মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

ঈদ কেমন কাটলো

হেলেন আরা সিডনী

২৮ মে, ২০২০ , ৪:৪০ অপরাহ্ণ

ঈদ কেমন কাটলো -হেলেন আরা সিডনী

শুকরিয়া বলতেই হয় কারণ চারদিকে এতো বিপর্যস্ততার ভিতরেও পবিত্র রমজান মাসের ত্রিশ রোজার পর ভয়ংকর মরণব্যাধী করোনার আতংক – দু:খ – কষ্টকে  বুকে নিয়েও আমরা ঘরে ঘরে ঈদানন্দকে যে যে ভাবে পেরেছি ভাগ্যবিধির শ্রেষ্ঠ উপহার মনে করে ঈদকে হাসি মুখে গ্রহণ করে নিয়েছি। এটাই লাখো শুকরিয়া…।

তবে হ্যাঁ, আমি ব্যক্তিগত অনুভূতিতে বলতে পারি – অব্যক্ত মনে একটা কষ্ট আমায় যেনো কুড়ে কুড়ে যন্ত্রণা দেয় সেটা দীর্ঘ বছর ধরে এই ঈদ সময়গুলোতে। এবার আরো বেশি আর সেটা অন্য মনে..অন্য নিঃসঙ্গতা / একাকিত্বের মানসিকতায় ঈদকে বুঝতে চেষ্টা করেছি। আহত ব্যথাগুলো চোখ জলে ফোঁটাফোঁটা হয়ে ঝরে পরে নি বললে মিথ্যে হবে। আমি যেখানে থাকি সেই জায়গাটা মেইন শ্বশুরবাড়ি ছিল যদিও সেটা আমি পরে আমার মতো করে ছোট্ট একটা এক চিলতে ঘর করে নিয়ে সেই বাসাটির নাম দিয়েছি শ্বশুর আব্বার নামে ‘ফজলার ম্যানসন’।

বিয়ের পর থেকে এই বাড়ির ঈদের নিয়ম দেখে এসেছিলাম রংপুরে অবস্হানরত যে যেখানে এই বাড়ির ছেলেরা থাক্ না কেনো সকলেই নিজ নিজ বাসায় গোসল সেরে এই বাসায় চলে আসতো এবং এক সঙ্গে নামাজ পড়তে যেতো। আবার ফিরে এসে এখানে খাওয়া – দাওয়ার আয়োজন পর্ব চলতো।

তখন আমরা ছিলাম পালপাড়া ভাড়া বাসায় এবং যথারীতি নিয়ম আমরাও মেনে চলতাম। একটা সময় সকলে গত হলেও আমি এই বাসায় যখন একাকিত্বের বসত শুরু করলাম তখনও সেই একই নিয়ম যথারীতি অটুট রাখলেন বড় ভাইয়েরা ( মানে ভাসুর-দেবর ) এবং ভাস্তারা। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী যতোটুকু ঈদ আপ্যায়ন করতে পেরে আমিও উচ্ছ্বসিত হতাম। এটাই আমার বড় প্রাপ্তি ছিল ঈদের দিনে। এবার সেই ভালোলাগা – আনন্দ থেকে এই বড় ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় থেকে বঞ্চিত হয়েছি বলে মনটা সত্যি খুব ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল।

রাস্তার বড় দরজা খুলে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম মাইকে নিজ নিজ নিরাপত্তা রেখে নিয়ম মেনে নিজ নিজ এলাকার মসজিদে নামাজ পড়ার আন্তরিক আহ্বান। সত্যি কিছু কিছু মানুষ সেই ডাকে সাড়া দিয়ে যখন মসজিদে যাচ্ছিল তখন আমার চোখে পানি আসছিল কারন সেই ছোট্ট বেলা থেকেই দেখেছি-বুঝেছি ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানে নতুন জামা, ঈদ মানে ঈদগাহ্ মাঠে নামাজ..বুকে বুক মেলানো কোলাকুলি, কোলাহল অথচ এবার কেমন যেনো নীরবতা – কেবলি ভয়। প্রহর গুণে গুণে মানসিক ভাবে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি যেনো। কিছু মানুষ মসজিদে গেছে। চোখে পানি নিয়ে শুকরিয়া জানাই অত:পর নামাজ পড়ে রাব্বুল আল আমিনের কাছে ক্ষমা চাই। ক্ষমা চাই সারা বিশ্ববাসীর জন্য। কেনো যেনো এবার ঈদ উপলক্ষ্যে কোনো আয়োজনের অনুভূতি অনুভব করি নি হয়তো মন কোন সাড়া দেয় নি। সেটা বুঝে আমার মেজোবোনের পুরো পরিবার এসে ঈদ আয়োজনের খাবার ভর্তি টিফিন ক্যারিয়ার আমার হাতে তুলে দিয়ে বুঝিয়ে গেলো- আজ ঈদের দিন। ওরা অনুভব করেছিল আমি কিছু করবো না।

সত্যি বলতে কি আমার ঈদেরা যেনো বহুদিন আগে নিলাম হয়ে গেছে কোথায় কোনো এক কষ্ট সময়ের কাছে। এবারের ঈদ যেনো আরো গভীর ভাবে হৃদয় নিঃসঙ্গ তেষ্টায় নিমজ্জিত হয়ে গেছে। যদিও দেশ-বিদেশ থেকে বোন, আত্মীয় – স্বজন, সাংগঠনিক আলীম স্যার, মনোয়ারা আপা সকলে যখন মোবাইলে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল মনটাতে তখন খুব ভালো লাগছিল। বাংলার বুকের চারদিক যেনো নির্জনতার দীর্ঘশ্বাসে গোপন তেষ্টায় কম্পিত হচ্ছিল। ২০২০ সালের করোনা নিষ্ঠুর যন্ত্রনা, ঝড়ের ভয়ংকরী আঘাত এমন দুঃসময় যেনো আর কোনোদিন না আসে…এই প্রার্থনা । জীবন ক্যানভাসে আজকের এই ঈদ সময়কে আমার অভিজ্ঞতার শব্দজালে বন্দী করার প্রয়াস বা সুযোগ পেলাম আকস্মিক ভাবে মুগ্ধতা ডট কমের আয়োজনে। অনেক কৃতজ্ঞতা আন্তরিক শুভেচ্ছা মুগ্ধতা ডট কম পরিবার। ঈদ মোবারক। সকলেই ভালো থাকুন…ঘরে থাকুন।

হেলেন আরা সিডনী
কবি, রংপুর।

হেলেন আরা সিডনী
Latest posts by হেলেন আরা সিডনী (see all)