মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

আমি ক্ষমাপ্রার্থী-৫

জাকির আহমদ

৩ এপ্রিল, ২০২০ , ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ

আমি ক্ষমাপ্রার্থী-৫

(পর্ব-৫)

‘না, কেন?’

‘কিছু না।’ বলল ছেলেটি। চিহ্নিত।

‘তবে প্রথম যে দুজন তোমাকে গাড়ির পেছনে বসিয়ে পাহারা দিয়ে নিয়ে এসেছিল আর যে তোমাকে চাবুক মেরেছিল এ তিনজন জাহাজে ছিল’, বলল পাহারাদার।

‘আচ্ছা, মেয়েটি কোন ঘরে আছে?’

হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলে যে কেউ দেখে ফেলতে পারে, তাই চোখের ইশারায় দেখিয়ে বলল, ‘দোতলার ওই রুমে।’

‘এরপর আমাকে নিয়ে এরা কী করবে?’

উত্তর দেয়ার জন্য মুখ খুলেও বন্ধ করতে হলো। কারণ আর একজন এদিকে এগিয়ে আসছে। ছেলেটি অপরিচিত। কাছে এসে লোকটি বলল, ‘তুমি যাও, এখন আমার পালা।’

উঠে দাঁড়াল পাহারাদার। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ছেলেটিকে ছেড়ে যেতে তার কষ্ট হচ্ছে। চোখের কোণে এরই মধ্যে পানি জমে গেছে। কিছু একটা বলার জন্য মুখ খুলেও বলতে পারল না। একবার ছেলেটির দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করে চলে গেল।

নতুন পাহারাদার একটু দূরে বসে পড়ল। চোখ ছেলেটির দিকে। হাত রাইফেলে। নির্বিকারভাবে বসে আছে। হেলান দিয়ে বসে থাকায় তন্দ্রা এসে গেল ছেলেটির। কেটে গেল কিছুক্ষণ। হঠাৎ সামনে কোলাহলের শব্দ শুনে চোখ খুলে দেখল বাংলোর সামনে সামরিক কায়দায় অনেক লোক দাঁড়িয়ে আছে। বাংলোর দোতলার বারান্দায় একাধিক পদশব্দে সেদিকে মুখ তুলে তাকাল ছেলেটি। পাহারাদারও লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ করে সারি বেঁধে দাঁড়ানো লোকগুলো একদম নিশ্চুপ হয়ে গেল। যেন থমকে দাঁড়াল সবকিছু।

ক্যাপ্টেন, মেয়েটি এবং একজন অপরিচিত কিন্তু মার্জিত পোশাক পরা লোককে বারান্দার সামনে এসে দাঁড়াতে দেখল সে। মেয়েটি একটু পেছনে দাঁড়িয়েছে। তার পেছনে যে একজন পাহারাদার দাঁড়িয়ে আছে তাও দেখা যাচ্ছে দূর থেকে।

‘ক্যাপ্টেনের পাশে ওই লোকটি কে?’ জিজ্ঞেস করল ছেলেটি।

‘আমাদের মহামান্য লর্ড।’ মাথা না ঘুরিয়েই নীচু স্বরে জবাব দিল পাহাড়াদার। এর মধ্যে একজন লোক লর্ডের পাশে লাউড স্পিকার নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। হ্যান্ড সেট হাতে নিয়েছে লর্ড। ছেলেটি এসবের কিছুই বুঝতে পারছে না।

পাহারাদারকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে, এমন সময় লাউড স্পিকারে লর্ডের কণ্ঠ ভেসে আসতেই থেমে গেল ছেলেটি। তোমাদের সবার জন্য এই দ্বীপবাসী এক শুভ সংবাদ আছে’, ভরাট গম্ভীর গলায় বলছে লর্ড। অনেকের সামনে কথা বলার সময় যেসব আনুষ্ঠানিকতা আছে, তার ধার দিয়ে গেল না সে। ‘সেই শুভ সংবাদটি হলো, আগামীকাল রবিবার রাত আটটায় চার্চ অব ফ্লাওয়ার্সে ক্যাপ্টেনের সঙ্গে আমাদের এই নব অতিথিনীর বিবাহ হবে।’ দুজনকেই হাত দ্বারা ইঙ্গিত করল লর্ড। ‘তোমরা সবাই আমন্ত্রিত’, থামল লর্ড।

‘না, কখনোই এ বিবাহ হতে পারে না।’ প্রচণ্ড রাগে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে ছেলেটি। সব দুর্বলতা যেন উবে গেছে।

‘ম্যাডাম, আপনি কখনোই এ বিয়েতে রাজি হবেন না, কোনো কিছুর বিনিময়েই না। কারণ এরা মানুষের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করে। এরা মানুষরূপী পশু।’ দোতলার দিকে আঙুল নির্দেশ করে বলছে ছেলেটি উচ্চকণ্ঠে। ‘যে কোনোভাবেই হোক আল্লাহ আমাদের এ বিপদ থেকে রক্ষা করবেনই।’

মেয়েটি বাংলা ভাষাভাষী, তাই ছেলেটি বাংলায় কথাগুলো বলতে পারত। কিন্তু ছেলেটি জানে মেয়েটি কিছুতেই রাজি হয়নি। কারণ মেয়েটিকে সে এর মধ্যে তিনবার চোখ মুছতে দেখেছে। লর্ডের দিকে তাকাতে গিয়েই চোখে পড়েছে। প্রচণ্ড রাগে ও ঘৃণায় শাস্তি, অত্যাচারের কথা ভুলে ইংরেজিতে প্রতিবাদ করেছে ছেলেটি।

ছেলেটি কথা বলতে শুরু করতেই সামনে দাঁড়ানো সবাই মাথা ঘুরিয়ে ছেলেটিকে দেখছে। পাশে দাঁড়ানো পাহারাদার ছেলেটির বুক বরাবর রাইফেল তাক করে এর মধ্যে দুবার তাকে চুপ করতে বলেছে। কিন্তু ছেলেটি থামেনি। গুলি করার অর্ডার পায়নি বলে গুলিও করতে পারছে না। অবশ্য সে গুলি করতেও চায় না।

লর্ড থামতেই কথা বলা শুরু করেছিল ছেলেটি। ছেলেটির সাহস দেখে বিস্ময়ে প্রথমে হতবাক হয়ে গিয়েছিল সে। নিজেকে সামলে নিয়ে ছেলেটির কথা থামতেই শুরু করল লর্ড। ‘তোমরা কি দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছ, থামাও ব্যাটাকে।’ রাগে উত্তেজিত হয়ে পড়েছে লর্ড। শীতল চক্ষু দ্বারা ছেলেটিকে যেন ভস্মীভূত করার চেষ্টা করছে ক্যাপ্টেন। মেয়েটি এ অবস্থায় ছেলেটির সাহস দেখে যেন চোখের পানি মুছতে ভুলে গেছে। লর্ডের উত্তেজিত কথা শুনে যেন সবাই সম্বিত ফিরে পেল।

প্রথমেই ছেলেটির পাশে দাঁড়ানো পাহারাদার লাথি চালাল ছেলেটির বুক বরাবর। দুর্বল শরীর নিয়ে লাথি থেকে আত্মরক্ষার জন্য তড়িৎ গতিতে পিছিয়ে যেতেই পা ফসকে পেছন দিকে পড়ে গেল ছেলেটি। লাথির ছোঁয়াও তার বুকে লাগেনি। পড়ে যেতেই দ্রুত উঠে বসতে গিয়েও পারল না। ততক্ষণে তার কাছে পৌঁছে গেছে আরো চারজন। ছেলেটি অর্ধেক উঠে বসেছিল। কিন্তু চারজন মিলে তাকে আবার শুইয়ে দিয়ে মাটির সঙ্গে ঠেসে ধরেছে। পাহারাদার দুই খুঁটির ওপরে আটকানো কাঠের টানা থেকে রশি খুলতে লাগল। লর্ডের কথা শুনে সবাই তাকিয়ে ছিল। তাদের মধ্যে ছেলেটির দিকে ছুটে যেতেই অনেকেই আবার পেছনে ঘুরে দেখতে লাগল।

দোতলায় সবাই চুপ করে রুদ্ধশ্বাসে ছেলেটির পরিণতি দেখছে।

‘তোমরা কাপুরুষ ছাড়া আর কিছুই না। একজন দুর্বল নিরস্ত্র লোকের বিরুদ্ধে তোমরা এতগুলো লোক লেগেছ, তোমাদের সবারই লজ্জা থাকা উচিত।’ চারজন চেপে ধরে তাকে মাটিতে শুয়ে দিতেই বলল ছেলেটি। আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু ততক্ষণে একজন পকেট থেকে রুমাল বের করে তার মুখে পুরে দিতে শুরু করেছে। মুখে যাতে রুমাল ঢুকতে না পারে, সে জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাল ছেলেটি। কিন্তু মুখে রুমাল ভালোভাবে পুরে দিতে আর একজন সাহায্য করল। মুখে ভালোভাবে রুমাল পুরে দিয়েই ক্ষান্ত হলো না। যাতে ছেলেটি মুখ থেকে রুমাল বের করে আবার কথা বলতে না পারে সে জন্য একজন মুখ চেপে ধরে থাকল। আর একজন টেপ আনার জন্য গেল।

ততক্ষণে পাহারাদারের দড়ি খোলা হয়ে গেছে। সেই দড়ি দিয়ে প্রথমে ছেলেটির পা দুটো বাঁধল। তারপর হাত দুটো পিঠমোড়া করে বেঁধে ছেলেটিকে শুইয়ে দিল। এর মধ্যে লোকটি টেপ নিয়ে এলো। সেই টেপ মুখে মেরে দিল। ছেলেটিকে তারা বন্দী করে উঠে দাঁড়াল। সে না পারবে মুখ খুলতে, না পারবে নড়াচড়া করতে। আগেরজনই রাইফেল হাতে ছেলেটির পাহারায় থাকল। বাকি সবাই ফিরে গেল সারিতে।

ক্যাপ্টেনের চোখ এখনো ধিক ধিক করে জ্বলছে। তবে লর্ড এর মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তার গলার স্বরেই তা বোঝা গেল।

‘তোমাদেরকে যা বলতে চাচ্ছিলাম তা হলো, ক্যাপ্টেনের বিয়ের অ্যারেঞ্জমেন্ট তোমাদেরকেই করতে হবে, সময় কম কাজে লেগে যাও। একটু আগে যেন কিছুই ঘটেনি গলায় এমনি ভাব ফুটে উঠেছে তার কণ্ঠে।

‘আর একটু আগেই ছেলেটি যে আবেদন করেছে তা বোকামি ও দুঃখজনক। সে এখন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য, আমি একটু পরই বাইরে যাব, তাই ক্যাপ্টেনের হাতে তার বিচারের দায়িত্ব দিলাম। ধন্যবাদ তোমাদের সবাইকে।’

কথা শেষ করেই পাশে লাউড স্পিকার নিয়ে দাঁড়ানো লোকটির হাতে হ্যান্ডসেট দিয়ে মেয়েটির দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে ‘বাই’ বলে ঘুরে চলে গেল লর্ড। তার পেছনে চলল একজন প্রহরী। উচ্চস্বরে বলছে ক্যাপ্টেন যাতে সবাই শুনতে পায়Ñ ‘তোমরা এখন সবাই এখন যার যার জায়গায় চলে যাও। তবে তিনজন থাক। ওর শাস্তির ব্যাপারে সাহায্য করবে। ওর শাস্তির পর বিয়ের অ্যারেঞ্জমেন্টের কাজ শুরু হবে। প্রয়োজন হলে বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দেয়া হবে, তবে ওর শাস্তি হবে ভয়ঙ্কর। তিলে তিলে মৃত্যু।’ শেষ বাক্যটা ক্যাপ্টেন বলল চিবিয়ে চিবিয়ে।

সারি দিয়ে দাঁড়ানো সবাইকে চলে যেতে দেখল মেয়েটি। তাদের মধ্যে তিনজন দাঁড়িয়ে আছে। ঘুরে দাঁড়াল ক্যাপ্টেন। মেয়েটিকে চোখ মুছতে দেখল। মেয়েটির ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আছে একজন। তার চোখে শীতল চাহনি। প্যান্টের ডান পকেট ফোলা। ক্যাপ্টেন জানে সেখানে কী ভয়ঙ্কর অস্ত্র আছে। এছাড়া আশপাশের আর কেউ জানে না। মেয়েটির দিকে একবার তাকিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলো ক্যাপ্টেন। কিন্তু থেমে দাঁড়াতে হলো মেয়েটির জন্য।

মেয়েটি ভাবল, তার জন্য প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছেলেটির এ দুরবস্থা। এরপর তাকে যে শাস্তি দেয়া হবে যার পরিণতি ক্যাপ্টেনের কথামতো ভয়ঙ্কর। বেশি ভাবার সময় নেই। ক্যাপ্টেন চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে। হাত তুলে থামার ইশারা করল ক্যাপ্টেনকে। থেমে তার দিকে ঘুরল ক্যাপ্টেন।

‘প্লিজ, যা শাস্তি হয় আমাকে দিন। তাকে কোনো শাস্তি দেবেন না’, অনেক কষ্টে কথাগুলো মুখ দিয়ে বের করে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল মেয়েটি। হাতজোড় করল ক্যাপ্টেনের দিকে। চোখ থেকে গাল গড়িয়ে নেমে আসছে অশ্রু।

এক মুহূর্তে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকল ক্যাপ্টেন। তারপর ঠান্ডা গলায় বলল, ‘ওই ছেলেটির প্রতি এত দরদ কেন?’

এর উত্তর কী দেবে মেয়েটি তা ভেবে পেল না। তাকে ভাবতেও দিল না। তার আগেই বলে উঠল, ওকে ভুলে যাও, ওর শাস্তি ওকে পেতেই হবে।’ বলেই আর দাঁড়াল না ক্যাপ্টেন, ঘুরেই চলে গেল।

আবার থামানোর জন্য হাত তুলল সে। কিন্তু ততক্ষণে ক্যাপ্টেন ঘুরে গেছে। ডেকে থামতে চাইলেও মুখ দিয়ে কথা ফুটল না। বসে পড়ে দুই হাঁটুর মাঝে মুখ গুজে কাঁদতে লাগল সে।

ছেলেটির পাশে রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে আছে পাহারাদার। আর একটু দূরে ক্যাপ্টেনের নির্দেশে অলসভাবে দাঁড়িয়ে আছে তিনজন। ক্যাপ্টেনকে এদিকে আসতে দেখে চারজনই সতর্ক হয়ে দাঁড়াল। ছেলেটির পাশে এসে দাঁড়াল ক্যাপ্টেন। কয়েক মুহূর্ত নীরবে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে যেন তার শাস্তি নির্ধারণ করল।

‘ওকে মুক্ত করে দাও।’ বেশ উচ্চকণ্ঠে বলল ক্যাপ্টেন। অপর তিনজনও কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। ক্যাপ্টেনের নির্দেশে তাদের মধ্যে দুজন ছেলেটির হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিল। শক্ত করে বাঁধা থাকায় হাত-পা অবশ হয়ে এসেছিল। মুক্ত হয়ে প্রথমে বসে হাত-পা নাড়ানাড়ি করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে নিল। তারপর মুখ থেকে টেপ খুলে রুমাল বের করে উঠে দাঁড়াল। বাকি সবাই চুপচাপ দেখছে।

প্রথমে ছেলেটিই নীচুস্বরে শুরু করল, ‘এরপর আমাকে নিয়ে কী করতে চান?’

‘এক ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর হাসি ফুটে উঠেছে ক্যাপ্টেনের। ‘এই খেলায় ধীরে ধীরে তুমি মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে যাবে’, উচ্চস্বরে বলে চলেছে ক্যাপ্টেন। ‘খেলাটা এ রকম…’ এক মুহূর্ত থামল। ‘ওই যে ঢালু পাহাড়টা দেখা যাচ্ছে…’ বলতে বলতে বাংলোর ঠিক সামনে একটা ঢালু পাহাড়ের দিকে হাত নির্দেশ করল। ঢালু বলতে দৌড়ে ওঠা যায়। তবে পা পিছলে নীচে গড়িয়ে পড়ার খুব আশঙ্কা আছে। পাহাড়টা চার-পাঁচতলা পরিমাণ উঁচু। গাছপালা নেই, এক রকম পরিষ্কার ‘সেদিকে এখান থেকে তোমাকে দৌড় দিতে হবে, আর তোমাকে পেছন থেকে ধাওয়া করবে হাউন্ড প্রজাতির এক কুকুর, কুকুরের গলায় নাইলন কর্ড দিয়ে বাঁধা থাকবে। সে পাহাড়ের অর্ধেক পর্যন্ত উঠতে পারবে, তার আগেই যদি তুমি ওই সীমানা…’ হাত দিয়ে পাহাড়ের মাঝে খাড়া খুঁটি দেখিয়ে দিল। ‘পেরিয়ে যাও তবে সে তোমার কোনো অনিষ্ট করবে না। তুমি যদি বেঁচে যাও তবে এরপর তোমাকে আর কোনো শাস্তি দেয়া হবে না।’ ছেলেটির মুখে ঘাম জমে উঠেছে। ‘আরে অত ঘাবড়ে যাওয়ার দরকার নেই। তোমার দৌড় শুরুর ঠিক এক মিনিট পর কুকুর ছাড়া হবে, কথা দিচ্ছি। অনেক সময়, তারপরও তুমি বাঁচতে পারবে না।’ নিষ্ঠুর হয়ে উঠল ক্যাপ্টেনের মুখ। ‘তুমি যদি কুকুরের আক্রমণের শিকার হও, তবে তোমার কপাল মন্দ। তোমার জলাতঙ্ক হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে কোনো চিকিৎসা করা হবে না, এই পাহাড়িয়া জঙ্গলে কোনো হিংস্র প্রাণী নেই, নীচে জঙ্গলের কোথাও গাছের সঙ্গে তোমাকে বেঁধে রাখা হবে, তবে জলাতঙ্ক হলে এক সময় ঢলে পড়বে মৃত্যুর মুখে। এই হচ্ছে তিলে তিলে মৃত্যু নামক খেলা।’ এক মুহূর্ত থামল তারপর কী মনে হতেই হাসি ছড়িয়ে পড়ল তার সারামুখে। ‘তবে কালকে আমার বিয়ে ভোজের খাবার তোমাকে পরিমাণ মতোই পাঠিয়ে দেয়া হবে।’

এসব শুনতে ছেলেটির মাথা গরম হয়ে গেছে, তবে অনেক কষ্টে মাথা ঠান্ডা রেখে আল্লাহকে স্মরণ করে চলছে। তার এ মুহূর্তে কিছুই করার নেই। পাঁচজনের বিরুদ্ধে এই দুর্বল শরীর নিয়ে লাগতে যাওয়া হবে বোকামি। তার ওপর এদের কাছে আছে অস্ত্র। এরপর ক্যাপ্টেন তাদের একজনকে নাইলন কর্ড লাগিয়ে কুকুর এবং স্টপওয়াচ আনার নির্দেশ দিল। আর একজনকে নির্দেশ দিল তিনটা রাইফেল আনার। পাহারাদার আর অপর একজন দাঁড়িয়ে রইল ছেলেটির পাহারায়। চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে ক্যাপ্টেন। কারো মুখে কোনো কথা নেই। এর মধ্যে আসরের নামাজের সময় হয়ে যাওয়ায় নামাজে দাঁড়িয়ে গেল ছেলেটি। কেউই বাধা দিল না। প্রথমে নড়াচড়ায় পাহাড়াদার বাধা দিতে গেলেও যখন দেখল সে পালাচ্ছে না, তখন আর কিছু বলল না। নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইল।

একটু পরই তিনটি রাইফেল নিয়ে ফিরে এলো দ্বিতীয়জন। তারপর পর ফিরে এলো প্রথমজন।

‘হাই’ কেমন আছিস?’ ক্যাপ্টেনের গা ঘেঁষে দাঁড়াতেই তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল ক্যাপ্টেন। ছেলেটির দিকে তাকিয়ে গরগর করল। কুকুরটিকে বেঁধে ফেলা হলো খুঁটির সঙ্গে। ‘আরে, থাম, থাম, ওর সঙ্গেই তো তোর দৌড় প্রতিযোগিতা হবে।’ কৌতুক করে বলতে বলতে স্টপওয়াচ হাতে নিল লোকটির কাছ থেকে। কিছু বলতে যাচ্ছিল ক্যাপ্টেন, এমন সময় গাড়ির শব্দে থেমে গেল। জিপে করে বাইরে গেলেন লর্ড।

‘তো শুরু করা যায়।’ জিপের সঙ্গে শব্দ মিলিয়ে না যেতেই বলল ক্যাপ্টেন। ‘তোমার কি কিছু বলার আছে?’

‘হ্যাঁ।’

‘বল।’

‘আমি কিছুক্ষণ আগে যা বলেছি, বিশেষ করে আপনি তার চেয়েও খারাপ।’

অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল ক্যাপ্টেন। হাসি থামিয়ে চারজনের প্রত্যেককে নীচুস্বরে নির্দেশ দিল ক্যাপ্টেন। নির্দেশ মোতাবেক তিনজনের প্রত্যেকেই রাইফেল হাতে তুলে নিয়ে যার যার জায়গার দিকে রওনা হলো। একজন পাহাড়ের মাথায় অবস্থান নিল। একজন পাহাড়ের গোড়ায় আর একজন ক্যাপ্টেনরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে একটু সামনে অবস্থান নেবে। পাহারাদার ক্যাপ্টেনের সঙ্গেই থাকবে। আপাতত বন্দুক হাতে ছেলেটির পাহারায় থাকলেও ছেলেটি ছোটা শুরু করতেই সে কুকুর সামলানোর কাজে নামবে। আর ক্যাপ্টেন স্বয়ং তত্ত্বাবধান করবে। তিনজনে রওনা হতেই শুরু করল ক্যাপ্টেন,

‘ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ, তাই মন দিয়ে শোন; রেডি ওয়ান, টু, থ্রি বলতেই তুমি এ দুই খুঁটির মাঝখান থেকে সোজা পাহাড়ের দিকে দৌড় দেবে। যদি তোমার পথের ডানে, বামে দশ গজের বেশি সরে যাও তবে তোমার ওপর গুলি চালানো হবে। তোমার দৌড় শুরুর ঠিক এক মিনিট পর স্টপওয়াচ অনুযায়ী কুকুরটিকে ছাড়া হবে, তার নাইলন কর্ড মাপ অনুযায়ীই লাগানো আছে, অর্ধেক পাহাড়ের বেশি অতিক্রম করতে পারবে না। নাগালের বাইরে যেতে পারলেই বেঁচে যাবে। এর আগেও এ রকম ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে। তাই তোমার পাহারাদার ও ধাওয়াকারী কুকুরকে আজ আর নতুন করে কিছু নির্দেশ দেয়ার নেই। কাজেই সাবধান।’

আবার নিষ্ঠুর এক টুকরো হাসি ফুটে উঠল ক্যাপ্টেনের মুখে।

‘তবে এর আগেও এ খেলায় কেউ জয়ী হতে পারেনি, শেষ পর্যন্ত সবাই পড়েছে জলাতঙ্কে। কারণ এ ধরনের শাস্তির জন্য আমরা এ ধরনের কুকুর পুষি। আর দেরি করে লাভ নেই, কথা শেষ, সন্ধ্যা হয়ে আসছে।’ এক মুহূর্ত থেমে ছেলেটির মুখের দিকে তাকাল ক্যাপ্টেন। সেই মুখ দেখে কিছুই বুঝতে পারল না। ‘রেডি ওয়ান’ থেমে বলছে ক্যাপ্টেন। ছেলেটিকে প্রস্তুতির সুযোগ দিচ্ছে। ‘টু।’ ‘থ্রি।’ বলতেই ছেলেটি তার সর্বশক্তি একত্রিত করে দৌড় শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে স্টপওয়াচ চালু করে দিয়েছে ক্যাপ্টেন।

অর্ধ মিনিট অতিক্রমের আগেই ছেলেটি পাহাড়ের গোড়ায় পৌঁছে গেল। দুর্বল শরীর নিয়ে এত দ্রুত ছেলেটিকে দৌড়াতে দেখে অবাক হলো ক্যাপ্টেন। তবে শঙ্কিত হলো না, কারণ আর অর্ধমিনিটের মধ্যে কিছুতেই ছেলেটির অর্ধ পাহাড় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে না। ইতিপূর্বে সবল লোকও পারেনি।

দৌড়ে তেমন সুবিধা করতে পারছে না ছেলেটি। খুব দ্রুত শক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে। কুকুরটিকে ছেড়ে দেয়ার আর কতক্ষণ বাকি আছে তা ঠিকভাবে অনুমান করতে পারছে না। পাহাড়ের কাছে পৌঁছে গেছে। এখন ওপরে ওঠার পালা। কিন্তু উঠবে কীভাবে? এর মধ্যে তার দম ফুরিয়ে গেছে। বুক এত জোরে ওঠানামা করছে যে, তা দূর থেকেও বোঝা যায়। অনেক কষ্টে মুখ বন্ধ রেখে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। যে কোনো সময় ছাড়া হবে কুকুরটিকে। তার একটু পরেই ঝাঁপিয়ে পড়বে তার ওপর। আর ভাবতে চাইল না।

এ অবস্থায় পাহাড়ে না চড়ে অন্যদিকে পালানোর চেষ্টা করা যায়। সে ক্ষেত্রে ঘোষিত বুলেটের আঘাতে তাকে ঝাঁঝরা হতে হবে। একাধিক বন্দুককে যে কোনোভাবেই সে ফাঁকি দিতে পারবে না। তাছাড়া পালিয়েইবা যাবে কোথায়? সবাই তার পিছে ছুটবে। আর পাহড়ের ওপরে চড়ে কুকুরের হাত থেকে রক্ষা না পেলেও অন্তত কিছুক্ষণ বেঁচে থাকা যাবে। আল্লাহ হয়তো বাঁচার কোনো পথ বেরও করে দিতে পারেন। কয়েক মুহূর্ত এসব ভাবতে ভাবতে পাহড়ের গোড়ায় পৌঁছে গেল। অবশেষে উঠতে শুরু করল সে। গতি ক্রমেই মন্থর থেকে মন্থর হয়ে গেল। যখন কুকুরের কলজে হিম করা ডাক শুনতে পেল তখন সে পাহাড়ের এক-চতুর্থাংশ উঠেছে। মনে হলো, সে কিছুতেই ওই খুঁটি পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। সে প্রায় হেঁটে হেঁটে উঠেছে, আর এর মধ্যে কুকুর ছাড়া পেয়েছে। তাই এ অবস্থায় অবশিষ্ট শক্তি ব্যয় করে ওপরে না উঠে বরং কুকুরটির সঙ্গে লড়াই করাই উত্তম। কিন্তু এ চিন্তাটা আগে করতে হতো। এখন বাধ্য হয়েই ওপরে উঠতে হবে। কারণ এ ঢালু জায়গায় লড়াই করার প্রশ্নই ওঠে না। এসব ভাবতে ভাবতে প্রায় থেমে দাঁড়িয়ে ছিল সে। আবার উঠতে শুরু করল। কয়েক কদম এগিয়ে কুকুরটি কত কাছে এসে পড়েছে তা দেখার জন্য পেছনে মাথা ঘুরিয়ে সামনে পা বাড়াতেই ছোট পাথরে পা পড়ে পা ফস্কে গেল। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই গড়িয়ে পড়তে লাগল পাহড়ের ঢাল বেয়ে।

কুকুরটির নাইলন কর্ডের এক মাথা খুঁটির সঙ্গে বাঁধা আছে। গলার বেল্ট আঁকড়ে ধরে আছে পাহারাদার। ছেলেটিকে ধাওয়া করার জন্য ছটফট করছে কুকুরটি। ক্যাপ্টেন একাধারে স্টপওয়াচ ও ছেলেটির দিকে লক্ষ্য রেখেছে। স্টপওয়াচ এক মিনিট পার হয়েছে নির্দেশ করতেই ‘ছেড়ে দাও।’ চাপা স্বরে বলল ক্যাপ্টেন। পাহারাদারের হাত থেকে ছাড়া পেতেই ক্রুদ্ধ গর্জন ছেড়ে নাইলন কর্ড ছাড়তে ছাড়তে দৌড় শুরু করল কুকুরটি পাহাড়ের দিকে।

মাথা ঘুরিয়ে দেখার আগেই তার পতন ঘটেছে বলে কুকুরটির অবস্থান জানতে পারেনি। গড়িয়ে পড়তে পড়তে দেখে নিল এখন পাহাড়ে এসে পৌঁছেছে। অনেক কষ্টে মাথা ঠান্ডা রেখে হিসাব কষছে কীভাবে কুকুরটিকে কুপোকাত করা যায়। তাকে আক্রমণকারীর সঙ্গে লড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে সে। সমতলে পৌঁছে তৃতীয়বার গড়ানোর আগেই নিজেকে সামলে নিয়ে যতদূর পারা যায় এটা জানে সে, সে জন্য কিছুটা উত্তেজিতও। এর আগেই কুকুরটির পৌঁছে যাওয়ার কথা। হয়তো নাইলন কর্ডের জন্য তার দ্রুত দৌড়াতে ব্যাঘাত ঘটছে। পৌঁছে গেল কালো কুকুরটি। গড়গড় করছে ভয়ঙ্করভাবে। চোখ দুটোতে যেন হিংস্র আগুন জ্বলছে। কয়েক হাত দূরে থেকেই শূন্যে ছেলেটির দিকে লাফ দিল কুকুরটি। সঙ্গে সঙ্গে উভয়েই আবার মুখোমুখি হলো। এবার হেঁটে এগিয়ে আসছে। কাছে আসতেই ডান পা দিয়ে প্রচণ্ড জোরে লাথি হাঁকাল কুকুরটির মুখে। ঘেউ ঘেউ করে দ্রুত কয়েকহাত দূরে সরে গেল। কুকুরটির ভাবভঙ্গি দেখেই এবার ঝট করে প্রথমে বসে পড়ল, তারপর মাথা নীচু করে প্রায় ড্রাইভ দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। ততক্ষণে ছেলেটির ওপর দিয়ে অপর পাশে উড়ে গিয়ে পড়ল কুকুরটি। দ্রুত ঘুরে দাঁড়াল। আগের চেয়ে আরো হিংস্র হয়ে উঠেছে কুকুরটি; তা তার গলার স্বরেই বোঝা যাচ্ছে।

শুয়ে পড়েই চিত হয়ে দ্রুত উঠতে গেল ছেলেটি। কিন্তু ততক্ষণে আবার লাফ দিয়েছে কুকুরটি। দ্রুত বাঁয়ে সরে গেল। তবে যত দ্রুত সরতে চেয়েছিল, তত দ্রুত পারল না। শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। দুর্বল শরীর নিয়ে কতক্ষণইবা এমন লড়াইয়ে টেকা যায়। এত মুহূর্ত আগে সে যেখানে ছিল সেখানে এসে পড়ল কুকুরটি। আধ শোয়া অবস্থায় ডান পা দিয়ে প্রচণ্ড এক লাথি কষল কুকুরটির পেটে। ঘেউ ঘেউ করে সরে গেল কয়েক হাত। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল ছেলেটি। শরীরটা কাঁপছে থরথর করে। এবার কুকুরটি আছে পাহাড়ের দিকে আর ছেলেটি আছে বিপরীতে। কুকুরটি হয়তো বুঝে গেছে যে, সে তার এ প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে তেমন সুবিধা করতে পারছে না। তাই এবার পা টিপে টিপে চাপা স্বরে গরগর করতে করতে এগোচ্ছে ছেলেটির দিকে। আর ছেলেটিও এক পা এক পা করে পেছাচ্ছে। কুকুরটির পরবর্তী উদ্দেশ্য বোঝার জন্য দূরত্ব রাখতে চায়। হঠাৎ করেই ঘটল বিপত্তি। কুকুরের গলায় লাগানো নাইলন কর্ডের একাংশ নীচে প্যাঁচানো অবস্থায় পড়েছিল। তাতে পা বিঁধে ভারসাম্য হারিয়ে পেছন দিক দিয়ে চিৎ হয়ে পড়ে গেল ছেলেটি। প্রতিদ্বন্দ্বীকে পড়ে যেতে দেখেই এক বিরাট লাফ দিল কুকুরটি। দুর্বলতার কারণেই এবার আর ইচ্ছার সঙ্গে শরীর কাজ করল না। তাছাড়া পাথুরে ভূমিতে পড়ে পিঠে ভালোই ব্যথা পেয়েছে। তবে মাথায় চোট লাগেনি; কারণ যখন দেখল যে সে তার পতন ঠেকাতে পারছে না, তখন মাথার নীচে হাত দিয়েছিল। কুকুরটি প্রায় উড়ে এসে ছেলেটির ওপর পড়ল। প্রথমে কুকুরটি তার দুই পা দ্বারা বুক খামছে ধরল। ব্যথায় ছেলেটির চোখ-মুখ কুঁচকে উঠল। তারপর কুকুরটি মুখ নামিয়ে আনছিল ছেলেটির মুখ বরাবর। ততক্ষণে ছেলেটি কুকুরটিকে গা থেকে ফেলে দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে। এত বড় ভারী কুকুরকে নড়ানোর মতো শক্তিও নেই। অবস্থা শোচনীয়। ছেলেটি তার মাথা দিয়ে প্রচণ্ড জোরে গুঁতো মারল কুকুরটিকে থুঁতলিতে। এতে কিছুটা লাভ হলো। সে তার কাছে এমনটি আশা করেনি। ভড়কে গিয়ে মুখ তুলে ফেলল। তবে এখনো বুক খামছে ধরে আছে। কপালে ভালোই ব্যথা পেয়েছে। তবে তাকে পাত্তা না দিয়ে দেখল কুকুরটিকে কুপোকাত করার এটাই সুযোগ। দুহাত তুলতে গেল একসঙ্গে কিন্তু ডান হাতটি উঠছে না। যেন অবশ হয়ে গেছে। পড়ে যাওয়ার সময় মাথাকে বাঁচাতে গিয়ে হাতের তালুটি পাথুরে জমিতে প্রচণ্ড জোরে ছেলেটির বাম হাতে। নখ বসিয়ে দিল। ব্যথায় চোখ-মুখ বিকৃত হয়ে গেল। অস্ফুট আওয়াজ বের হলো গলা দিয়ে। ছেড়ে না দিয়ে সর্বশক্তি একত্রিত করে আরো জোরে চেপে ধরল তার শ্বাসনালি। থাবা শিথিল হয়ে গেল। জিহ্বা বের হয়ে গেছে।

এর মধ্যে ক্যাপ্টেনসহ বাকি চারজন ঘিরে দাঁড়িয়ে তাদের তামাশা দেখছিল। ক্যাপ্টেন ইশারা করতেই পাহারাদার কুকুরটির বেল্ট ধরে টান দিল। হাত থেকে কণ্ঠনালি ছুটে গেল। নেমে গেল কুকুরটি ছেলেটির ওপর থেকে। ঘন ঘন দম নিতে লাগল কুকুরটি। ভয়ার্ত চোখে তাকাতে লাগল ছেলেটির দিকে। কুকুরটিকে নিয়ে চলে গেল পাহারাদার। পাথুরে ভূমিতে শুয়ে থাকায় পিঠে ব্যথা হচ্ছে। শুয়ে থেকে রক্ত বের হয়ে গেঞ্জির কিয়দংশ ভিজে গেছে। খানিকটা ছিঁড়ে গেছে আর বাম হাতে থাবা মেরেছে সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। অজুু নষ্ট হয়েছে।

‘সত্যিই, তুমি অপূর্ব বীরত্ব দেখিয়েছ, কুকুরটিকে হারিয়ে দিয়েছ।’ ছেলেটি উঠে বসতেই আবেগ জড়িত গলায় বলল ক্যাপ্টেন। এতক্ষণে সবাই নির্বাক হয়ে অদ্ভুত দৃষ্টিতে ছেলেটিকে দেখছিল। ‘স্বীকার করতে আপত্তি নেই, ইতিপূর্বে কেউ কোনো কুকুরকে কাবু করতে পারেনি।’

‘প্রশংসা থামান।’ কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তারপরও বলছে। ‘যদি জিতে থাকি তবে এবার আমাকে ছেড়ে দিন, নাকি আরো কোনো খেলা আছে?’ ছেলেটির প্রথম বাক্য শুনতেই মুখে আবার নিষ্ঠুর একটা ভাব ফুটে উঠল ক্যাপ্টেনের। কুকুরটিকে কুপোকাত করলেও তুমি তার মৃত্যু থাবা থেকে বাঁচতে পারোনি, ইতিপূর্বে অর্ধ ডজন নারী-পুরুষ মরেছে, তুমিসহ সাতজন হবে অর্থাৎ লাকি সেভেন।’ শেষ শব্দ তিনটি বলে হাসতে লাগল উন্মাদের মতো। ‘নিয়ে যাও একে।’ হাত ঝাপটা দিয়ে যেন ছেলেটিকে তাড়িয়ে দিল ক্যাপ্টেন। সঙ্গে সঙ্গে বাকি তিনজন এগিয়ে এলো তার দিকে।

‘নিয়ে যাওয়ার আগে আমার একটি কথা রাখুন। আমাকে অজু করার জন্য এক জগ পানি দিন।’ বলল ছেলেটি।

‘না,’, তার কথা নাকচ করে দিল ক্যাপ্টেন।

‘তোমরা দাঁড়িয়ে কী দেখছ? নিয়ে যাও একে।’ রেগে গেছে ক্যাপ্টেন। বাকি তিনজনের মধ্যে দুজন এগিয়ে এসে এক ঝটকায় ছেলেটিকে তুলে দাঁড় করিয়ে ছেড়ে দিল। অপরজন বন্দুকের নল দিয়ে পেছনে, সামনে এগোনোর জন্য গুঁতো দিল। পুনরায় গুঁতো খেয়ে এগোতে যাবে ছেলেটি, এমন সময় ক্যাপ্টেনের কথায় দাঁড়াল। ‘তোমাদের ফিরতে রাত হবে, চাঁদ নেই, তাই গার্ড কোয়ার্টার থেকে দড়ি নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে টর্চলাইট নিও। আর হ্যাঁ, ভালোভাবে বেঁধে রাখবে।’ আবার তার পিঠে নলের গুঁতো পড়ল। অনেকটা নীচে নেমে এসেছে। নীচের দিকে নামছে বলে হয়তো অতটা কষ্ট হচ্ছে না। তারপরও ধীরে ধীরে পা দুটো ভারী হয়ে আসছে। কুকুরটির নখ বড়ই ছিল। এখনো ফোঁটা ফোঁটা রক্ত বের হচ্ছে। আগের চেয়ে গেঞ্জিতে লাল দাগের পরিধি আরো বেড়ে গেছে। তার দুপাশে কয়েক হাত দূর দিয়ে চলছে দুজন। পেছনে একজন। তবে পিঠে রাইফেলের নল ঠেকানো নেই। একবার থেমে দাঁড়িয়েছিল। পেছনের লোকটি বলেছে দ্বিতীয়বার থেমে দাঁড়ালে অসুবিধা আছে। কী অসুবিধা আছে বলেনি।

পশ্চিম দিক দিয়ে নামছে। আর অল্প পরেই ডুবে যাবে সূর্য। সামনে মাগরিবের নামাজ। অজু করতে হবে। এবার এদের কাছে বলে দেখা যাক কী হয়।

‘প্লিজ, একটু পানির ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে?’

সবাই নীরবে হাঁটছিল। কারো কাছ থেকেই কোনো জবাব এলো না। বুঝল, এরাও তার কথা শুনবে না। তাকে সামনে যে কোনো জায়গায় বেঁধে রাখবে। তখন আর তায়াম্মুমও করতে পারবে না। এখনই নেমে তায়াম্মুম করতে হবে। থামলে হয়তো দু-চারটা লাথি তার পিঠে পড়বে। তাতে কিছু আসে-যায় না। কয়েক পা এগিয়ে থেমে দাঁড়াল।

‘আমাকে এক মিনিট সময় দিন।’ বলে বসতে যাবে, এমন সময় পেছন থেকে লাথি এসে পড়ল ছেলেটির পিঠে। এত জোরে লাথি হাঁকাল, তাও আবার না বলে, কল্পনাও করেনি ছেলেটি। প্রায় দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল ছেলেটি। ভোঁ করে ঘুরে উঠল মাথাটা। পড়ে গেল পেছন দিক দিয়ে। জ্ঞান হারাল সঙ্গে সঙ্গে। গালি দিয়ে উঠল তিনজনেই। তিনজন মিলে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে চলল ছেলেটিকে। সামনেই তাদের গন্তব্য।

ক্যাপ্টেনের গলার আওয়াজ কানে ঢুকতেই চোখ-মুখ মুছতে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল মেয়েটি। কয়েক পা এগিয়ে এসে রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়াল। দেখল দুজন লোক ছেলেটির হাত-পায়ের বাঁধন খুলছে। প্রথমে ছেলেটিই কী যেন বলল। তবে শোনা গেল না। এরপর ক্যাপ্টেন বলতে শুরু করল। তার কথা শোনা যাচ্ছে। শুনতে শুনতে মেয়েটির গায়ে মৃদু কাঁপুনি শুরু হলো। একটু পরেই কালো রোমশ বড় একটা কুকুর এসে হাজির হলো। সব শুনছে ও দেখছে মেয়েটি। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। একটু পরেই শুরু হলো ছেলেটির দৌড় পর্ব। তার হাতে যদিও ঘড়ি নেই, তারপরও অনুমান করল তুলনামূলকভাবে অল্প সময়েই পাহাড়ের ওপর চড়তে শুরু করেছে। মনে মনে প্রার্থনা করছে, কুকুর তার কাছে পৌঁছানোর আগেই যেন অর্ধ পাহাড়ের ওপরে উঠে যায় সে। ছেলেটি যেভাবে ওপরে উঠছে তাতে হয়তো সে পারবে, ভাবল সে। মুখে হাসি ফুটে উঠল তার। চোখে অশ্রু। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। কুকুরটির রক্তহিম করা ডাক শুনেই যেন সম্বিত ফিরে পেল সে। অদৃশ্য হয়ে গেল হাসিমুখ থেকে। ছুটতে শুরু করেছে কুকুরটি। একসময় প্রায় দাঁড়িয়ে পড়ল ছেলেটি। শরীরে কাঁপুনি থেমে গিয়েছিল, আবার শুরু হলো। কারণ কুকুর আর ছেলেটির মাঝে দূরত্ব ক্রমেই কমে আসছে। গলা থেমে অস্ফুট আওয়াজ বের হয়ে যাবে, এমন সময় আবার দৌড়াতে শুরু করেছে ছেলেটি। কয়েক মুহূর্ত পর হঠাৎ করেই গড়িয়ে পড়তে দেখল ছেলেটিকে। মুখ শুকিয়ে গেল তার। ছেলেটি যখন সমতলে পৌঁছেছে তখন কুকুরটি মাত্র কয়েক গজ দূরে। এরপর যা ঘটবে তা দেখতে পাবে না বলে চোখ বন্ধ করে ফেলল। কয়েক মুহূর্ত পরে যা দেখল তাতে খুশিতে তালি দিয়ে উঠল। ক্যাপ্টেনসহ পাঁচজনে এগোতেই শুরু করেছে। তালির শব্দ শুনে ঘুরে তাকাল ক্যাপ্টেন। কিছু না বলে আবার হাঁটতে লাগল। হঠাৎ করেই কীভাবে যেন পড়ে গেল ছেলেটি। এতদূর থেকে সব স্পষ্ট দেখা যায় না। মুহূর্তে সব হাসি আনন্দ যেন কর্পূরের মতো উড়ে গেল তার। কুকুরটি যে ছেলেটির ওপর চড়েছে তাও দেখা যাচ্ছে। তার থাবা বসিয়েছে কিনা তা দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ একটা ব্যাপার চোখে পড়তেই কাঁপতে কাঁপতে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল বারান্দায়। ছেলেটির গলা বা মুখে কুকুরটি তার সদন্ত বসিয়ে দেবে তা সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। বলে চোখ বন্ধ করতে যাচ্ছিল, এমন সময় যা দেখল তাতে চোখ বন্ধ না করে বরং চোখের পানি মুছে হাসিমুখে ধীরে ধীরে আবার উঠে দাঁড়াল মেয়েটি। মাথা দিয়ে গুঁতো মেরেছে ছেলেটি কুকুরটির মুখে। শেষ বিকেলের আলোয় দেখা যাচ্ছে কম। হাত দিয়ে ছেলেটি কুকুরটির গলা টিপে ধরেছে। কয়েক মুহূর্ত পর যখন কুকুরটিকে ছেলেটির ওপর থেকে সরিয়ে নেয়া হলো তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল মেয়েটি। চোখের পানি মুছছে। সে দেখতে না পেলেও ভাবল হয়তো কুকুরটি কমপক্ষে নখ বসিয়েছে ছেলেটির শরীরে। এজন্য খুব খুশি হতে পারছে না সে। তারপর খানিক কথোপকথন হলো বলে মনে হলো মেয়েটির তাদের মুখ-হাত নাড়া দেখে। তবে দূরত্বের জন্য কিছুই শুনতে পেল না। অবশেষে একরকম বন্দী করে নিয়ে চলল ছেলেটিকে। এক সময় হারিয়ে গেল দৃষ্টি থেকে। ছেলেটি চোখের আড়াল হতেই বিষণ্ন মনে বসে পড়ার চেয়ারে। হাতের পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছছে। কোথায় নিয়ে গেল ছেলেটিকে? শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে তার কপালে? আর তার নিজের কী হবে?

ক্যাপ্টেন এদিকেই আসছে। আবার ক্যাপ্টেনের সামনে সে পড়তে চায় না। সে তাকে ঘৃণা করে। লোকটা মানুষ নয়, পিশাচ। তাই কালবিলম্ব না করে তার ঘরে এসে শুয়ে পড়ল বিছানায়। এখন তার কিছুই করার নেই। শরীর-মন উভয়ের ওপর অনেক ধকল গেছে। ঘুমানো দরকার। তাতে বরং কিছুটা উপকার হবে। বেশি দেরি করতে হলো না, খানিক পরই তলিয়ে গেল গভীর ঘুমে।

কোনো কিছুর শব্দে ঘুম ভেঙে গেল মেয়েটির। প্রথমে ঘুমের ঘোরে বুঝতে পারল না কোনো শব্দে তার ঘুম ভেঙেছে। পর মুহূর্তে দলজায় ঠক ঠক শব্দ হতেই তন্দ্রাভাবে কেটে গেল তার। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে গিয়ে খুলে দিল দরজা। দরজার সামনে দুপুরের সেই ওয়েটারকে চিনতে পড়ল। একটু তফাতে দাঁড়িয়ে আছে পাহারাদার।

‘গুড ইভিনিং, ম্যাডাম। ঘুম ভালো হয়েছে তো?’ হেসে জিজ্ঞেস করল ওয়েটার। মাথা নেড়ে জবাব দিল মেয়েটি। বাইরে তাকিয়ে দেখল রাত হয়েছে।

‘হাত-মুখ ধুয়ে খেতে আসুন’, বলেই চলে যেতে উদ্যত হলো লোকটি।

‘খেতে ইচ্ছে করছে না, খাব না।’ লর্ড বা ক্যাপ্টেন কারো সামনেই যেতে ইচ্ছে করছে না বলে তাড়াতাড়ি বলল সে। ঘুরে দাঁড়াল লোকটি।

‘রাতে না খেয়ে থাকা ঠিক না, কিছু না কিছু খেতে হয়। লর্ড আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন। আর ক্যাপ্টেন বিয়ে অনুষ্ঠানের তদারকি করতে গেছেন, আপনাকে খেয়ে নিতে বলেছেন।’

মেয়েটি ধৈর্য ধরে লোকটির কথাগুলো শুনল। ‘ঠিক আছে, তাহলে এখানেই খাবার নিয়ে আসুন, যেতে ইচ্ছে করছে না।’

এক মুহূর্ত কী যেন ভাবল ওয়েটার। তারপর ‘ঠিক আছে’ বলে চলে গেল।

হাত-মুখ ধুয়ে বের হতে না হতেই খাবার ট্রে নিয়ে ওয়েটার নিজেই এলো। দরজা খোলাই রেখেছিল মেয়েটি। রিডিং টেবিলেই খেতে বসল। মেয়েটির থালায় খাবার তুলে দিতে দিতে বলল, ‘সন্ধ্যার পর একবার এসে দরজায় নক করেছিলাম, কয়েকবার নক করার পরও যখন কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না, তখন ভাবলাম হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাই বিরক্ত না করে চলে গিয়েছিলাম।

‘কেন ডেকেছিলেন?’ যেন কথার কথা জিজ্ঞেস করল মেয়েটি।

‘চা নিয়ে এসেছিলাম’, হেসে জবাব দিল ওয়েটার।

আর তেমন কোনো কথা হলো না। খাওয়া শেষ হলে সব নিয়ে গেল ওয়েটার। ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই চোখ পড়ল দেয়াল ঘড়ির দিকে। দেখল রাত প্রায় সাড়ে এগারটা বাজে। অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছে। এখন আর সহজে ঘুম ধরবে না। সময় কাটানোর জন্য বসে পড়ল রিডিং টেবিলের সামনে। টেনে নিল একটা ম্যাগাজিন। পাতা উল্টিয়ে চলেছে। পড়ার মতো অনেক কিছুই আছে, কিন্তু পড়তে ইচ্ছে করছে না। ম্যাগাজিনটা রেখে রিডিং লাইট অফ করে চেয়ারের নরম ফোমে হেলান দিল। লম্বা ঘুম দিয়ে খেয়ে দেয়ে শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছে। ঘুম নেই চোখে। কিন্তু মাথায় রাজ্যের ভাবনা ভিড় জমিয়েছে।

ওই লোক তিনজন কোথায় নিয়ে গেল ছেলেটিকে? নিয়ে গিয়ে কি আবারো নির্যাতন করবে তার ওপর? আরো অমানুষিক নির্যাতন? শেষ পর্যন্ত ছেলেটির পরিণতি কী হবে? আর তার নিজেরইবা কী হবে? তবে কি তাকে বাকি জীবন এ দ্বীপে, এ নরপশুদের মাঝে কাটিয়ে দিতে হবে? এখান থেকে কি আদৌ মুক্তি পাওয়া যাবে না? মুক্তির কি কোনো পথ নেই? কোনো প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে পেল না সে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সাড়ে বারটা পার হয়েছে। জেগে থেকে কোনো লাভ হচ্ছে না বরং দুশ্চিন্তা বাড়ছে। চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে এলো বারান্দায়। বাংলোর চারদিকে সিকিউরিটি লাইট জ্বালানো। তার সোজা সামনে নীচে গাছপালার আড়ালে আবছা অন্ধকারে একজন লোক দাঁড়ানো। সিগারেটের আগুন দেখতে পেল। তা না হলে তার উপস্থিতি বুঝতে পারত না সে। কাঁধে রাইফেল। মেয়েটি বারান্দায় আসতেই নড়েচড়ে দাঁড়াল সে। বারান্দায় লাইট জ্বালানো নেই। তবে ঘরের আলো দরজা-জানালার পর্দা ভেদ করে বারান্দাটিকে ঈষৎ আলোকিত করেছে। হয়তো তাতেই তাকে সতর্ক হয়ে গেছে পাহারাদার। বোঝা যাচ্ছে শুধু তার জন্যই এ পাহারার ব্যবস্থা। আরো পাহারাদার আছে কিনা কে জানে।

হঠাৎ কোনো কিছুর শব্দে তার তন্দ্রা টুটে গেল। ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসল। বারান্দা থেকে শব্দটা এসেছে বলে মনে হলো। বেড সুইচ হাত দিয়ে বাতি জ্বালাল। কী হয়েছে দেখার জন্য বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল মেয়েটি। বারান্দার দিকে এগোতে যাবে এমন সময় দরজার পর্দা সরে গেল। যা দেখল তাতে হতভম্ব হয়ে গেল সে। সময়মতো নিজের মুখ নিজে চেপে না ধরলে হয়তো বিস্ময়ের চিৎকারটা মুখ দিয়ে বেরিয়েই আসত।

নড়ে উঠল ছেলেটি। প্রথমে কিছুই বুঝতে পারল না। চোখ খুলল। সব অন্ধকার দেখতে লাগল। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ পরে আবার খুলল। এবার আর বন্ধ করল না। তার ক্ষতস্থানগুলো ব্যথা করছে আর মাথাটা কেমন ভার ভার লাগছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চোখ খোলা রেখেছে। তারপরও কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। তবে কি সে অন্ধ হয়ে গেছে? হঠাৎ করেই বুঝতে পারল, রাত হয়ে গেছে। নানা পোকার কোলাহলে চারদিক মুখরিত। কান পাতা দায়। উঠে দাঁড়াতে যেতেই দেখল তাকে একটা গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। তারপর সবকিছুই এক এক করে স্মৃতিতে ভেসে উঠল। তবে পেছন থেকে কোনো কিছুর ধাক্কা খেয়ে বসে পেছন দিকে পড়ে যাওয়ার পর আর কিছুই মনে নেই। তবে কি সে সেই সময় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল? তাই হবে। তবে তো তার মাগরিব নামাজ কাজা হয়েছে। আবার হয়তো এশার নামাজেরও সময় হয়েছে। এখন নামাজ আদায় করার অজু নচেৎ তায়াম্মুম করতে হবে কিন্তু সে তো বন্দী আছে। তাকে একটা গাছের সঙ্গে হেলান অবস্থায় রেখে হাত দুটো পিঠমোড়া করে গাছের পেছনে বেঁধেই। শরীরের ওপরের যে অংশ গাছের গায়ে হেলান আছে, সে অংশ গাছের সঙ্গে পেঁচিয়ে বেঁধেছে। পা দুটো সামনে ছড়ানো অবস্থায় একত্র করে বেঁধেছে। সব বাঁধনই অত্যন্ত শক্ত করে বেঁধেছে। নড়াচড়ার উপায় নেই। তবে কি তাকে ওই অবস্থায়ই থাকতে হবে? কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ চিন্তা করল। হঠাৎ আশার আলো দেখতে পেল। দেরি না করে কাজ শুরু করে দিল। হাত দুটো বাদেই তার ওপরের অংশ গাছের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধেছে। হাত দুটো আংশিক নড়াচড়া করা যায়। হাতের কব্জিতে বেঁধেছে। ফলে হাতের নখগুলো মুক্ত আছে।

প্রথমে হাত দুটো বাঁধা অবস্থায় ধীরে ধীরে ডানে কোমরের দিকে সরিয়ে আনতে লাগল। এতে বাম হাতে প্রচণ্ড চাপ পাওয়ায় ব্যথা করতে লাগল। কিন্তু ব্যথায় পাত্তা না দিয়ে দুটো হাতই কোমর স্পর্শ করল। ডান পাশে কোমরে পাজামায় সেই কাঁচির একাংশ গোঁজা অবস্থায় আছে। তার গায়ে গেঞ্জি আর পাজামা ছাড়া আর কোনো কাপড় নেই। তার কাছে কিছু নেই মনে করে হয়তো তার দেহে তল্লাশি চালায়নি। ফলে কাঁচির অংশটি এখনো বহাল তবিয়তেই আছে। অনেক কষ্টে আঙুল দিয়ে কাঁচির অংশটি বের করল। কিন্তু দুই আঙুলে ধরার আগেই মাটিতে পড়ে গেল। যেখানে পড়েছে সেখানে কিছুতেই আঙুল নিয়ে যেতে পারবে না। অথচ তার প্রায় দেহের সঙ্গেই তা লেগে আছে। কিন্তু তা নিতে পারছে না।

এর মধ্যে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করেছে। দমে গেল সে। এখন কী করবে? অন্ধকারে তাকাতে তাকাতে চোখে অন্ধকার সয়ে এসেছে। ফলে সবকিছু আবছা দেখতে পাচ্ছে। মাথা ঘুরিয়ে কাঁচির অংশটিও দেখতে পেল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটা বুদ্ধি মাথায় এলো। প্রথমে গাছের পেছনে হাত দুটো মাটিতে নামিয়ে এনে আঙুল দিয়ে খুঁজতে লাগল। কয়েক মুহূর্ত পরই যা খুঁজছিল পেয়ে গেল। ছোট চিকন করা ডালটা বাঁ হাতের দুই আঙুলে ধরে আবার হাত দুটো ডানে সরিয়ে আনল। কাঁচির যে গোল অংশে আঙুল ঢুকিয়ে ধরে সেখানে ডালটি ঢুকিয়ে অত্যন্ত ধীরে ধীরে কাঁচির অংশটিকে তার পেছনে গাছের গোড়ায় নিয়ে এলো। এবার ডালটি ফেলে দিয়ে সহজেই তা ডান হাতে তুলে নিল।

প্রথমেই হাতের বাঁধন কাটতে হবে। তাহলে দ্রুত বাকি সব বাঁধন খুলতে পারবে। দেরি না করে কাজে লেগে গেল। অতি কষ্টে ডান হাতের আঙুল দ্বারা কাঁচির অংশটিকে ধরে হাতের কব্জির বাঁধন কেটে চলল। কাঁচির অংশটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার এমনিতেই ভোঁতা হয়ে এসেছিল, তার ওপর ফলাটি মোটে দেড় ইঞ্চি। তা দিয়ে অত শক্ত দড়ি কাটা অত্যন্ত কঠিন কাজ।

ডান হাত ব্যথা হয়ে যাওয়ায় বাম হাত দিয়ে কাটতে শুরু করল। মধ্যে দুবার বিশ্রাম নিয়ে কয়েকবার হাত বদল করে দীর্ঘ সময় পর অবশেষে হাত দুটো মুক্ত করতে পারল। বসে কিছুক্ষণ দম নিতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু তা না করে দ্রুত বাকি বাঁধন খুলে একদম মুক্ত হলো। কাঁচির অংশটিকে আবার কোমরে গুঁজে উঠে দাঁড়াল।

এখন তার প্রথম কাজ হচ্ছে অজু বা তায়াম্মুম করে নামাজ পড়া। তাকে অনেক নীচে নামানো হয়েছে। আর কিছু নীচে নামলেই হয়তো সমুদ্র পাওয়া যাবে। কারণ শেষ বিকেলে নীচে নামার সময় গাছপালার ফাঁক দিয়ে দূরে সমুদ্রের নীল পানি চোখে পড়েছে। কয়েক মুহূর্ত পর নীচে নেমে চলেছে ছেলেটি। গতি খুব বেশি নয়। কারণ এমনিতে এসব জায়গা তার অচেনা। তার ওপর আকাশে চাঁদ নেই। আবার পড়ে গিয়ে কোনো বিপত্তি ঘটাতে চায় না। নামার সুবিধার জন্য বেশ ডানে সরে এসেছে। সোজা নীচে নামা কঠিন, কারণ পথ খুব দুর্গম। এখনো সমুদ্রের গর্জন শোনা যাচ্ছে না। হাঁপিয়ে উঠেছে। তাই বিশ্রাম নেয়ার জন্য একটা গাছতলায় বসে লম্বা লম্বা শ্বাস ছাড়ছে।

বাম হাতে যেখানে কুকুরটি থাবা মেরেছিল সেখান থেকে প্রচুর রক্ত গড়িয়ে পড়েছে। তবে এখন আর রক্ত বের হচ্ছে না। ডান হাত দিয়ে নেড়ে দেখল রক্ত এখনো পুরোপুরি জমাট বাঁধেনি। বুকের যে দুই জায়গায় থাবা মেরেছে সেখানকার রক্তও এখনো ভালোভাবে জমাট বাঁধেনি। গেঞ্জি রক্তে ভিজেই আছে। অর্থাৎ রাত এখনো গভীর হয়নি। আবার উঠে দাঁড়াতে গিয়েও থেমে পড়ল। একটা শব্দ এই প্রথম কানে এসেছে। এতক্ষণ চিন্তামগ্ন থাকায় হয়তো শুনতে পায়নি। অবশ্য শব্দ খুব জোরে শোনা যাচ্ছে না। ভালোভাবে শোনার জন্য কান পাতল।

দূরে পানি পড়ার শব্দ মনে হলো। অস্পষ্ট। তবে কি কাছে-পিঠে কোথাও ঝরনা আছে? এ রকম পাহাড়ি এলাকায় ঝরনা থানা অস্বাভাবিক কিছু নয়। খুশি হয়ে উঠেছে সে। হয়তো ঝরনাটা বেশি দূরে নয়। শব্দের উৎস লক্ষ্য করে এগোলেই হবে। আর দেরি করল না। প্রায় দৌড়াতে শুরু করল। রাতে অচেনা জায়গা পাড়ি দেয়া খুবই কঠিন। তার ওপর এই জঙ্গলে হিংস্র প্রাণী আছে কিনা কে জানে? হয়তো নেই। কারণ তাদের উপস্থিতির কোনো ইঙ্গিত সে পায়নি। যত দ্রুত ছুটতে চাইছে তত দ্রুত পারছে না। ক্লান্তির কথা ভুলে থাকার চেষ্টা করছে।

অবশেষে একসময় শব্দ খুব স্পষ্ট শুনতে পেল। ঝরনাই। কোনো সন্দেহ নেই। তার পরিশ্রম বিফলে যায়নি। আর একটু পরেই পৌঁছে গেল ঝরনার ধারে। দাঁড়িয়ে পড়ল খোলা জায়গায়। রাতের অন্ধকার। অবশ্য অন্ধকারে চলতে চলতে তার কাছে অন্ধকার ফিকে হয়ে এসেছে। তাকিয়ে দেখতে লাগল চারদিকে। হয়তো আরো অনেক ওপরে দুর্গম পর্বতসঙ্কুল কোনো স্থানে এ ঝরনার উৎপত্তি হয়েছে। সেখান থেকে পাহাড় টিলার পাশ কাটিয়ে এঁকে বেঁকে নীচে নেমে এসেছে। এ ঝরনার পানি দিয়েই হয়তো ছোট্ট এক নদীর জন্ম নিয়ে সাগরে গিয়ে মিশেছে। সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেখান থেকে একটু দূরে অনেক ওপর থেকে পানি পড়ছে প্রচণ্ড বেগে। যার ফলে শব্দের সৃষ্টি হচ্ছে। সেই পানি তার সামনে দিয়ে নীচের দিকে গড়িয়ে নামছে প্রচণ্ড গতিতে। পানি চলার পথে ছোট-বড় পাথরের চাঁইয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ফেনার সৃষ্টি করছে। এসব মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দিনে অথবা জ্যোৎস্না রাতে দেখতে হয়। অন্ধকার রাতে দেখার কিছুই নেই। খেয়াল হলো যে সে দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি একটা সুবিধাজনক জায়গায় বসে পড়ল। তৃষ্ণা পেয়েছে।

প্রথমে দুহাত পরিষ্কার করে দুই হাতে আঁজলা ভরে পানি পান করল। ক্ষুধা লেগেছিল। তাও কিঞ্চিৎ পরিমাণ নিবৃত্ত হলো। তারপর গা থেকে গেঞ্জি খুলে প্রথমে তার রক্ত ধুয়ে ফেলল। এরপর গেঞ্জিটা ভালোভাবে ধুয়ে শুকানোর জন্য দেবে। কিন্তু ধুতে গিয়েই ঘটল বিপত্তি। প্রচণ্ড স্রোতে গেঞ্জিটা হাত থেকে ছুটে চোখের পলকে হারিয়ে গেল পানির স্রোতে। এখন তার বস্ত্র বলতে পায়জামা ছাড়া কিছুই নেই। কয়েক মুহূর্ত ভেবেও কোনদিকে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়বে বুঝতে পারল না। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগল। হঠাৎ করেই ধ্রুব তারকাটি চোখে পড়ল তার। কয়েক মুহূর্ত পরই দাঁড়িয়ে পড়ল নামাজে। মোনাজাত শেষে একটা বড় পাথরের গায়ে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসল ছেলেটি। মাথায় রাজ্যের চিন্তা।

সময় বয়ে চলল নিজস্ব গতিতে। ভাবছে, বর্তমানে সে মুক্ত আছে। তবে শিগগিরই তাকে খোঁজা শুরু হবে। তার হাতে সময় আছে। সে ইচ্ছে করলেই আপাতত এ দ্বীপের কোথাও আত্মগোপন করে থাকতে পারে। তবে তাকে বারবার অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। কারণ একই স্থানে বেশি সময় থাকলে ধরা পড়ে যাবে। তারপর পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হলেই সময়-সুযোগমতো যেভাবেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে। কারণ তাকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা নিতে হবে। কয়েক দিনের মধ্যেই এখান থেকে সরে পড়তে হবে। অবশ্য তার একার পক্ষে এসব খুব কঠিন হবে না। কিন্তু সে একা সরে পড়বে কীভাবে? সে মেয়েটিকে চোখ মুছতে দেখেছে। বিয়েতে নিশ্চয়ই তাকে জোর করে রাজি কআিছে। ওরা বাকি জীবন তাকে এ দ্বীপে একরকম বন্দী করে রাখবে। সে হয়তো অত্যাচারের শিকার। শারীরিক না হোক, মানসিক তো। সে একজন অত্যাচারিতকে অত্যাচারীদের মধ্যে ফেলে রেখে কীভাবে স্বার্থপরের মতো পালাবে?

ভেবে দেখল, মেয়েটিকে নিয়ে এখান থেকে পালানো তার পক্ষে খুব কঠিন ও বিপদসঙ্কুল হবে। আবার ধরাও পড়ে যেতে পারে। তাকে নিয়ে এখান থেকে পালাতে গেলে হয়তো দেরি হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে সে জলাতঙ্কে মরতেও পারে। কিন্তু কিছুতেই একা পালানোর কথা ভাবতে পারল না ছেলেটি। দুহাত তুলল সেই মহাপরাক্রমশালী এ বিশ্বজগৎ নিয়ন্তা মহান আল্লাহপাকের দরবারে।

হে আল্লাহ্, তুমি জানো আমি সিদ্ধান্তটি সঠিক নিয়েছি কিনা। ভুল হয়ে থাকলে তুমি আমাকে মাফ করে দিও, তুমিই তো অপরাধ মার্জনাকারী। হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার কর। আমাদেরকে এ বিপদ থেকে মুক্তির জন্য সাহস, মনোবল ও দেহবল দান কর। হে আল্লাহ, তুমি তোমার এ দাসানুদাসের অন্তরের খবরও জানো, তুমি আমাকে সব ধরনের পাপ, অশ্লীল কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখ।

ওপরে উঠে এসেছে। প্রচণ্ড পরিশ্রমে হাঁপাচ্ছে। সকাল থেকে কতক্ষণ বাকি তা জানা নেই। দিনের আলো ফুটে উঠলেই তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। বেশ দূরে ঘরগুলোর জানালার শার্ষি ভেদ করে ঘরের আলো আবছাভাবে বাইরে আসছে। সমতল চত্বরে আলো আছে, বাংলোর বারান্দায় আলো আছে। জায়গায় জায়গায় রাইফেল হাতে পাহারাদাররা পায়চারি করছে। একবার দেখলেই যে কোনো অনভিজ্ঞ লোকও অনুমান করতে পারবে, এদের পাহারা ব্যবস্থায় কোনো খুঁত নেই। বরং তা যে অত্যন্ত সূক্ষ্ম তা একটু পরেই বুঝতে পারল ছেলেটি।

চত্বর থেকে কয়েকশ’ গজ দূরে অন্ধকারে একটা টিলার ধারে দাঁড়িয়ে আছে সে। যেখানে দাঁড়িয়েছে সেখান থেকে বাংলোর সামনের দিকটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে বুঝতে পারল সামনে দিয়ে কারো চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলোর কাছে পৌঁছার কোনো উপায় নেই। তার ওপর এত দূর থেকেও মেয়েটার ঘরের সামনে একজনকে পায়চারি করতে দেখল। সামনে দিয়ে যাওয়া চরম বোকামি। বাংলোর পেছনে গিয়ে ওখানকার অবস্থা দেখতে হবে। কারণ তার ধরা পড়াতে কোনো লাভ হবে না।

ঘুরতে যাবে এমন সময় কুকুরের ক্রুদ্ধ ধ্বনিতে যেন বরফের মতো জমে গেল ছেলেটি। পরমুহূর্তে নিজের অজান্তে শব্দের উৎস লক্ষ্য করে আবার সামনে ঘুরে দাঁড়াল। দেখল চত্বরের বাম দিক থেকে একটা রোমশ বড় কুকুর একটা রাইফেলধারী লোককে তার দিকে টেনে নিয়ে আসছে। কুকুরটির গলায় পরানো শিকলের আংটা লোকটির হাতে ধরা। এগিয়ে আসছে এরা দ্রুত পায়ে। খুব জোর পাঁচশ’ গজ দূরে আছে। হঠাৎ করেই বুদ্ধিটা মাথায় এলো।

‘মেঁও, মিঁয়াও।’ বিড়ালের স্বর নকল করে ডেকে উঠল ছেলেটি উচ্চকণ্ঠে। যেন কুকুরের ডাক ছাপিয়ে দূর থেকেই লোকটি শুনতে পায়। প্রথমবারে থামল না লোকটি। হয়তো শুনতে পায়নি। বরং এখন তারা প্রায় দৌড়ে আসতে লাগল। দ্রুত দূরত্ব কমছে। লোকটি আলোতে আছে আর সে অন্ধকারে আছে বলে হয়তো তাকে এখন দেখতে পায়নি। আর প্রায় পঞ্চাশ গজ এগোলে লোকটিও অন্ধকারে এসে পড়বে। পাহাড়ের জায়গায় জায়গায় সিকিউরিটি লাইটের ব্যবস্থা করা, বা চত্বরের দিকে তাক করা। লোকটি একটি সিকিউরিটি লাইটের কাছে চলে এসেছে। ফলে তীব্র আলো থেকে চোখ বাঁচানোর জন্য কপালে বাম হাত তুলেছে।

সে জানে, দৌড়ে কোনো লাভ নেই বরং বিপদ আরো বাড়বে। সে যে শুধু কুকুরের হাতে আবার পড়তে যাচ্ছে তা-ই নয় বরং পুনরায় বন্দীও হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ঠোঁট শুকিয়ে গেছে, তৃষ্ণাও পেয়েছে। মরিয়া হয়ে অনেক কষ্টে আবার ডেকে উঠল, ‘মেঁও, মিঁয়াও।’ হয়তো বিড়ালের ডাক কানে গেছে লোকটির। থেমে দাঁড়াল। হয়তো ভালোভাবে শোনার জন্য। আবার ডেকে উঠল ছেলেটি প্রায় নিখুঁতভাবে। অট্টহাসি হেসে শিকল টেনে কুকুরটিকে থামাল পাহারাদার। গর্জন বন্ধ করে দিয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে গড়গড় করতে লাগল কুকুরটি। সে সঙ্গে সামনে এগোতে চাইল। তবে তাকে এগোতে না দিয়ে বরং প্রায় টেনে নিয়ে ফিরে চলল লোকটি। মনিব তার শিকারের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি বলে হয়তো রাগ হয়েছে কুকুরটির। তারই ফলে হয়তো গড়গড় করতে করতে মনিবের পিছু পিছু বাধ্য ছেলের মতো হাঁটতে লাগল।

এতক্ষণে যেন নড়াচড়ার শক্তি ফিরে এলো। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে প্রশংসা করল সেই মহাত্রাণকর্তা আল্লাহ্র। এতক্ষণে কী হতো ভেবে তার শরীর কেঁপে গেল। আর দেরি করল না। পা বাড়াল নীচের দিকে। প্রথমে বেশ খানিকটা নীচে নেমে এলো। যেন আবার আগের অবস্থার সৃষ্টি না হয়। তারপর অনুমান নির্ভর হয়ে চলল। একসময় ওপরের দিকে উঠতে লাগল। দূর থেকেই দেখল তাকে আরো ডানে সরতে হবে। আবার নীচে নেমে ডানে সরে ওপরে উঠে এলো। হ্যাঁ, এবার বাংলোর ঠিক পেছনে এসে উপস্থিত হয়েছে। তবে বেশ দূরে আছে। তার আন্দাজ সামনে বা আশপাশে পাহারাদার না থেকে পারে না। কুকুর থাকলে তো আরো বিপদ। সে যেখানে দাঁড়িয়েছে সেখানে ঘন গাছপালায় পূর্ণ এবং অন্ধকার।

এদিকে দাঁড়িয়ে থেকে কিছু বোঝার সম্ভাবনা কম। ঝুঁকি নিয়ে সামনে এগোতে হবে। পা টিপে টিপে এগোতে শুরু করল সে। প্রায় বিশ-পঁচিশ গজ এগিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ল। তার একটু বাঁয়ে ঘুমন্ত এক পাহারাদার বাংলোর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। নিঃশব্দে আলো-অন্ধকারে কয়েক গজ পিছিয়ে এসে চারদিকে তীক্ষè চোখে তাকাল ছেলেটি। আশপাশে আর কাউকে দেখতে পেল না। ছেলেটি বুঝতে পারল না বাংলোর পেছনে মাত্র একজন পাহারাদার রাখার হেতু কী? আরো ভালোভাবে পরিস্থিতি বোঝার জন্য কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কর্তব্য স্থির করে নিল। সে যা করতে চাচ্ছে এছাড়া অন্য কোনো সহজ উপায় আর নেই। তবে তাও হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

এগোতে যাবে, এমন সময় পাহারাদার নড়ে উঠল। ডানে-বাঁয়ে, পেছনে ফিরে তাকিয়ে আবার আগের মতো সামনে নজর দিল। পা টিপে টিপে এগিয়ে পাহারাদারের প্রায় দশ গজ পেছনে একটা গাছের আড়ালে দাঁড়াল। এখন পেছনে ফিরে তাকালে পাহারাদার তাকে দেখতে পাবে। উত্তেজনায় হৃৎপিণ্ডের গতি অনেক বেড়ে গেছে। জোর করে নিজেকে শান্ত রাখতে হচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে সে ধরা পড়ে যেতে পারে। পাহারাদার ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ঘুম ধরতে পারে হয়তো এ কারণে কোনো গাছের গায়ে হেলান দেয়নি বা বসে পড়েনি। বাছাই করা পাহারাদার।

দেরি করার সময় নেই। কারণ কিছুক্ষণ পরপর পাহারাদার চারদিকে তাকায়। যে কোনো মুহূর্তে পেছনে তাকাতে পারে এ আশঙ্কায় আর দেরি না করে আল্লাহর নাম নিয়ে পাহারাদারের সোজা পেছন বরাবর দাঁড়াল। তারপর প্রায় শামুকের গতিতে নিঃশব্দে এগোতে লাগল। লোকটির প্রায় এক গজ পেছনে এসে দাঁড়াল। হাঁপাচ্ছে। হয়তো নিঃশ্বাসের শব্দ কানে গেছে লোকটির। ঘুরে দাঁড়াতে গেল। কিন্তু ততক্ষণে ছেলেটি দেহের সর্বশক্তি একত্রিত করে পা দুটো ভাঁজ করে বুকের সঙ্গে লাগিয়ে শূন্যে লোকটির প্রায় পিঠ পর্যন্ত লাফিয়ে উঠল। তারপর শূন্যে থাকা অবস্থায় ভাঁজ খুলে দুপা দিয়ে লাথি হাঁকাল লোকটির পিঠে। অবশ্য লোকটি ঘাড় ঘুরিয়ে ছেলেটিকে দেখেছে। কিন্তু তার সম্পর্কে কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাথির আঘাতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল মাটিতে। লোকটি ওঠার চেষ্টা শুরু করার আগেই বস্তা পতনের শব্দে তার পিঠে চেপে বসল ছেলেটি। প্রথমে স্বয়ংক্রিয় রাইফেলটি লোকটির ঘাড় থেকে খুলে ফেলল।

‘চুপচাপ শুয়ে থাকুন, বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে গুলি করতে বাধ্য হব’, শীতল গলায় বলল ছেলেটি। লোকটি তাকে বাঁধা দিচ্ছে না দেখে সন্দেহ হলো। উল্টিয়ে দেখল তার সন্দেহই ঠিক, জ্ঞান হাআিছে লোকটি। তার জন্য এটাই ভালো হয়েছে। ঝুঁকি কমে গেছে। দ্রুত কাজে লেগে গেল। শীতকাল। মোটা কাপড়ের শার্ট পরেছে লোকটি। লোকটার গা থেকে শার্টটা খুলতে যেতেই পকেট থেকে বেরিয়ে পড়ল এক প্যাকেট সিগারেট ও একটা গ্যাস লাইটার। সতর্ক আছে ছেলেটি। জ্ঞান ফিরলে যেন লোকটি তাকে কাবু করতে না পারে।

শার্টটা টুকরো করে ছিঁড়ে লোকটির দুই হাত পিঠমোড়া করে ভালোভাবে বাঁধল। তারপর বাঁধল পা দুটো। গা থেকে গেঞ্জি ছিঁড়তে যাবে এমন সময় চোখ মেলল লোকটি। এক মুহূর্ত উভয়ে উভয়ের দিকে তাকিয়ে থাকল।

‘তুমি! ছাড়া পেলে কীভাবে?’ সব বিষয়ে জিজ্ঞেস করল লোকটি।

‘দুঃখিত, আপনাকে কষ্ট না দিয়ে উপায় ছিল না।’ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল ছেলেটি। যে কোনো মুহূর্তে যে কেউ এসে পড়লেই বিপদ। একটানে গেঞ্জিটা ছিঁড়ে ফেলল।

‘আশা করি, কাল সকাল পর্যন্ত মুক্ত হওয়ার চেষ্টা না করে চুপচাপ শুয়ে থাকবেন।’

যেন কথা হারিয়ে ফেলেছে লোকটি। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ছেলেটির দিকে। লোকটির প্যান্টের পকেট হাতড়ে রুমাল বের করে তার মুখে ঢুকিয়ে দিল। গেঞ্জি ছিঁড়ে তা দিয়ে মুখটা বাঁধল যাতে মুখ থেকে রুমাল বের করতে না পারে। হাত পেছনে বাঁধা থাকায় চিত করে শুইয়ে রাখলে লোকটির অযথা কষ্ট হবে ভেবে তাকে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে আর একটু পেছনে অন্ধকারে টেনে এনে রাখল। তারপর এসে দাঁড়াল আগের জায়গায়, তাকাল বাংলোর দিকে।

বাংলোর দেয়ালে লাগানো সিকিউরিটি লাইটের আলোয় চারদিক আলোকিত হলেও বাংলোর ধারে কয়েক হাত জায়গা আবছা অন্ধকার আছে। বাংলোর দিকে তাকিয়ে কয়েক মুহূর্ত পরেই বুঝতে পারল, যে লোকটি মেয়েটির কামরার নীচে ঠিক পেছন বরাবর দাঁড়িয়ে ছিল, সেও আছে। বাংলোর দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগল মেয়েটার ঘরের লাইট নেভানো। সে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। সামনে বারান্দা আছে বলে মনে হচ্ছে। ওপরে উঠতে পারলে বারান্দা দিয়ে ঢুকা যাবে। হঠাৎ একটা ব্যাপার নজরে আসতেই কয়েক লাফে পৌঁছে গেল দেয়ালের কাছে। তারপর পাইপ বেয়ে উঠতে শুরু করল। পৌঁছে গেছে। তার দুহাত ডানে বারান্দা। কাঠের মোটা করে গ্রিল দেয়া। যা ভেবেছিল তা নয়। দমে গেল। কিন্তু পিছিয়ে গেলে হবে না। আবার পাইপ ধরে ঝুলে থাকাও বিপজ্জনক।

এখন যা করা যায় তা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া উপায়ও নেই। বাঁ হাতে পাইপ ধরে ডান হাত বাড়িয়ে দিল বারান্দার গ্রিল ধরার জন্য। শেষ পর্যন্ত নাগাল পেল। এর পরে গ্রিলে ঝুলে পড়া তেমন কঠিন হল না। জানালা-দরজা খোলা থাকলেও পর্দা ফেলা। ভেতরে কিছুই দেখা যায় না। এখন এখান থেকে ডানা যায় মেয়েটিকে। নাম যে কি জানে না। ‘এই যে, শুনছেন’ বলে ডাকার আগেই স্মরণ হলো ওই পাশে পাহারাদার আছে। তার গলা শুনতে না পেলেও মেয়েটি যদি ঘুমের ঘোরে উচ্চস্বরে ‘কে’ বলে ডেকে ওঠে, তাহলেই বিপদ। নির্ঘাত ধরা পড়ে যাবে। তাহলে উপায়? উপায় বের করার জন্য এপাশ-ওপাশ তাকাচ্ছে। মাথার ওপর টালির ঢালু ছাদ নেমেছে। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই উপায়টা বের হলো। বেশিক্ষণ ঝুলে থাকা সম্ভব নয়। কাজ শুরু করে দিল। প্রথমে আরো ওপরে উঠে এলো। বাম হাতে গ্রিল ধরে ঝুলে ডান হাত দিয়ে অনেক জোরাজুরি করে প্রথম টালিটা খুলে ফেলল। তারপর যত জোরে সম্ভব তা দূরে ছুড়ল। দূরে থ্যাপ করে পড়ে ভেঙে গেল। না, ওই শব্দে কেউ সাড়া দিল না। দ্বিতীয়টাও একইভাবে খুলল। মাথার ওপরটা ফাঁকা হতেই আরো ওপরে উঠে ছাদের ওপরে মাথা বের হয়ে এলো। এরপর একের পর এক টালি খুলে চলল। টালিগুলো প্রায় নিঃশব্দে অপর টালিগুলোর আকর্ষণ ছেড়ে খুলে আসছে। এখন আর ওগুলো দূরে ফেলে দিচ্ছে না। কারণ ক্রমাগত একই শব্দ বিপদ ডেকে আনবে, তাই বাকিগুলো ছাদের ওপরেই কোনোভাবে আটকিয়ে রাখল। ছ’টা টালি সরাতেই বারান্দায় নামার জায়গা হলো। দুই বিমের মধ্য দিয়ে কোনোরকমে বারান্দায় নেমে এলো। পতনের মৃদু শব্দটা গোপন থাকল না। দরজার দিকে এগুলো। পর্দা সরানোর আগেই কথাটা খেয়াল হলো যে, কারো ঘরে হঠাৎ ঢুকে পড়া ঠিক নয়। কিন্তু এখন মাথার ওপর বিপদ মেঘের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। সময় খুব কম। যে কোনো সময় তার অস্তিত্ব ফাঁস হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া ঘরটা অন্ধকার।

হঠাৎ করেই ঘরটা আলোকিত হলো। এক মুহূর্ত থমকে দাঁড়াল। তারপর এগিয়ে পর্দা সরিয়ে দরজা জুড়ে দাঁড়াল। সামনে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি নীচু করে ফেলল।

‘দুঃখিত, চোরের মতো ঢুকে পড়েছি।’ নিজেকে দ্রুত সামলে নিয়ে অত্যন্ত নীচু গলায় বলল ছেলেটি। মেয়েটির অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি বলল, ‘আমি আপনার কোনো ক্ষতি করতে আসিনি।’

‘আপনি…’ বলে কথা হারিয়ে ফেলল মেয়েটি। গলার আওয়াজ একটু উঁচুই হয়ে গেল। প্রমাদ গুনল ছেলেটি। মনে হলো শেষের বাক্যটি প্রথমে বলতে হতো।

‘বললাম তো, আপনার কোনো ক্ষতি করতে আসিনি।’ আবার বলল ছেলেটি। মেয়েটি এখন মুখ থেকে হাত সরিয়ে তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

‘বরং আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি।’ মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে তার অস্বস্তি লাগছে।

‘আপনি কি আমার সঙ্গে যাবেন?’ বলে জবাবের আশায় তার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল তার ক্ষতস্থানগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে সে। নীচের দিকে তাকাল। সে যে খালি গায়ে আছে এতক্ষণ ভুলেই ছিল। অস্বস্তি আরো বেড়ে গেল।

‘যাবেন?’ এবার তাকাল না তার দিকে।

এবারো জবাব না পেয়ে ‘ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি।’ বলে ঘুরে দাঁড়াতে গেল।

যেন এতক্ষণে বাস্তবে ফিরে এলো মেয়েটি। ‘দাঁড়ান।’ তবে এবার গলার আওয়াজ নীচু হলো। ঘুরে দাঁড়াল ছেলেটি।

আমি এখান থেকে পালাতে চাই।’ কাঁপা কাঁপা গলায় বলল মেয়েটি। ‘আপনার সঙ্গে যাব।’

‘তাহলে আসুন, এখানে দেরি করা নিরাপদ নয়।’ চাপা গলায় বলে ঘুরে দাঁড়াল ছেলেটি। যেদিক দিয়ে বারান্দায় নেমেছিল তার নীচে এসে দাঁড়াল। তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মেয়েটি। একটা সুগন্ধ ছেলেটির নাকে এসে লাগল।

‘আপনি ওপরের এই ফাঁক গলে বেরিয়ে গ্রিল ধরে ঝুলে লাফিয়ে নীচে নামতে পারবেন।’ ওপরের দিকে তাকিয়ে বলল ছেলেটি।

‘না। পড়ে হাত-পা ভাঙতে পারে’, ফ্যাকাসে গলায় বলল মেয়েটি।

‘তাহলে…’ বলে থামল ছেলেটি।

‘তাহলে কী?’ জিজ্ঞেস করল মেয়েটি।

কয়েক মুহূর্ত পর জবাব দিল, ‘তাহলে নীচে নামার একটা ব্যবস্থা করতে হয়।’ বলেই আর দাঁড়াল না। ঘরে ঢুকে পড়ল। প্রথমে বিছানার মখমলের দামি চাদর টেনে দুই টুকরো করে ফেলল। তারপর জানালা-দরজার পর্দা খুলে পরস্পরের সঙ্গে জোড়া দিয়ে টেনে দেখল, ছিঁড়বে কিনা। একটু দূরে দাঁড়িয়ে মেয়েটি ছেলেটির কাজ দেখছিল।

কাজ করতে করতে একটা ব্যাপার মাথায় ঢুকেছে। সেটা নিয়ে চিন্তা করারও সুযোগ পেয়েছে ছেলেটি। হাতের কাজ শেষ করে ছেলেটি ঘুরে দাঁড়াল মেয়েটির দিকে। নীচের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কি কোনো ধরনের পারফিউম ব্যবহার করেছেন?’

‘না।’

‘তাহলে আপনাকে আপনার পরনের কাপড়গুলো পাল্টাতে হবে।’

 

আমি ক্ষমাপ্রার্থী, পর্ব- ১ 

আমি ক্ষমাপ্রার্থী, পর্ব – ২ 

আমি ক্ষমাপ্রার্থী, পর্ব – ৩ 

আমি ক্ষমাপ্রার্থী, পর্ব – ৪ 

আমি ক্ষমাপ্রার্থী, পর্ব – ৬ 

আমি ক্ষমাপ্রার্থী, পর্ব – ৭ 

আমি ক্ষমাপ্রার্থী, পর্ব – ৮ 

আমি ক্ষমাপ্রার্থী, পর্ব – ৯

 

 

 

 

 

ঘোষণা- ‘আমি ক্ষমাপ্রার্থী’ উপন্যাসটির ১০ টি পর্ব শেষ হলে পুরো উপন্যাস থেকে একটি প্রশ্নোত্তর প্রতিযোগিতা হবে। অংশগ্রহণকারী পাঠকদের সর্বোচ্চ সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কৃত করা হবে।

-নির্বাহী সম্পাদক

 

জাকির আহমদ
Latest posts by জাকির আহমদ (see all)