আজ যে যুগে বাস করছি, সেটাকে তথ্য ও সংবাদের যুগ বললে অত্যুক্তি হবে না। তথ্য ও খবর কোনও শ্রেণিবিশেষেরও কুক্ষিগত নয়। অন্তত সাধারণ তথ্য ও খবর এখন রীতিমতাে সার্বজনীন। তাই আমাদের জানতে দেরি হয়নি গত ডিসেম্বরে সুদূর চীন দেশের হুবেই প্রদেশের উহান শিল্প-শহরে কী ভয়ানক কাণ্ড ঘটেছিল।
তাদের সরকারের প্রাথমিক গাফিলতির কারণে করােনা ভাইরাস কীভাবে ওই দেশময় ছড়িয়ে পড়েছিল। বিপদটাকে চীনের একার ভেবে যারা উটপাখির মতাে বালিতে মুখ গুঁজে ছিল, ভুল ভাঙতে দেরি হয়নি তাদেরও।
পরিতাপের সঙ্গে এটাও দেখা গেল যে, কোভিড-১৯ এমন একটা রােগ যে ভুলের মাশুল আদায় করে নেয় কড়ায়-গণ্ডায়, সুদে-আসলে। করােনার খাতায় সুদের হিসেবটা আবার কষা হয় গুণােত্তর প্রগতির (জিপি) নিয়মে।
গণিতের জটিলতা ছেড়েও অনুমান করা যায় যে বিপদটা ১ থেকে ১১, তার থেকে ১১১, তার থেকে ১১১১. হতে দীর্ঘ সময় নেয় না। রােগটা মাত্র দু-আড়াই মাসের ভিতরে ছুঁয়ে ফেলেছে এই গ্রহের প্রায় সবকটি অঞ্চল ও দেশকে।
এখন পর্যন্ত আক্রান্ত দেশের সংখ্যা ১৯০! আক্রান্ত নরনারীর সংখ্যা প্রায় চার লক্ষ।
মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে সাড়ে ১৬ হাজার! সুখবর এই যে, চীন অনেকটাই সামলে উঠেছে।
আপাতত লকডাউনের মাধ্যমে সামাজিক ব্যবধান বা দূরত্ব তৈরি করে নেওয়াই সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ। বস্তুত আমাদের সরকারের সময়ের সিদ্ধান্ত সময়ে নেয়ার জন্য স্বাগত। আরও স্বস্তির বিষয় হল, মাঠে সেনাবাহিনী।
সকল ধরনের বিমান এবং দূরপাল্লার ট্রেন ও বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত আমাদের দেশে করােনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৯। এ জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী।
আমরা এই ভাইরাসটিকে একেবারে আমলে নিচ্ছি না। আর এর কারণে কী ভয়াবহ ভাবে ছড়াবে এই মহামারি টা আমরা কল্পনা করতে পারছি না। বিপন্মুক্ত হওয়ার, ঘুরে দাঁড়াবার এখনও সময় আছে। এই সুবর্ণ সুযােগ আমরা একজনও নষ্ট না-করি যেন। এটাই আমাদের প্রতি হওয়া দরকার।
ছিদ্রান্বেষণের রাজনীতি নয়। গুজবে কান নয়। কুসংস্কারে মন দেওয়া নয়। শুধু সরকারের স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্দেশিকাগুলিই আমরা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলব। আর অবশ্য করে মানব লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা। না মানলে গ্রেপ্তার, জেল ও জরিমানার অপ্রীতিকর ব্যবস্থা আছেই। কিন্তু সরকারকে তেমন পদক্ষেপে বাধ্য করাটাও সমীচীন নয়।
এ লজ্জা আমার আপনার আমাদের সকলের। বিপদটা তাতেই অবশ্য সীমায়িত হবে না। বিপদের অনেক আশঙ্কাও ব্যক্ত হয়ে উঠতে পারে। তাই আসুন, আমরা সকলে সকলের সঙ্গে দৈহিক দূরত্ব গড়ে তােলার মাধ্যমে আত্মিক ঐক্য স্থাপনের এক অনন্য নজির গড়ে তুলি।
কলেরা, প্লেগ, গুটি বসন্ত (স্মল পক্স), পােলিও-সহ অনেক কঠিন রােগের বিরুদ্ধে আমরা লড়েছি এবং জিতেছি, বীরের মতােই। এত জয়ের ইতিহাসকে সামনে রেখেই আমাদের এই লড়াইটাও চালিয়ে যেতে হবে, যে-যুদ্ধের শেষে মানুষের পক্ষে জয়’ ছাড়া আর কিছুই লেখা দেখতে পাচ্ছি না আমরা।
পল্লব শাহরিয়ার
উদ্যোক্তা ও লেখক