১১ জুন রাতে শরীরটা ম্যাজম্যাজ করে উঠলো। কপালে হাত ঠেকিয়ে দেখলাম তাপমাত্রা বাড়েনি। কিন্তু জ্বরজ্বর অনুভূত হচ্ছিল। কিছুতেই ঘুম আসছিল না। এদিকে জেনে গেছি যে করোনাক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলাম। হার্টবিট বেড়ে গেল। কিছুতেই ঘুম আসছিল না। বারবার কপালে হাত ঠেকিয়ে দেখছিলাম জ্বর আসছে কিনা। মাঝরাতে উঠে একটা প্যারাসিটামল খেলাম। তারপর চোখ বন্ধ করলাম।
ঘুম না আসলেও আমার চোখ বন্ধ করে থাকার অভ্যাস। অনেক সময় এমন হয় যে ঘুম আসছে না; কিন্তু টানা ৬-৭ ঘণ্টা চোখ বন্ধ করে আছি। এতেও কিছুটা বিশ্রাম হয়। যাইহোক অস্থিরতা কাজ করছিল। বুঝতে পারছিলাম আমার শরীর যুদ্ধ করছে। ভয় হচ্ছিল সকালে উঠে যদি দেখি অনেক জ্বর।
কী করবো? আমি একাই থাকি। এর মধ্যে নাকের ডান ছিদ্র দিয়ে দু’তিনবার একফোঁটা করে পানি আসলো। সকালে উঠে দেখি- কোনো জ্বর নেই। একদম স্বাভাবিক লাগছে। পরদিন রাতেও একই ঘটনা। জ্বরজ্বর লাগছিল। সকালে উঠে আবার স্বাভাবিক। সেইদিন ৬-৭ টা হাঁচি হলো। আগেও আমার খুব হাঁচি হতো; বিশেষ করে ধুলা-বালিতে (রংপুরে প্রায় প্রতিদিন এন্টিহিস্টামিন খেতে হতো। বরং ঢাকায় এসে সমস্যাটা নাই বললে চলে)। এরপর একটা এন্টিহিস্টামিন খেলাম। তারপর কয়েকদিন একদম ভালো। করোনাকে মনে মনে বললাম, আসতেই যদি হয়- এভাবেই এসো।
১৬ জুন পরীক্ষা করালাম। আমি মোটামুটি প্রস্তুত যে পজিটিভ আসবে। কলিগরা কয়েকজন জানতো। তারা বললো, আরে কিছু হবে না। নেগেটিভ আসবে। প্রস্তুত থাকলেও যখন মেসেজটা আসলো, তখন বুকটা ধুক্ করে উঠল। কলিগদের ছাড়া কাউকে জানাইনি। এমনকি বাড়িতেও না। একটাই উদ্দেশ্য- জানলে বাড়িতে আব্বা-আম্মা টেনশন করবে। এমনিতেই আমার পিতা কী করে জিজ্ঞাসা করলে- ‘চিন্তা করে’ উত্তরটাই মাথায় আসে। ফেইসবুকেও জানাইনি। বাড়ির কেউ ফেইসবুকে না থাকলেও কে না জানে ফেইসবুক থেকে আমাদের বাড়ির দূরত্ব শূন্য কিলোমিটার। এছাড়া কোনো কোনো শুভাকাঙ্খীর উদ্বেগের বিষয় তো আছেই। মানসিকভাবে শক্ত ছিলাম। বরং কলিগরা সান্ত্বনা দিলেই একটু ভয় লাগত।
১৪ দিন কেটে গেল। একদম ভালো ছিলাম। বাড়তি কিছুই করিনি। কালোজিরার ভর্তা? আদা? মধু? গরম পানি? একটাও না। হ্যাঁ, কাঠালের বিচির ভর্তা খেয়েছি :)। আমার ফেভারিট। রং চা দুবেলা আগেও খেতাম। এক বন্ধু মধু খাওয়ার পরামর্শ দেয়ায় মধুবাবদ ৫০০ টাকা বিকাশে আদায় করেছি। আসলে আগে থেকে আপনার ইম্যুনিটি কেমন সেটাই বিবেচ্য। ওসব খেতে উৎসাহ বা বাধা কোনোটাই দিচ্ছি না।
আজ নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। স্বস্তির একটা খবর।
আমার অত্যন্ত কাছের এক ভাইয়ের ছেলে (আমার অত্যন্ত প্রিয়পাত্র) এরমধ্যে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এই বিষাদে এক সপ্তাহ থেকে মনটা আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কতো স্মৃতি মনে পড়ছে। এখনো মেনে নিতে পারছি না।
করোনায় ফিরে আসি। এতোসব বলার কারণ একটাই। মানসিকভাবে প্রস্তুত হোন। করোনার সংক্রমণ যে পর্যায়ে চলে গেছে তাতে আমাদের শুভঙ্করের ফাঁকিযুক্ত সতর্কতা এই ভাইরাসের দ্বৈরথে কুলিয়ে ওঠার মতো নয়। তবে সাবধানতা অবলম্বন তো করতেই হবে। আপনার যদি আগে থেকেই দীর্ঘমেয়াদী কিছু রোগ না থাকে, তাহলে অতোটা ভয় পাবেন না। আপনি জিতবেন।
সবাই ভালো থাকুক।
শাহেদুজ্জামান লিংকন
চিকিৎসক ও লেখক
জন্ম: কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট