ছোটবেলায় পড়েছিলাম ‘আজ ঈদ। মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ। পথে পথে শিশুদের কলরব। দলে দলে লোকজন ঈদগাহে চলেছে। তাদের গায়ে নানান রংয়ের পোশাক। বাতাসে আতর গোলাপের সুবাস।’ ঠিক যেভাবে আমাদের ছোটবেলায়ও আমরা নানান রঙের পোশাক পড়ে ঈদগাহে যেতাম।
আব্বা যখন নতুন জামা নিয়ে আসতো আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে যেন আলাদা একটা আগাম আনন্দ কাজ করতো। বিটকেল হতো কার জামা বেশি সুন্দর সেইটা যাচাই নিয়ে। বেশি ভাইবোন হওয়াতে একটা সুবিধা হলো খুনসুটি করে হলেও নতুন জামা লুকিয়ে রেখে ঈদের দিন সকালে কার আগে কে পরবে তার একটা প্রতিযোগিতা। অসুবিধে হলো পছন্দ করা নিয়ে মারামারি।
সবার ছোট হওয়ায় একটা বড় বেনিফিট হল সবার কাছ থেকে সহানুভূতিটা বেশি পাওয়া যায়। সেই ঈদ আনন্দ এখনও অনুভব করি। এখনও আষ্টেপৃষ্ঠে গভীর মমতায় স্মৃতিতে জড়িয়ে আছে। এবারের ঈদ গৃহবন্দি ঈদ। করোনাকালীন এই ভয়তাড়িত সময়ে মদিনার ঘরে ঘরে তথা সারা বিশ্বের ঘরে ঘরে শিশুদের সেই কলরব নেই। নেই রঙবেরঙের বাহারি পোশাকের আড়ম্বর। নেই ঈদগাহে যাওয়ার আনন্দ কোলাহল। মসজিদে মসজিদে দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় যেন আন্তরিকতার পরিবর্তে সন্দেহপ্রবণতার এক বিশাল আয়োজন।
শত ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কোলাকুলি-করমর্দন বিহীন এক নিষ্প্রাণ আবহ। একই সময়ে করোনার ভয়াল থাবার কোন কিনারা হতে না হতেই আম্ফান এসে হামলে পড়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে। বহুগ্রাম তলিয়ে যায় সেসব এলাকার রক্ষাকবচ আধাসুরক্ষিত বাঁধ ভেঙে।
অনেকগ্রামে ঈদের আনন্দ ধুয়েমুছে তলিয়ে যায় আম্ফান কাণ্ডে। আমরা দেখেছি সেইসব গ্রামবাসীর হাঁটু-কোমর পানিতে দলবেঁধে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ পড়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। যেন করোনা-আম্ফান কেন এর চেয়েও বড় কোন বিপদও তাদের কাছে নস্যি। ‘চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়’- আমরা পাকপরওয়ার দিগারের কাছে প্রার্থনা করি এই অবরুদ্ধ সময় এই আপতকালীন সমান যেন আর দীর্ঘায়িত না হয়। আবারও শিশুদের কলকাকলিতে ঈদগাহ মাঠ ভরে উঠুক।
স্কুল-কলেজ-মাদরাসা মসজিদ মন্দির মাঠ ময়দান আবার মুখরিত হয়ে উঠুক। পৃথিবী আবার বাসযোগ্য হয়ে উঠুক সব মানুষের, সব প্রাণের।
খলিল ইমতিয়াজ
কবি ও ছড়াকার, গাইবান্ধা।