নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা ত্রিশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এবং এই সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা সাত লাখ ছাড়িয়েছে। সরকারের তথ্যমতে বাংলাদেশে এই পর্যন্ত করোনা ভাইরাস রোগী ৪৮ জন আর মৃত্যুর সংখ্যা ৫, সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেন ১৫ জন। মরণব্যাধী এ রোগে গোটা দুনিয়া কাঁপছে। আতঙ্কিত বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এ রোগ হতে মুক্তি পেতে বিশ্বজুড়ে মানুষ এখন পালিয়ে নিজ গৃহে পরবাসী হয়ে আছে। করোনা তাণ্ডবে স্বেচ্ছায় বেকারত্ব বরণ করছে অগণিত মানুষ। পৃথিবী জুড়েই মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এই যখন অবস্থা তখন আমার এই দীর্ঘ লেখাটির বিষয় ‘ডায়াবেটিস’। করোনা ঝুঁকিতে একধাপ এগিয়ে আছে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, কিডনির সমস্যা এসব রোগীরা । আমি নিজেও একজন ডায়াবেটিস রোগী, যার বয়স এখন কুড়ি বছরের কাছাকাছি। সঙ্গত কারণে এই মহামারী আকারের রোগে আমার ভয়টাও একটি বেশি। তবে স্বস্তির বিষয় হলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমি পুরোপুরি সক্ষম হয়েছি কোনো প্রকার ইনসুলিন কিংবা ওষুধ ছাড়াই (আলহামদুলিল্লাহ)। ডায়াবেটিস মানে বিরাট অসুখ, ডায়াবেটিস মানে সব শেষ এমন ধারণা যারা করেন তাঁদের প্রতি আমার অনুরোধ, আমার এই লেখার পরের পর্বটি পড়বার জন্য।
৩০ মার্চ ২০২০ খ্রি.
২.
(ভাতের প্লেটে সবজি- সবজির বাটিতে ভাত)
দু’হাজার সালের মাঝামাঝি। শারীরিক অসুবিধার কারণে ঢাকায় ল্যাব এইড- এ নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ আজহারুল হকের শরণাপন্ন হলাম। আমার পেশাগত কারণে তাঁর সাথে আমার সম্পর্কটা বেশ ভালো ছিল।
বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেল সবই নরমাল, শুধু রক্তে সুগারের মাত্রা অনেক বেশি। ৩৬৩ (২০.১৬) । মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার দশা। এত ডায়াবেটিস ! শরীর থেকে বেরিয়ে আসছে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম। মনে হলো সব শেষ । আমার নার্ভাসনেস দেখে ডাক্তার আজহারুল হক হাসছেন আর বলছেন ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তিনি কমেট-৫০০ খেতে বললেন এবং পরবর্তীতে রংপুরে ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. লাইক আহমেদ স্যারের সাথে দেখা করতে বললেন। কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলার কথা বলে আমাকে আশ্বস্ত করে বিদায় দিলেন।
পরদিনই আমি ডাঃ লাইক আহমেদ স্যারের সাথে দেখা করলে উনিও একই কথা বলে সাতদিন পর আবার পরীক্ষা করে দেখা করতে বললেন। বিশেষ জোর দিলেন ব্যায়াম ( রাস্তা হাঁটা), কম খাওয়া, মিষ্টি বর্জন ইত্যাদি। শুরু হলো ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জিং অভিযান। খাদ্য তালিকা থেকে বিদায় দিলাম আমার লোভনীয় অনেক খাবার।
পরিবর্তন আনলাম খাদ্যাভ্যাসে। সকালে রাতে দুটো করে রুটি, দুপুরে তিন কাপ পরিমাণ ভাত। ভাতের পেট ভরালাম সব্জি দিয়ে। ছেড়ে দিলাম চিরদিনের জন্য চিনি-মিষ্টি।
দ্বিতীয় এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রতিদিন একবেলা করে হাঁটতে শুরু করলাম। এক ঘন্টায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। প্রথম প্রথম অসুবিধা লাগলেও পরবর্তীতে সেটি নেশায় পরিনত হলো। মোটামুটি এভাবে চলতে চলতে ঠিক এক মাস ২৭ দিনের মাথায় আমার ব্লাড সুগার নেমে এলো মাত্র ৯০ (৫)-এ । অবশ্য এর মধ্যে আরও কয়েকবার ডাক্তারের কাছে গিয়েছি এবং পরীক্ষা করে দেখেছি। প্রতিবারই রিপোর্ট নরমালের দিকে আসছিল। জানিয়ে রাখি, ঠিক ১০ দিনের মাথায় আমার ওষুধ বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। এবং একমাস সতের দিন পর যখন আমার ব্লাড সুগার ৯০-এ নেমে এলো তখন ডাক্তার লায়েক আহমেদ স্যার যে কথাটি আমাকে বলেছেন সেটি এখনও খুব মনে পড়ে,তাহলো- ” আপনি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য একটি উদাহরণ হতে পারেন যে, কোনো ওষুধ ছাড়াই শুধু রাস্তা হেঁটে এবং কম খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়”।
বিজ্ঞাপন
সেই থেকে আজ অবধি প্রায় কুড়ি বছর ধরে চেষ্টা করছি নিয়ম মাফিক চলতে। এই লম্বা সময়ে যে পরিমাণ রাস্তা হেঁটেছি (যদি ঝড় বৃষ্টি, ব্যস্ততা, অসুস্থতা, আপদ বিপদ, ইত্যাদি বাদ দিলেও) কমপক্ষে ২০০০০ (কুড়ি হাজার) কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার সমান হবে যা ঘন্টার হিসেবে ছয় হাজার ঘন্টারও বেশি হবে।
ডায়াবেটিসের সাথে এই দীর্ঘ সময়ে বসবাসের মধ্যে আমার মনে হয়েছে একটু বেশি খেলেও আমার সুগার বাড়ে না কিন্তু ক’দিন না হাঁটলেই বেড়ে যায়। নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই সুগার বেড়ে যায়। আরেকটি কথা প্রথম একমাস সাতাশ দিনে আমার শরীরের ওজন ৮৬ কেজি থেকে ৭২ কেজিতে আনতে সক্ষম হই ।
মোট কথা আমরা যারা নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস নিয়ে চলাফেরা করি “আমাদের হাঁটার কোনো বিকল্প নেই”
ভালো থাকুন সকলে। আমার মামা প্রায়ই বলতেন, বেশি খাবি ? তো কম খা।
০১ এপ্রিল ২০২০ খ্রি.