রাজিয়া সুলতানা আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি লেখক। তিনি সেখানকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে পরিবারসহ বসবাস করছেন এবং সেখানে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের দুঃসহ সময়ে লকডাউনে থাকাকালীন তিনি লিখছেন তাঁর সেইসব অভিজ্ঞতার কথা।
মেয়ে ক্যাম্পাস থেকে বাড়ি ফেরার কথা শনিবারে। কিন্তু এখন সে ভয় পাচ্ছে। বলছে -‘আম্মু, মঙ্গলবারে আসি যদি তাইলে আমার বাইরে যাওয়ার ১৪ দিন পূরণ হবে। গ্রোসারি করতে বাইরে গিয়েছিলাম। আব্বুর জন্য চিন্তা হয় বেশি। কারণ, আব্বুর বয়স। তাই মঙ্গলবার আসব। গাড়িতে যথেষ্ট পরিমাণে গ্যাস আছে। গ্যাস নেয়ার জন্য পথে থামতে হবে না।’
মেয়ে এও জানালো যে আমরা একসঙ্গে এবার নিয়মিত নামাজ কালাম পড়ব। আমি বললাম-‘এই সময়টাতে তোমাদের বাংলাও শেখাব আমি। তোমাকে আর বাবুইকে। রান্না কিছু শিখতে চেয়েছিলে, তাও শেখাব।’ মেয়ে শুনে খুশি। বলল-‘গ্রোসারি শেষ হয়ে এলে অনলাইনে অর্ডার দিতে হবে যেন আব্বুকে স্টোরে আর যেতে না হয়।’
এদিকে তিন বেডরুমের বাসা আমাদের। মেয়ে এলে চারজনকেই আলাদা বিছানায় ঘুমোতে হবে। সামনের বেডরুমের সামনে একটা রুম আছে ( ওয়াক ইন ক্লজেট)। সেখানে একটা এয়ার স্প্রিং ম্যাট্রেস কিনে পাতানোর ব্যবস্হা করা হচ্ছে। আমি আর এশার আব্বুকে এখনও কাজে যেতে হচ্ছে বলে এই সাবধানতা। সবাইকে আলাদা আলাদা রুমে ঘুমোতে হচ্ছে।
এশা বলল-‘ছোটমামা যা যা করছে আমাদেরকেও সেভাবে চলতে হবে। ছোটমামা বাইরে থেকে এসে বাইরেই কাপড় বদলাচ্ছে।’ আমি বললাম-‘হু, তোমার ছোটমামা পুরুষমানুষ, তাই তা করতে পারছে। তাহলে তোমার আব্বুকেই শুধু বাইরে পাঠাতে হবে।’
মেয়ে এবার ফোনে মুচকি হেসে বলল-‘ঠিক।’ এবার প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বললাম-‘আজ পাপা মামা কী করেছে জানো? পাপা মাস্ক পরে বাজার করতে গেছেন মামাকে নিয়ে। মামা মাস্কের ঝামেলা নিতে পারেন না। আমি জানলাম তোমার আব্বুর কাছ থেকে। জিজ্ঞেস করলাম যখন বাজার না করাই আছে! তখন তোমার আব্বু বলল-‘মামার এটা রুটিন। থামতে পারছেন না। কী যে হবে!’
আমি বললাম-‘মামাকে থামাও। তা না হলে একজনের জন্য সবাইকে পটল তুলতে হবে। মাথা খারাপ হয়েছে নাকি মামার!’
মেয়েকে বললাম-‘তোমার আব্বুর কথা শুনবে? কাজে গিয়ে কল দিয়ে বলছে-‘সকালে একটা হাগ চেয়ে নিতে ইচ্ছে করছিল। তোমার ঘরে গিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে মায়া হলো, আমার চাওয়াটা পুষিয়ে নিলাম। তুমি ভয়ে সরে আছ যে কারণে সেই কারণে আমারও সাবধান হওয়া প্রয়োজন। কারণ, আমাদের দুজনকেই কাজে বাইরে যেতে হচ্ছে।’
রাজিয়া সুলতানা
কবি, লেখক ও অনুবাদক।
জন্ম গাইবান্ধা জেলার সৈকতপাড়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে তিনি অনার্স ডিগ্রি নেন। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। সেখানে তিনি গণিত ও অন্যান্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনশেষে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। ভালোবেসে ভালো নেই তাঁর প্রথম কবিতা সংকলন (২০১৫)। দ্বিতীয় কবিতাগ্রন্থের নাম হারপুনে গেঁথেছি চাঁদ (২০১৬) । সম্প্রতি ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত ইংরেজিতে অনূদিত বাংলা কবিতার সংকলন পোয়েটিকস অব গ্রীন ডেল্টা য় তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। এছাড়া তার অনূদিত আরও দুটো বই-‘ইশিগুরো তিনটি বড় গল্প’ এবং স্লোভেনীয় কবি গ্লোরজানা ভিবারের নির্বাচিত কবিতাগ্রন্থ In Proximity of Silence এর অনুবাদ ‘নৈ:শব্দ্যের কাছাকাছি’। এই গ্রন্থটি স্লোভেনিয়া থেকে প্রকাশিত হয়।