ছোটবেলা মানে কী?
– সারাদিন মার্বেল খেলা।
হ্যাঁ, আমার ছেলেবেলা ছিল মার্বেলময়।
ছালেক মার্কেট থেকে কেনা লন্ড্রা ইংলিশ হাফপ্যান্ট। তার ডানে-বামে ইয়াবড় পকেট।হাঁটলে ঝুনঝুন করে মার্বেল বাজে। বেল্ট ছিল না। কালো শিঁকাই (মোটা কালো সুতা) কোমরে থাকতো। তাতে প্যান্ট আটকাতাম।দৌড়ালে দু’হাত প্যান্টের দু’পকেট ঢুকিয়ে চেপে ধরে দম বন্ধ করে দৌড়াতাম। তারপরও কখনও প্যান্ট খুলে মাটিতে পড়তো মার্বেলের ভারে। দ্রুত এদিক-সেদিক চেয়ে ফিক করে হেসে কায়দা করে সেটি তুলে আবার দৌড়।
খেলায় হাত চালু ছিল। ব্রেন ছিল সার্প। খুব কৌশলী ছিলাম। ফলে কেউ পারতো না। সেরা ছিলাম। তখনই বুঝেছিলাম, হাত নয় মাথা দিয়ে খেলতে হয়।
সারাদিন খেলতাম। নাওয়া-খাওয়া ভুলে শুধু মার্বেল আর মার্বেল। মার্বেলের টোক্কা, টাকুর, ইঞ্চি, টু-টাচ, হাফবেল, পুট, গাঁড়া কতশত যে খেলা!
সারাদিন খেলি। লাভ করি প্রচুর। একটা দুটো করে সারাদিনে ত্রিশ চল্লিশ বা তারও বেশি। টাকায় দশটি মার্বেল পাওয়া যেত। বিক্রি করি তৎক্ষণাৎ। দিনে দুই-চারটাকা অনায়াসে লাভ হতো। তা দিয়ে মুড়ি, চানাচুর কিনে খেতাম। বেশি লাভ হলে পাড়ার মোড়ে গণি মিয়ার হোটেলের পরোটা। হেব্বি জমত সেদিন।
দোয়ানী বিড়ির খোলান, ডাড়ার পাড়, গাবার ছমছলের বিশালখুলিবাড়ি, নয়ার দিঘির পাড়, ময়জার খুলি পাড়ার সর্বত্র-পাড়াময় আমি আর মার্বেল।
জাপানি, চায়নিজ, জলজলিয়া বেলজিয়াম মার্বেল। ছোট মার্বেলকে বলতাম বিচ্ছু মার্বেল। নিয়মিত ছোটদের সাথে, বড়দের সাথে খেলেছিলাম।
যেদিন সোনার চাঁদ বিড়ির কাজ বন্ধ সেদিন ধুমসে খেলা। দোয়ানীটারির অনেকেই তখন সোনার চাঁদ বিড়ির কারিগর। আমি আজিজ (ভরসা) বিড়ির কারিগর। আজিজ বিড়ির কাজ বন্ধ থাকে শুক্রবার। সেদিন পাড়া জুড়ে ছোটদের মার্বেল খেলা, মাটিতে দাগ টেনে ছক্কা খেলা কিংবা বোর্ডের সাপ-লুডুতে বাজি আর বড়দের মধ্যে যারা উঠতি বয়সের তারা তাস পিটায়।
টাকার খেলা। বাজি। জুয়া।
মধ্য বয়সীরা স্প্রেটট্রাম আর মুরুব্বীরা মেরিস টুয়েন্টি নাইন।
শুক্রবার যেন চাঁদরাত। সারাসপ্তাহ টাকা-পয়সা জমায় সবাই মার্বেল, ছক্কা, তাস খেলার জন্য।
আমরা ছোটরা সবাই প্রতিদিন স্কুলে যাই। কিন্তু পড়াশোনা করি না। নিয়মিত স্যারদের বেতের মার খাই, কানমলা খাই-খুব ভাল লাগে। বরং স্যারের মার না খেলে ভাল লাগে না। আর পড়াশোনা করে শুধু লিটন, মেহেদী, রানারা। আমি পরীক্ষার আগের রাত ভোর পর্যন্ত পড়ে পগারপাড়।
মার্বেল খেলায় আমার সমকক্ষ মাত্র একজন ছিল পাড়ায়। একসাথে পড়তামও। ফিরোজ কবির ভুট্টু। ভুট্টু নামে সবাই ডাকি। সেয়ানা প্লেয়ার! ধূর্ত!
লেখাপড়ায় সে ডাব্বা খেত। ভুট্টু ছিল বাপের একছেলে, ডানপিটে। সে ফুটবলেও চৌকষ ছিল। ফলে তার নামডাক ছিল বেশ। আমিও ফুটবল খেলতাম। গোলকিপার। তবে চলনসই।
কতশত কথা মনে পড়ছে, সেসব দিন যদি আবার ফিরে পেতাম!