ভূমিকা: লেখাটা এই শিরোনামে শুরু করেছিলাম। ভয় ছিল দশটা মিথ্যা পাওয়া যাবে তো। একদিনে সেটা ছাড়িয়ে গেছে। এই দশটা তথ্যর মধ্যে মাস্ক বিষয়ক লেখাটা নিয়ে অনেকেই কথা বলেছেন। আমিও উত্তর দিয়েছি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ি। আমার মত হচ্ছে মাস্ক পরুন।যা পান তাই পরুন। মানসিক শান্তিরও দরকার আছে। মিথ্যা গুজবে দেশ গুমগুম করছে। আমারও দশটা মিথ্যা পাওয়া হয়ে গেছে। আপাতত আমি আর পিঁপড়া হয়ে আপনাদের কামড় দিব না। অনেকেই বিরক্ত হয়েছেন আবার অনেকেই উৎসাহ দিয়েছেন তাদের একজন মুগ্ধতা.কমের সম্পাদক কবি মজনুর রহমান। মানুষের প্রতি আমি উচ্চ ধারণা পোষণ করি। আমি বলিনা আপনারা মিথ্যা বলেন। আপনারা ভালো থাকবেন।
মিথ্যা: একটা তথ্য আকাশে- বাতাসে রসুন খেলে নাকি করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
সত্য: রসুন একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং অনেক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে কিন্তু রসুন খেলে করোনা হয় না এমন তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে নেই।
মিথ্যা: ঘরে বসে করোনার টেস্ট করুন -বলা হচ্ছে আপনি যদি দম বন্ধ করে দশ সেকেন্ড থাকতে পারেন, আপনার বুক ব্যাথা না করে তবে বুঝা যাবে আপনি করোনায় আক্রান্ত হননি।
সত্য: বিষয়টি ডাহা মিথ্যা। জিনিসটা এতো সোজা হলে তো হতোই। বিশেষ ধরণের টেস্ট ছাড়া এ রোগ নির্ণয় সম্ভব না।
মিথ্যা: ফুসফুসে পৌঁছানোর আগে করোনা ভাইরাস চার দিন গলায় থাকে এবং এ সময় ব্যক্তির কাশি এবং গলায় ব্যথা শুরু হয়। যদি তিনি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করেন এবং লবন বা ভিনেগার মিশ্রিত হালকা গরম পানি দিয়ে গলগলা করে কুলি করেন তবে তার ভাইরাস দূর হয়।
সত্য: এমন কোন তথ্য এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি।
মিথ্যা: এখন যে তথ্যটি ভরে গেছে সোশাল মিডিয়ায়, সেটা হলো হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন এবং এ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সত্য: হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন একটি অনেক আগের ঔষধ যা ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে আর এ্যাজিথ্রোমাইসিন একটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক। বাস্তবে এগুলো এখুনো COVID19 এ ব্যবহার করার অনুমতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেয়নি।
মিথ্যা: চৈত্র মাস। গরম পড়িপড়ি ভাব। কেউ-কেউ খুশি। অনেকের ধারণা গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় করোনা বাঁচতে পারে না।
সত্য: করোনা ভাইরাস গরম শীত সব আবহাওয়াতেই বহাল তবিয়তে থাকতে পারে। যারা গলা পুড়িয়ে গরম এবং বুক ঠাণ্ডা করে আইসক্রিম খাচ্ছেন কোন লাভ নাই। হাত ধুতেই থাকুন, ধুতেই থাকুন।
মিথ্যা: সেইন্ট লুইক হাসপাতালের অফিসিয়াল প্যাডে একটা লেখা খুব জনপ্রিয় হয়েছে। মদ খেলে নাকি করোনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বিশেষ করে ভদকা খেলে করোনা হয় না।
সত্য: এটা একটি সর্বনাশা মিথ্যা কথা। যে কোন ধরনের নেশা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই ভদকা খেলে নেশা হবে করোনা যাবে না। সকল প্রকার নেশা কে না বলি।
মিথ্যা: মাস্ক পরলে করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
সত্যঃ আসলেই কি সবার মাস্ক ব্যবহার করতেই হবে? WHO কি বলে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে আপনি যদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন এবং সর্দিকাশি থাকে তবে আপনাকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে যাতে করে আপনি রোগ ছড়াতে না পারেন। আর যারা স্বাস্থ্যসেবা পেশায় জড়িত যেমন ডাক্তার, নার্স তাদেরও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সুস্থ ব্যক্তির মাস্ক ব্যবহার করার কোন প্রয়োজন নেই। সবুজ রঙের যেসব মাস্ক এখন সবাই পরছে সেসব পরে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব না। আর এসব একবার ব্যবহারের জন্য। একই মাস্ক বারবার ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষ ধরণের মাস্ক যার কোড N 95 ব্যবহার করলে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। দেশে মাস্কের সংকট আছে তাই মাস্ক নিয়ে হৈচৈ না করাই ভালো। বরঞ্চ ঘনঘন হাত ধুবেন, জনসমাগম এড়িয়ে চলুন, হাঁচি-কাশিতে রুমাল /টিস্যু ব্যবহার করুন। সবার মঙ্গল হোক।
মিথ্যা: থানকুনির পাতা চিবিয়ে খেলে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
সত্য: বাস্তবে থানকুনি পাতার কোন ক্ষমতাই নাই করোনার হাত থেকে বাঁচানোর। থানকুনি পাতার কিছু পুষ্টিগুণ আছে কিন্তু করোনাকে ঠেকিয়ে দিবে এটা সম্ভব না।
মিথ্যা: কালোজিরা বিষয়ক একটা পোস্ট আজ মিডিয়াতে খুব চালাচালি হচ্ছে। কালোজিরা খেলে নাকি করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
সত্য: কালোজিরা খেলে আপনার করোনা হবে না বা এটা খেলে করোনা পালাবে এমনটি এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। যদিও ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিকভাবে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বুকের দুধ বাড়াতে আমরা মায়েদেরকে কালোজিরার ভর্তা খেতে বলি। আজ একটা দলকে দেখলাম গোল হয়ে বসে ২০০ গ্রাম করে কালোজিরা প্যাকেট করতেছে জনগনকে মুফতে বিলির জন্য। অতি উত্তম। কালোজিরা খান শান্তি পান তবে সত্যকেও গ্রহণ করতে শিখুন।
মিথ্যা: করোনা ভাইরাস শুধু বয়স্ক মানুষের হয়।
সত্য: করোনা বুড়ো, শিশু সবার হতে পারে। তবে যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা তাদের ক্ষেত্রে এরোগ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ
সহযোগী অধ্যাপক
প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর