কবিতার সাথে পরিচয় ঘটেছিলো আবৃত্তি শুনতে শুনতে। আবৃত্তি চর্চা করতে গিয়েই। ছোটোবেলায় ছড়া লিখতে শুরু করি। তারপর ধীরে ধীরে গদ্য কবিতাও। আমি বেড়ে উঠি সেই সাথে বেড়ে ওঠে লিখবার ইচ্ছেরা। সকল ধরনের সাহিত্য ভালোবাসি তবে একটু বেশিই ভালোবাসি কবিতা। কবিতায় জীবন, প্রেম, স্বদেশ, একাকীত্ব,বোধের গভীরের সবটুকুই যেনো ফুটিয়ে তোলা যায়।
মধ্যরাতে জেগে ওঠে আমদমার শব্দ সন্তানেরা। তারা একসাথে হতে চায়, কিছু বলতে চায়। প্রতিনিয়ত খচখচিয়ে জানান দেয়, লিখো , লিখো। ভুমিষ্ঠ হয় যেনো সন্তান। সেই সন্তানইতো কবিতা।
কোমল জ্যোৎস্নার ঢলে পড়া আলোয়
জেগে থাকে গভীর প্রত্যাশা,
হু হু করা বুকের অতলে পিপাসিত মন
ভরবেই একদিন।
নিবিড় মগ্নতায় আমিও চেয়ে,
উড়ে যায় বকপাখি মেঘেদের কোলে।
রাতের হিমঝরা কুয়াশা যখন নামে ছায়ার মতো-
তখনো জেগে থাকি ঠিক।
প্রকৃতির শূন্যপিঠে এক্কাদোক্কা খেলে
টুপটাপ শিশির ফোঁটা।
ডেকে ওঠে অজানা পাখি,
তার শিষে লুকিয়ে থাকে গোপন প্রণয়।
জেগে থাকি অনন্তকাল নিযুত তপস্যায়,
সৃষ্টি হবে আলোর পৃথিবী।
ভরে যাবে তৃষিত বুক,
হৃদ অমলিনে ঝরে পড়া জোছনায় –
অন্ধডানার বিচ্ছেদের অপেক্ষায়।
কোনো দুর্দিন, দুঃশাসন অন্তহীন নয়।
কেনো পরতে পরতে দুঃশাসন?
কোনোভাবেই তা খোলে না!
বস্ত্রহরণের সময় যেমন অশেষ হয়েছিলো দ্রৌপদির শাড়ি-
অনাচারের গতি ঠিক দ্রৌপদির শাড়ির মতো পরতে পরতে সুদীর্ঘ হয়।
যদি হই অশান্ত ধবল মেঘ-
ভাসতে ভাসতে ঠিক তোমার উঠানে যাই?
অথবা ধবল জোছনা হয়ে আছড়ে পড়ি তোমার কপালে-
একে কি বিরহ বলে কেউ?
তুমিতো দূর থেকে দূরে যাও চলে-
আমি তাই হয়ে যাই কোমল রোদ,
তুমি যদি স্বপ্নডানায় ভর করে ভাসো ওই নীলে,-
অথবা বৃষ্টিবেলায় স্নান করো অকারণ রাজহাঁস-
আমিতো বৃষ্টিবিন্দু হয়ে ছুঁয়ে দেই।
বসন্ত এসে ফিরে ফিরে যায়-
সব কাজ শেষে পাখিরাও ঘরে ফেরে।
তোমার উঠোনে তবুও আছড়ে পড়ি।
শীতের রুক্ষ প্রকৃতির মতো পাঁজর ভাঙে,
ম্লান হয়ে যায় সব আলো-
পাখিরাও সাঁঝবেলা আপন আলয়ে আসে।
তোমার আধার উঠানে যদি পিছলে না পড়ে ধবল জোছনা,
পাখিদের তাতে যায় আসেনা।
তুমি কি একে বিরহ বলবে?
দিনের বেলা মানুষ সব ভুলে যায়
যন্ত্রণা, ক্ষোভ, শোক,
নাগরিক পথ হাঁটতে গিয়ে ভুলে থাকে
তীব্র দহন কিংবা পোড় খাওয়া মন
কালবোশেখির মাতম।
রাতে জেগে ওঠে কষ্টের মিছিল
শোকের স্তবক, দুঃখরাজি-
বেঁচে থাকা অর্থহীন মনে হয়
প্রাণবায়ু খাঁচা ছেড়ে যেতে চায়-
যায় না।
বুকের ভেতরে ব্যথার আড়ালে ব্যথা
গাঢ় হয়
রাতে জেগে ওঠে –
দিনের আলোয় যা আড়াল তার সবটুকু
নিকষ আঁধারে এসে ভীড় জমায়।
মধ্যরাত্রিতে বুকে বেজে ওঠে ব্যথার করুণ বাঁশরী,
দিনের আলোয় যান্ত্রিক সভ্যতায় নাগরিকপথ হাঁটি।
মানুষ দিনের বেলা সব ভুলে যায়, সব-
রাতের গভীরে জেগে ওঠে
প্রিয়জনের স্বেচ্ছায় রচিত ইতিহাস!!
ভুল বুঝলেই –
শব্দরাজি নিঃশেষ হয়ে যায়।
নির্বাচিত কবিতা ভুলে
হৃদয়ে ওঠে শোকের স্তবক।
অবিশ্বাস করলেই-
বুকের গভীরে চিতা জ্বলে।
দূরত্ব হয়ে যায়-
যোজন যোজন দূরের।