বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক যখন অ্যালকোহল ভেপিংকে করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর বলেছেন তার প্রায় তিন সপ্তাহ আগে শুমোরু শিনটাকি, প্রফেসর, ওকিনওয়া ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, জাপান একটা গবেষণাপত্র সাবমিট করেন।
গবেষণাপত্রটি সাবমিট করা হয় কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন-একসেস বৈজ্ঞানিক গবেষণার সংকলন এআরএক্সআইভি.অরজিতে।(https://arxiv.org/abs/2003.12444)
সেই গবেষণাপত্রে শিনটাকি পরামর্শ দেন ৩০-৪০% অ্যালকোহল ভেপিং দ্বারা শ্বাসনালীর করোনার (সার্স কো-ভি-২) জীবানুকে মেরে ফেলা সম্ভব এবং এটি যারা এসময় স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত তাদের ব্যবহার অসম্ভব না। শিনটাকির এই গবেষণা ধারণাগত ও করোনায় আক্রান্তদের উপর পরীক্ষা করে করা হয়নি। তবে, তিনি মনে করেন এটা কাজ করার কথা।
এবার আসেন বিতর্কে। অ্যালকোহল ভেপিং কি করোনার বিরুদ্ধে কাজ করবে?
উত্তর, করতে পারে। তিনটা কিন্তুসহ।
দুনিয়াতে এই মূহুর্তে অন্তত ৭০ টি ওষুধ ( নিউ ইয়র্ক টাইমস) বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন যেগুলো করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে বলে ধারণা করছেন। এর মধ্যে কিছু ওষুধ জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে যেমনঃ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন/ক্লোরোকুইন (যুক্তরাষ্ট্র), ফ্যাভিলাভির( চীন)। ওষুধ আবিষ্কার আর ওষুধ বাজারে আসা এক বিষয় না।
ওষুধ/থেরাপি আবিষ্কার হলো ওষুধ বাজারে আসার প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপে এগুলো পরীক্ষাগারে প্রাণিদের উপর পরীক্ষা করা হয় এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা দেখা হয়। তৃতীয় ধাপে এগুলোকে ক্লিনিকাল ট্রায়াল বা মানুষের উপর প্রয়োগ করা হয়। চতুর্থ ধাপে এটির অনুমোদন বা রেজিষ্ট্রেশন নিতে হয়। পঞ্চম ধাপে এগুলো বাজারে ছাড়ার পর কাজ করছে কি না দেখা হয়।
ফলে, এই ধাপগুলো অতিক্রম করলে তবেই ওষুধ বা ক্ষেত্রবিশেষে থেরাপি বাজারে আসে।
ফলে, অ্যালকোহল ভেপিংকে এই ধাপগুলোর মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অন্ততপক্ষে এটিকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
অ্যালকোহলের যে ঘনত্বের কথা বলা হয়েছে সেই ৭০% সেটি বেশ উচ্চ ঘনত্বের এলকোহল। ৭০% এলকোহল মানে হলো ১০০ লিটার দ্রবণে ৭০ লিটার এলকোহল ( যদি আয়তন/আয়তন হয়)!
প্রশ্ন হলো, অ্যালকোহলের ঘনত্ব কত হলে সেটি জীবানুকে মেরে ফেলতে পারে? হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন এর রিকমেন্ডেশন হলো- ৬০-৯০%!
কিন্তু হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার আর ইনহেল করা তো এক বিষয় না। তাহলে, শ্বাসনালীর ভাইরাস মারতে সেই ঘনত্ব কত হবে এবং কোন ঘনত্ব নিরাপদ হবে? শ্বাসনালীতে ৭০% অ্যালকোহল ইনহেল করা বা নাক দিয়ে নেওয়ার দুটো প্রভাব থাকতে পারে।
অ্যালকোহলের বিষাক্ত প্রভাব হলো যখন আপনার শরীর যে পরিমাণে অ্যালকোহল প্রসেস করতে পারে তার চেয়ে বেশি এলকোহল আপনি পান করেন। এতে করে, আপনি অজ্ঞান হতে পারেন, বমি করতে পারেন, শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারেন।
ফলে, ৭০% এলকোহল করোনা রোগীরা ভেইপ করলে কী হবে ও কতটুকু ক্ষতি হবে বা লাভ হবে সেটা পরীক্ষা সাপেক্ষ। আমাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরকে এই পরীক্ষাগুলো করে দেখতে হবে। প্রফেসর শিনটাকির রেকমন্ডেশন ৩০-৪০%।
প্রফেসর শিনটাকি নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় শুধু স্বাস্থ্যকর্মীদের এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে বলেছেন। এই নিয়ন্ত্রণের বিষয়টাও ভেবে দেখতে হবে।
এই মূহুর্তে করোনা সমস্যা সমাধানে যারাই সমাধানের কথা বলছেন তারা স্বাগতম। শুধু, এই সমাধানগুলোকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বা বিজ্ঞান স্বীকৃত উপায়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে আমাদের বাজারে আনতে হবে।
সোহেল রানা
সহকারী সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
এবং
গ্র্যাজুয়েট টিচিং অ্যাসিসটেন্ট, ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা, যুক্তরাষ্ট্র