মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

এলো আবার চলেও গেল 

মুগ্ধতা.কম

২৯ মে, ২০২০ , ৯:২৬ অপরাহ্ণ ;

ঈদ এলো আবার চলেও গেল 

ঈদ চলে গেল। যেহেতু সে এসেছিল তাই চলে যাওয়াই স্বাভাবিক। যে আসে সেই তো চলে যায়, নাকি? এই ধরেন শনিবার আসে এবং চলে যায়, এপ্রিল আসে এবং চলে যায়। মানুষ আসে আবার চলে যায়। আসে নতুন মানুষ। ঠিক তেমনি ঈদ এসেছিল।

ঈদ যে এসেছিল এটা আমি বুঝতে পারছি। কেমনে? আরে ভাই আমি তো অপেক্ষায় ছিলাম ঈদের। এই ধরেন একেকটা দিন রোজা যায় আর আমি হিসাব করি আর কবে থেকে রোজা থাকতে হবে না। না খেয়ে থাকাটা বড়ই কষ্টের। তারচেয়েও বড় কষ্ট নাকে খাবারের গন্ধ, চোখে খাবার ঝুলছে কিন্তু আমি টুপ করে খাবার মুখে পুরতে পারছি না। গোসলে ট্যাপ ছেড়ে পানি দিয়ে গোসল করছি। পানি মাথা হয়ে চুল গড়িয়ে মুখে আসছে। গিলতে পারছি না। গিললে কী হয়? কেউ তো আর দেখছে না।

দু ঢোক মেরে দিয়ে মাথা মুছতে-মুছতে বের হলে কে টের পায়? তারপরও ঢোক গেলা হয় না। ঐ যে, ইস্ এতক্ষণ থাকলাম আর কিছুক্ষণ হলেই তো ইফতার। মাখিয়ে খাওয়া যাবে। এই দিন দিন না, এই দিনেরে নিব আমি ইফতারির কালে। কীসের সংযম? খেয়ে নে বাবা। বড় কষ্ট গেছে সারাদিন। তো ঊনত্রিশে এসে ইতস্তত।

কাল কি ঈদ? নাকি তিরিশে? মন চায় ঊনত্রিশেই হোক। তা আর হলো কই? পুরো ৩০ টা রোজা শেষ করেই ঈদ এলো,বলে কয়ে। কোন চমক নাই। রাগে আকাশের দিকে আর তাকাই নাই পর্যন্ত। চাঁদ বাঁকা হোক, গোল হোক আমার কী? কাল ঈদ। ঈদ মাঠে পড়া অভ্যাস। কয়েকবার যে মসজিদে নামাজ পড়ি নাই তা কিন্তু না।

একবার ঈদগাঁ মাঠে বৃষ্টি শুরু হলো। সেবার নামাজ মসজিদে হলো। ময়দানে নামাজ পড়ার একবার অভ্যাস হলে আর বদ্ধ ঘরে নামাজ পড়তে ইচ্ছে করে না। পড়াশুনার কারনে একবার- দুবার ঢাকায় ঈদ করতে হয়েছিল।

আমি খোঁজ করতাম ঈদগাঁ। তো মোহাম্মদপুরে একটা পাওয়া গেল। পাশে তাকিয়ে দেখি অভিনেতা নাদের চৌধুরী । আরে ঐ যে নাটক বারো রকম মানুষ করেছিল। একটু পরপর তারদিকে দৃষ্টি চলে যাচ্ছিল। যা হয় আর কি! রংপুরে এসবের বালাই নাই। সবাই আমজনতা। কেউ কাউরে বিশেষ পাত্তা দেয় না। পাজামা-পাঞ্জাবি পড়ে নামাজ পড়তে গেলাম ইসলামবাগ জামে মসজিদ। দুইহাত দূরে-দূরে দাঁড়িয়ে নামাজ।

ছোটবেলায় হুজুর বলছিল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ পড়বি, নাহলে শয়তান ঐ ফাঁকে ঢুকে যাবে। আমি দুইহাত দূরত্বে কয়টা শয়তান ঢুকে গেল তাই ভাবছি। নামাজ শেষ, আমার এবার অস্বস্তি কম। কোলাকুলি নিয়েও আমার কনফিউশন। প্রথমে ডানে নাকি প্রথমে বামে। প্যাঁচ খেয়ে যায়। এক্ষেত্রে আমি যা করতাম নিজেকে ছেড়ে দিতাম যে আমার সাথে কোলাকুলি করতে আসছে তার হাতে। সে আমাকে নড়াচড়া করে কোলাকুলি পর্ব শেষ করতো।

এবার সেসবের বালাই নাই। নামাজ পড়ে বাড়িতে ফেরত তারপর খাওয়া আর খাওয়া। খেয়ে ঘুম। বিকালে উঠে মনে হলো, এই যা চলে গেল!

ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ
লেখক ও চিকিৎসক
রংপুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *