাধ্যম। চিঠি সম্পর্কে মূলতঃ আমি জানতে পারি হাইস্কুলে পড়ার সময়। বাংলা ২য় পত্রের সিলেবাসে চিঠি পড়তে হতো। আমি হলুদ খামের ভিতরে প্রথম চিঠি পাঠাই হাইস্কুলে থাকার সময়ে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় কুইজের উত্তর। সেই পত্রিকায় সঠিক উত্তরদাতাদের নাম ঠিকানা ছাপা হতো। তাদের মধ্যে সুন্দর নামের মেয়েদের সাথে পত্রমিতালি করার জন্য চিঠি লিখতাম। কিন্তু কারো উত্তর আসেনি। আবার এই পত্রিকা থেকে আমার নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহের একটি গারো মেয়ে পত্রমিতালি করার জন্য আমাকে চিঠি লিখে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ তিনি আমার বয়সে বড় হওয়ায় আমি দিদি সম্বোধন করে চিঠি লিখি। তাঁর সাথে ভাইবোন হিসেবে প্রায় পাঁচ বছর চিঠিতে যোগাযোগ ছিলো। ঢাকায় একবার দেখাও হয়েছিলো। পরে মোবাইল আসার পরে কিছুদিন মোবাইলে যোগাযোগ ছিলো। এখন ফেসবুক বন্ধুতালিকায় থাকলেও যোগাযোগ হয় না। তার প্রথম ও দ্বিতীয় চিঠির ছবি নিম্ন দেয়া হলো।

২.

আমার সবচেয়ে বেশি চিঠির যোগাযোগ হতো আমার ছোটো খালা অরিতা মাসির সাথে। আমার মাসি আর আমি প্রায় কাছাকাছি বয়সের। আমার নানা নানী তাঁর জন্মানোর দুবছরের মধ্যে মারা যান। পরে আমাদের সংসারে আসে। কিন্তু দারিদ্র্যের কারনে তার অনেক কষ্ট হচ্ছিল। পরে খ্রীস্টান মিশনারীরা তাকে নিয়ে গিয়ে সৈয়দপুর মিশনে রাখেন। এ খবর আমরা প্রায় দশ বছর পর পাই এবং তার সাথে দেখা করতে যাই। পরে সে নাটোরের একটি মিশন বোর্ডিং এ যায়। সেখানে আর দেখা করতে যাওয়া সম্ভব হয় না। পরে চিঠিতে যোগাযোগ হতো। সেখান থেকে তার আমার মাকে লেখা একটি চিঠি দেয়া হলো।

৩.

সে ২০০১ সালে এসএসসি পাশ করে ২০০২ সালে যশোরে একটি খ্রিস্টান মিশনারী হাসপাতালে নার্সিং পড়তে যায়। আমি ২০০৩ সালে এসএসসি পাশ করে ঢাকায় নটরডেম কলেজে পড়তে যাই। নটরডেম কলেজের ছাত্রাবাস মার্টিন হলে আমি থাকতাম। এখানে আমার সবচেয়ে বেশি চিঠি আসতো। সবচেয়ে চিঠি পেতাম আমার বাবা-মা আর ছোট খালার কাছ থেকে। আমার বাবা-মা অবশ্য চিঠি লিখতে পারতো না। অন্যের কাছ থেকে লিখে নিতো। বেশিরভাগ চিঠি সমেশ দাদু (প্রতিবেশি) লিখে দিতো। আমার ঐ কলমি দিদিও লিখতো। আমার হাইস্কুল বন্ধুদের মধ্যে আশিদুল আর লালবাবু নিয়মিত লিখতো। লালবাবুর চিঠির খামে একবার প্রদীপ লিখেছিল আর দীপক কলেজে ভর্তির তথ্য চেয়ে লিখেছিলো।

৪.

২০০৪ সালে বন্যাকালীন বাবা মায়ের পাঠানো চিঠি।

৫.

মার্টিন হলে পাঠানো ছোট খালার চিঠি। চিঠির খামে প্রায় টাকা পাঠাতো সেটাও এ চিঠিতে লেখা আছে।

৬.

মার্টিন হলে দিদির পাঠানো চিঠি। একই খামে তার এলাকার এক বড় ভাই থাকে তাঁর চিঠিও ছিলো। পরে বড় ভাই আমাকে বেশ স্নেহ করতো।

৭.

মার্টিন হলে পাঠানো হাইস্কুল বন্ধু লালবাবু চিঠি

৮.

মার্টিন হলে পাঠানো হাইস্কুল বন্ধু আশিদুলের চিঠি

৯.

মার্টিন হলে থাকতে আমি এদের সকলের সাথে চিঠিতে যোগাযোগ করতাম। এদের কারো চিঠি সংরক্ষণ করতে পারিনি। মা বাবাকে যেসব চিঠি লিখতাম সেগুলো তাঁরা সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। এখানে থাকতেও আরও অনেক মেয়েকে পত্রমিতালী করার জন্য লিখতাম কিন্তু কারও উত্তর পাইনি। একবার ছুটিতে এসে এক মেয়েকে খুব পছন্দ হলো। ভাবও হয়েছিলো। কিন্তু মনের কথা বলতে পারিনি। আমার হলের এক বন্ধুর প্রেমিকা দিনাজপুরের এক ছাত্রী হোস্টেলে থাকতো। সেও সেখানে থাকতো। তাকে শুধু একটি বাক্য লিখলাম। ‘তোমার মধুর মুখের হাসি আমাকে মুগ্ধ করেছে।’ ইতি- পি। সে পি দিয়ে আমাকেই ধারণা করেছিলো এবং আমার একজন ক্লাসমেটকে বলেছিলো আমাকে জিজ্ঞেস করতে। কিন্তু আমি সত্য স্বীকার করতে সাহস পাইনি।

১০.

মার্টিন হল থেকে আমার বাবা মাকে লেখা চিঠি। এসময় বন্যার কারণে আমাদের কলেজে কোমর পানি জমেছিলো।

১১.

ঢাকা থেকে ফিরে আসার পর দুজন কলেজ বন্ধু যোগাযোগ করতো। একজন বিনয় টুডু। আমি হলে একবার মারাত্মক অসুস্থ হয়েছিলাম। বিনয় আমাকে অনেক সেবা শুশ্রূষা করেছিলো। অন্যজন সুবাস মারান্ডী। আমাদের পর পর রোল ছিলো। প্রতিযোগিতা করে পড়তাম। সে আমাকে বেয়াই বলে ডাকতো। দুজনের বাড়ী রাজশাহী। পরবর্তীতে দুজনের সাথে দেখা হয়। বিনয়ের সাথে বেশ কয়েকবার দেখা হয়।

১২.

কলেজ বন্ধু বিনয়ের পাঠানো চিঠি।

১৩.

কলেজ বন্ধু সুবাসের পাঠানো চিঠি।

১৪.

তারপর ২০০৬ সালে আর একটি মেয়ে পত্রমিতালি করার জন্য চিঠি লিখে। সে ঠিকানা পেয়েছে তাঁর এক বান্ধবীর কাছ থেকে। তার বান্ধবী পেয়েছে আমার এক মার্টিন হল বন্ধুর ডাইরি থেকে। শুনেছি পরে তার বান্ধবী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এ মেয়েটির চিঠির উত্তর দেই এবং প্রায় এক বছর তার চিঠির অপেক্ষা করি। কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। পরে আমি মোবাইল নাম্বারসহ সর্বশেষ চিঠি লিখি ২০০৭ সালে। পরে একদিন সে কল দেয়। পরে আরও বেশ কয়েকটি চিঠি আদান-প্রদান হয়। তবে ডাকবাক্সে নয়, বরং কুরিয়ার সার্ভিসে।

.

তার পাঠানো প্রথম চিঠি। সেসময় জিৎ এর ‘সাথী’ চলচ্চিত্রটি বেশ জনপ্রিয় ছিলো। সে চলচ্চিত্রের গান, ও বন্ধু তুমি শুনতে কি পাও’ চিঠিতে লেখা আছে।

১৫.

একবার ঢাকায় প্রোগ্রাম করতে গিয়ে রূপা নামে একটি মেয়েকে আমার ভালো লেগেছিলো। পরে মেয়েটিকে চিঠি দেই কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি।

অনেকদিন পর একটি মেয়ের উত্তর পেয়েছিলাম। এসব চিঠি তার জন্য কতটা ক্ষতিকর বা তার পরিবার এসব পছন্দ করে না, সেসব লিখে উত্তর দেয়। তারপর থেকে আমি আর কোনো মেয়েকে চিঠি লিখিনি। সেই মেয়েটির চিঠি নিম্নে দেয়া হলো।

১৬.

অন্যের চিঠি নিয়ে আমার মজার ৩টি অভিজ্ঞতা রয়েছে।

১। মার্টিন হলে থাকতে আমার এক বন্ধু তার প্রেমিকাকে ৭০০ পৃষ্টার একটি চিঠি লিখে।

২। মার্টিন হলে থাকতে আমি একটি নাইট স্কুলে পড়াতাম। সেখা

প্রমথ রায়
Latest posts by প্রমথ রায় (see all)