কবিতা কী? এই প্রশ্নের উত্তরে কেউ বলে থাকেন, কবিতা নারীর মতো। যারপরতে পরতে রহস্য। আবার কেউ বলেন, কবিতা পথিকের পথ চলা সদৃশ। পথিক ক্লান্ত না-হওয়া অবধি একটি কবিতা। এভাবে কবিতা নানাভাবে সংজ্ঞায়িত হয়ে আসছে। আমি বলি, কবিতা হলো একটি নদীর বয়ে চলা। একে আপনি চাইলেই থামিয়ে দিতে পারেন না; হয়তো কাল-পাত্র ভেদে পরিচয় বদলাতে পারেন। তবে, কবিতা শেষ পর্যন্ত কবিতাই, একে সংজ্ঞায়িত করা বৃথা।
আমার নিত্যকার ব্যথাঘরে ধোঁয়ার কুণ্ডলীর ভেতরে বিরস বদনে মা—
নিভে যাওয়া চুলোর আগুনে বাঁশের চোঙ, অবিরাম ফুঁ দিয়ে জ্বালাবার প্রচেষ্টা।
বাবার ম্যাজম্যাজে শরীর, ওয়াশিং পাউডার, ময়লা বসন—
রসুইঘর, দ্বি-প্রহর অন্তর সাজানো খাবার টেবিল, এঁটো বাসন—
পুনঃপুন চিত্রায়িত এইসব আহত দৃশ্য আমার ভালো লাগে না।
পুনঃপুন চিত্রায়িত এইসব আহত দৃশ্য আমার ভালো লাগে না।
পুনঃপুন চিত্রায়িত এইসব আহত দৃশ্য আমার ভালো লাগে না।
আমার ভালো না লাগা চোখে মায়ের আচল, দুঃখ-সুখের ঘোর—
‘সব ঘোর শেষে স্মিত হেসে এই সময় শেষ হবে অতিসত্বর!’
রেলগেটের কাছে কোনোও হলুদ ভ্যান চোখে পড়ে কি না—দূর থেকে তাকাই। চোখে পড়লে এগিয়ে যাই। এগিয়ে যেতে যেতে ভ্যানের হলুদগুলো পাকা কলা হয়ে যায়। এক হালি বারো টাকা। ‘আট টাকায় দেয়া যাবে?’—দরদাম করি। ‘আট টাকায় কিনতেও পারিনি’—বিক্রেতা অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করেন। শেষমেশ দশ টাকায় একহালি কিনে ফেলি।
ফেরার পথে ভাবি—ভ্যানের কলার মতো করে নিজেকে বিক্রি করে দেবো। কিন্তু কত দামে বিক্রি করবো? কত দামেই বা নিজেকে কিনেছিলাম? নির্ধারণ করতে পারি না নিজের দাম।
ধরো, এখন বর্ষাকাল। ধরো, তুমুল মেঘে বৃষ্টি নামালাম
ধরো, এমনতর বৃষ্টি দেখে নিজেই শেষে থমকে দাঁড়ালাম!
দাঁড়ালাম তো দাঁড়ালাম, যেনো উদ্ভিদ— এক পা নড়ে না
আমাকে রোপণ করো, বৃষ্টিদিনে রোপিত উদ্ভিদ মরে না!
না মরে থাকছি ধরো—থাকছি তোমার বুকের কাছে খুব
মেঘ জমেছে? বৃষ্টিনামা আকাশ ধরো—ভিজতে উন্মুখ!
উঠোন ধরো—পুকুর ধরো কিংবা অপার খোলা মাঠ
ভিজছে? ভিজুক চুল, ভিজুক ফুল—ভিজুক তোমার তল্লাট!
চাঁদটা প্রায় শ্যালক সম্বন্ধের দিকে—
সমবয়সী পাড়াতো মেয়েটি খেলাঘর ভেঙে ঘর বেঁধেছে দ্বিধার—
সহস্র স্বপ্নের দুইটা চোখ দিগ্বিদিক তাকাতে তাকাতে হাওয়া!
রূপকথার রূপসী রাজকন্যারা বনবাসকাল পেরুতে পেরুতে
কবে কোন বৃক্ষ হয়ে ছুঁতে গেছে আকাশ।
পায়রা পোষা প্রহর, ঘুম কাড়া বাকবাকুম
অনিবার্য সুখসঙ্গীত শুনিয়েছে কতকাল—
উড়ে গেছে সব উড়িয়ে নিয়ে
সঙ্গে, অনুষঙ্গে…
সমস্ত আকাশ নীল হওয়া শেষে
সমস্ত সময় লীন হওয়া শেষে
আর কোনও গল্প থাকে না নিশ্চয়
ঘড়ির সাথে সখ্যতা গড়ছি ইদানীং
উদ্ধার করা যায় যদি কিছু সময়।
প্রত্যহ ঘুম ভেঙে ভেঙে প্রতিটি সকাল
যেভাবে বেঁচে থাকে
সেভাবে বাঁচিয়ে রাখছি—
বাঁচিয়ে রাখছি খুব!
বয়সের পঞ্জিকা যেভাবে নিয়ে যায়
ক্রমশ মৃত্যুর দিকে
সেভাবে খুন করছি—
মন্থর মোশনে।
এই অতি কিংবা নাতিদীর্ঘ পথকে
এই বিবিধ ব্যঞ্জনার বায়োস্কোপকে
কোন নামে পরিচয় দিচ্ছি—
সুখ নাকি শোক?
তৃপ্তি নাকি তৃষ্ণা?
শিস খন্দকার
জন্ম : ১৬ মে, ১৯৯৫ খ্রি. রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে ফকিরবাড়িতে।
প্রকাশিত গ্রন্থ : আয়নায় অলীক সঙ্গম (২০১৭)
শখ : ভ্রমণ।