যক্ষা প্রতিরোধে যে বিসিজি টিকা দেয়া হয়, সেটি কী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে? একদল গবেষক অবশ্য দাবি করছেন, সে সম্ভাবনা আছে। নতুন এই দাবি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই বেশ আলোচনা চলছে চিকিৎসা দুনিয়ায়।
তাদের মতে, পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, যেসব দেশ শতভাব যক্ষা প্রতিরোধী এই টিকা ব্যবহার করেছে তাদের মৃত্যুহার অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেক কম। তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারতের মতো দেশগুলোর জন্য এটা আশার খবর?
গবেষণাটি করেছে যুক্তরাষ্টের নিউইয়র্ক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। গবেষকদলের প্রধান ওই ইনস্টিটিউটের প্রাণরাসায়নিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গঞ্জালো ওটাজু বলেন, যেসব দেশ যক্ষা প্রতিরোধে বৈশ্বিক নীতির সাথে সংযুক্ত নয় যেমন-নেদারল্যান্ড, ইতালি, যুক্তরাষ্ট-এসব দেশে কোভিড-১৯ দ্বারা সংক্রমণের হার অনেক বেশি। তুলনায় যেসব দেশ এই চুক্তি বাস্তবায়ন করে চলেছে সেসব দেশে সংক্রমণের হার কম।
এখন পর্যন্ত বিসিজি টিকা বহির্ভূত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৪,০০০। আর ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ পাঁচ হাজার। মৃতের সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশে সংক্রমণ শুরুর পর থেকে সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন। বিশাল জনসংখ্যার দেশ ভারতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২,০০০ এবং মারা গেছেন ৫০ জন। গবেষকদের দাবির পেছনে এসব পরিসংখ্যানও কাজ করেছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ, ভারতের মতো দেশগুলো দীর্ঘদিন থেকে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে অন্যান্য পাঁচটি রোগের পাশাপাশি যক্ষা প্রতিরোধী ‘ব্যাসিলীয় ক্যালমিটি গিওরিন’ বা বিসিজি টিকা প্রয়োগ করে আসছে। বাংলাদেশে ১৯৮৫ সাল থেকে ব্যাপক আকারে বিসিজি টিকা কর্মসূচি পালন করা হয়। ভারত এটা করছে ১৯৮৪ সাল থেকে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০০ কোটির বেশি মানুষ বিসিজি টিকার আওতায় আছেন।
যদিও কেউ কেউ বলছেন, বিসিজি টিকার প্রয়োগ হলো ব্যাকটেরিয়াকেন্দ্রিক। কাজেই সেটি ভাইরাসের ক্ষেত্রে কতখানি কাজ করবে তা ব্যাপক গবেষণার দাবি রাখে। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, এই টিকা প্রয়োগে শিশুদের মধ্যে বিশেষ করে শ্বাসযন্ত্রের মধ্যে যে কোন ধরণের সংক্রমণ প্রতিরোধী ক্ষমতা গড়েওঠে। ফলে এটা নিয়ে আশাবাদী হওয়াই যায় যে, এটা কোভিড-১৯ এর মতো সংক্রণজনিত ইনফেকশন থেকে মানুষের ঝুঁকি কমাতে পারে।
গবেষেকেরা এই গবেষণায় নেদারল্যান্ডের ১,০০০ এবং অস্ট্রেলিয়ার ৪,০০০ লোকের মধ্যে ইতিমধ্যে এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছেন।
ফ্রান্স এবং স্পেনও যৌথভাবে এ ব্যাপারে একটি গবেষণা শুরু করেছে। তারা বলছেন, গবেষণার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য ও সার্বজনীন কোন তথ্য পেতে হলে অন্তত ২ থেকে ৩ মাস অপেক্ষা করতে হতে পারে।
তবে আশাবাদী হওয়ায় মানুষের ধর্ম। এই কঠিন বিপদে আমরা বিসিজির উপর খানিকটা আশাবাদী হতেই পারি!
টাইমস অব ইন্ডিয়া ও প্রেস ডট ইনফার্ম ডট ফ্রান্স অবলম্বনে