গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ কিশোরগঞ্জ-তারাগঞ্জ সড়কে চলন্ত অবস্থায় স্লিপ খেয়ে নিজের বাইক উল্টে আমার ডান পায়ের উপরে পড়লো, মাথাটা পড়লো পাকা রাস্তায়।
হেলমেট থাকায় মাথা বেঁচে গেলেও ডান পায়ের হাঁটু এবং পাতা থেতলে গেল।
তো পা যখন গাড়ির নিচে তখন আমি মোটামুটি সঙ্গনিরোধে পড়ে গেলাম।
রাস্তায় শুয়ে আছি কোন গাড়ি থামে না, কেউ কেউ যেতে মন্তব্য ছুঁড়ে চলে যাচ্ছে ।
একজনের মন্তব্য শোনা গেল-হুজুরের এই অবস্থা! (মুখে দাড়ি থাকলে একটা তাচ্ছিল্যের টোনে হুজুর ডাকার প্রবণতা আছে)। দূরের ক্ষেতে কাজ করতে থাকা এক মহিলা তখন চিৎকার করে বলছে- মানুষটাকে কেউ বাঁচান, কেউ বাঁচান! এই সময়ে খেয়াল করে দেখি, এক তরুণ তার বাইক থামিয়ে পেছনের দিকে এসে আমাকে সাহায্য করতে লেগে গেল।
প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল পায়ে। মানুষের রক্তক্ষরণ আমার সহ্য হয় না।
ফলে রক্ত দেখে আমার বিমবিষা হয়ে গেল আর মাথা ঘুরতে থাকলো। সেই তরুণ তখন আমার অনুরোধমতে টিস্যু চাপা দিয়ে রুমাল দিয়ে পা বেঁধে দিলো। বাইকটা তুলে দিল।
পরে আবার ঘাসের মধ্যে শুয়ে পড়লাম। মাথার কাছ দিয়ে সাঁই সাঁই করে বাইক, অটো চলছে।
কাজেই আহত হয়ে পড়ে থাকাটা মনে হলো নিহত হবার পূর্ব প্রস্তুতি। তরুণকে বললাম আপনি এখন চলে যান ধন্যবাদ। সে যায় না। একা ফেলে যাবে না।
তার নাম জানলাম, পরিতোষ। চিৎকার করা সেই গ্রামীণ মহিলাও হিন্দু।
আর আমি হলাম দাড়িসমেত মুসলমান! এভাবে আমি একটি অসাম্প্রদায়িক সড়ক দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার হলাম।
বুঝলাম, মানুষের ভেতরটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এখনো মানুষ।
পরে স্থানীয় বন্ধু গোলাম রব্বানীর সহায়তায় এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে ক্ষতস্থানে সেলাই-শুশ্রূষাদি সেরে বহু কষ্টে বাসায় পৌঁছেছি। এখন চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সত্যিকারের সঙ্গনিরোধে আছি
[যেহেতু ইচ্ছা বা দরকার থাকলেও প্রচণ্ড ব্যথার চোটে নড়তে পারছি না]!