১.
আমি জুতোর ভিতরে কপি করে রেখেছি
আমার সুখের নকশাগুলি
বহুদিন জুতো পালিশ করি না
আসলে আমি তো আর জুতোই পরি না
বরং কিছু অসুখের ছবি আঁকি
সাদা কফিনের ভিতর কালো অসুখ;
আজ আমি পুরনো চিঠির ভাজ খুলেছি
চিঠির অভিমানগুলো আত্মস্থ করছি আর ভাবছি
আর কোনোদিন চিঠি লিখবো না
বরং কিছু অসুখ লিখে পোস্ট করবো
লাল ডাকবক্সের ভিতর কালো অসুখ;
তোমার নামেরও কি অসুখ হয়েছে
তোমার নাম লেখা মেহগনি গাছটিরও
কিছু শুকনো মেহগনি পাতা রেখে দিয়েছি
হয়তো আমারও অসুখ হবে
তাতে আমার অসুখের শিরোনাম লিখে
জুতোর ভিতর কপি করে রেখে দিবো।
গল্প: একসময় আমি প্রাইভেট স্কুলে চাকরি করতাম। তখন প্রতিদিন জুতো পরে স্কুলে যেতে হতো। জুতো পরে না যাওয়া মানে শাস্তিযোগ্য অপরাধের মতো ছিলো। আমি পরে এমপিওভূক্ত স্কুলে চাকরি নিই। জুতো পরার কোনো বালাই নেই। অনেকদিন জুতো পরা হয় না। হঠাৎ একদিন জুতো পরতে যাবো, দেখি জুতো ধুলোয় ভর্তি। পরে পুরোনো প্রাইভেট স্কুলের কথা মনে পড়ে এবং কবিতা মাথায় আসে।
২.
তার চোখে চোখ রেখে আমি পাখির অভিধান খুঁজছি
অথচ আমার চোখেই বাস করে এক দানব পাখি
আমি এক পুরনো বিকেলে ফিরে যাই
যে বিকেল আমাকে একটি পাখির কথা মনে করিয়ে দেয়
সে বিকেল আজ ধ্বংসের আগুনে ভস্মিভূত
আমি একে একে পুড়তে দেখছি পাখির পালক
তার কন্ঠস্বর এবং আমার বেদনার বজ্রপাত
সব ঋণ শোধ করে আমিও পুড়বো দেবানলে
আমার ছাইগুলো পুঞ্জিভুত হয়ে রাজটিকা দিবে
সাক্ষীর স্বাক্ষরে লিখিত হবে মৃত্যুও এক ধরনের ছলনা
গল্প: আমি একদিন রংপুর কাচারিবাজারে বসে আছি। হঠাৎ একজন লোক একটি শব্দের অর্থ খুঁজতে ‘অভিধান’ শব্দটি ব্যবহার করে। আমি ডিকশনারি শুনতে শুনতে অভ্যস্ত। হঠাৎ করে অভিধান শব্দটি শুনে মনে হলো এই শব্দটি কবিতায় ব্যবহার করলে তো দারুণ হবে!
৩.
আমার আহত হাতে অন্য হাত রেখে ভাবি
চামড়ার মলাট মর্মভেদ করে এ হৃদয়ে
একটি শুকনো পাতার ভরাডুবি
নৌকোর গল্প করতে করতে মৃত্যুর গল্প করে
কখনো কখনো মৃত্যু অনেক সহজ
সাদা কাগজে কিছু আত্মস্বীকৃত কথা লিখেও কেউ মরে যেতে পারে সহজে
অথচ আমার একদম মরতে ইচ্ছে করে না
মরার মতো সব উপকরণ সাজিয়ে ভাবি
বেঁচে থাকাটাই ধ্রুব সত্য
হয়তোবা খড়কুটো শুকিয়ে যাবে
তবুও তো কুটিরের কৃচ্ছতা দূর করে
জোছনায় মোড়ানো স্বর্ণ হয়ে রবে।
গল্প: আমি মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করি। হাতের চামড়া ছিলে যায়। বাসায় শুয়ে থাকা ছাড়া কোনো কাজ নেই। তখন আমার আহত হাত নিয়ে কবিতা মাথায় আসে।
৪.
নিজেকে বার বার অন্ধকারে রেখেছি
তুমি তাতে আলোর নকশা রেখে অংক কষেছো
কিন্তু কিছুতেই হিসাব মেলাতো পারোনি
বরং বার বার ব্যর্থ হয়ে কেটেছো আমায়
এখন আমি শুধু কালো কালির সমাহার
মুছে ফেলেছি নিজের মুদ্রিত অস্তিত্বকে
বরং অন্ধকারেই বাস করা শিখছি।
গল্প: এক রাতে আমি এক সাবলেটে বাতি নিভিয়ে শুয়ে আছি। দরজা খোলাই ছিলো। হঠাৎ পাশের বাসার প্রতিবেশিনী লাইট জ্বালায়। এতে দেয়ালে এক ধরনের আলো ছায়ার রেখা তৈরি হয়। তারপর মাথায় এ কবিতাটি আসে।