করোনা মহামারী ঠেকাতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৬ তারিখ থেকে সব অফিস আদালত গণপরিবহণ বন্ধ রয়েছে এবং প্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনী কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় মাঠে কাজ করছেন।
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসমূহে রোগীর চাপ কমে গিয়েছে।তবে জরুরী রোগীদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রয়েছে। এর সাথে সারাদেশব্যাপী চিকিৎসকগণ তাদের প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধ রেখেছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলোচনা সমালোচনা চলছে। তাই এই প্রসংগে কিছু বলার প্রয়োজনবোধ করছি।
প্রাইভেট প্রাকটিসে যত রোগী আসেন তার ৯০-৯৫ % রোগী সাধারণ রোগী।
পৃথিবীর সকল দেশেই যেখানে লকডাউন চলছে, সেখানে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ, এসময় সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব নয়।
আমি রংপুরে প্রাকটিস করি। রংপুর উত্তরাঞ্চলের একটি চিকিৎসা নগরী হিসেবে খ্যাত। রংপুর শহরে প্রতিদিন যত মানুষ বাহির থেকে আসেন তার ৬০-৭০% আসেন চিকিৎসার প্রয়োজনে। আজ রংপুরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে, তার প্রধানতম কারণ হচ্ছে চিকিৎসকগণ তাদের প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধ রেখেছেন।
অনেকেই বলছেন চিকিৎসকগণ তাদের সুরক্ষা পোষাক পড়ে প্রাকটিস করতে পারেন। এতে চিকিতসকদের হয়তো সুরক্ষা হবে। কিন্তু তাদের চেম্বারের বাইরে রোগীদের যে ভিড় হবে সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তাদের অপেক্ষা করানো রংপুরের কোন কনসাল্টেশন সেন্টারের নেই।
এখানে প্রতি রোগীর সাথে কমপক্ষে দুজন স্বজন থাকেন, তাই এক একটি কনসাল্টেশন সেন্টারে যে জনসমাগম ঘটে, সেখানে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। সুতরাং চিকিৎসকগণ শুধু নিজেদের সুরক্ষার জন্যে নয়, বরং রোগীদের বৃহত্তর স্বার্থে তাদের প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধ রেখেছেন।
এখানে সকলের বোঝা উচিত, চিকিৎসকগণ হাসপাতালে তাদের চিকিতসা সেবা অব্যাহত রেখেছেন এবং ঝুঁকি নিয়ে করোনা রোগী ও সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধ রেখেছেন (যেখানে তাদের অতিরিক্ত আয় হয়)।
নিজেদের অতিরিক্ত আয়ের পথ বন্ধ রেখেছেন শুধুমাত্র নিজেদের সুরক্ষার জন্যে নয়(যদিও চিকিতসকদের নিজেদের সুরক্ষাও রোগীদেরই স্বার্থে), বরং সারাদেশে করোনা বিস্তাররোধে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার মত বৃহত্তর স্বার্থে।
এখানে উল্লেখ্য যে বেশীরভাগ চিকিৎসক এখন বিনামূল্যে টেলিফোনে তাদের রোগীদের সেবা অব্যাহত রেখেছেন।আর জরুরী রোগীদের সরকারি হাসপাতালে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন, আর ক্লিনিকসমূহে জরুরী অপারেশন অব্যাহত রয়েছে।
ডা. মঞ্জুরুল করিম প্রিন্স
সহযোগী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌন বিভাগ
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল