মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

করোনা ভাইরাস: যা জানতেই হবে

ডা. শাফায়াত হোসেন লিমন

১১ মার্চ, ২০২০ , ৫:৫৯ অপরাহ্ণ

করোনা ভাইরাস: যা জানতেই হবে

আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে এটা প্রায় সকলেই জেনে গেছেন। এখন প্রশ্ন হলো এটা নিয়ে আমাদের কতটুকু চিন্তিত হওয়া উচিত এবং প্রতিরোধ করার জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া দরকার এবং আমাদের লাইফস্টাইলটা কেমন হলে আমরা করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব ইন শা আল্লাহ্ঃ

১. আমাদের প্রথম কাজ হলো এটা নিয়ে গুজব না ছড়ানো, অতিরিক্ত আতংকিত না হওয়া। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে মৃত্যুর হার মাত্র ১-২%। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অন্যান্য অনেক রোগ আছে যেসবের মৃত্যুর হার করোনার চেয়ে বেশি। সুতরাং উল্টোপাল্টা গুজব না ছড়িয়ে ধৈর্য ধরে ব্যবস্থা নিতে হবে।

২. করোনা ভাইরাস আকৃতিতে বড়। এটা সাধারণত বাতাসে ভাসে না৷ তাই বাতাসের মাধ্যমে ছড়ানোর সম্ভাবনা কম৷ এটা মূলত ছড়ায় Droplet তথা হাঁচি, কাশি, সর্দির মাধ্যমে। এ কারণে আমাদের যতটা না মাস্ক ব্যবহার করা দরকার তার চেয়ে বেশি দরকার হাত ধোয়া। মাস্ক ব্যবহার করতে গিয়ে আবার হিতে বিপরীত হতে পারে৷ কারণ বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানে না। আমাদের উচিত বারবার হাত ধোয়া, খাবার আগে, টয়লেটের পরে, সন্দেহজনক কিছু ধরার পরে। মোট কথা যত বেশি পারা যায় হাত ধোয়া।

৩. বেশি বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া যেমনঃ আমলকি, লেবু, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি। চায়নাতে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা করার জন্য শিরাপথে ভিটামিন সি ব্যবহার করে বেশ ভালো রেজাল্ট পাওয়া গেছে।
রেফারেন্সঃ https://clinicaltrials.gov/ct2/show/NCT04264533

ভিটামিন সি শরীরে প্রদাহ কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এতে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে৷ তাই বেশি করে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান।

৪. ফাস্টিং তথা না খেয়ে থাকা। আমরা অনেকেই জানি ফাস্টিং আমাদের ইমিউনিটি তথা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমাদের উচিত বেশি বেশি ফাস্টিং করা এতে করোনা ভাইরাস আমাদের আক্রমণ করার সুযোগ পাবে না ইন শা আল্লাহ্।

৫. যাদের অন্য রোগ আছে যেমনঃ ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, এজমা ইত্যাদি এবং যারা বয়স্ক তাদের অধিক সতর্ক থাকতে হবে। করোনা সাধারণত এনাদেরই বেশি আক্রমণ করে৷ কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, খুব সতর্ক থাকবেন।

আরো পড়ুনঃ করোনা ভাইরাস: রক্ষা কবচ নিজের কাছে

৬. রোগ দেয়ার মালিক আল্লাহ্, সুস্থ করার মালিকও তিনিই৷ তাই আমাদের সবচেয়ে জরুরী যে কাজ তা হলো আল্লাহর কাছে দুয়া করা৷ তিনি যেন এই মহামারী থেকে আমাদের রক্ষা করেন।

করোনা ভাইরাসের লক্ষণগুলো সাধারণ ফ্লু গুলার মতই। জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি। এই লক্ষণগুলো যদি দেখা দেয় তাহলে প্রথমে ধৈর্য ধরে সাধারণ ব্যবস্থাগুলো নিতে হবে। ৭-১০ দিন পরেও যদি ভাল না হয় এবং যদি শ্বাসকষ্ট সহ রোগের অবনতি হয় তবে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে পরীক্ষা করার জন্য IEDCR এ যোগাযোগ করতে হবে। রোগীগণ নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

মাস্ক ব্যবহার প্রসঙ্গে

করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে আসার পর হুট করে মাস্কের দাম বেড়ে গেছে। ১৫০ টাকায় যে বক্স বিক্রি হত তা এখন ১৫০০-২০০০ টাকা! কিন্তু করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আসলেই কি মাস্ক পরার প্রয়োজন আছে?

করোনা ভাইরাস একটি বড় আকৃতির ভাইরাস। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় না। এটা ছড়ায় respiratory droplets অর্থাৎ হাঁচি, কাশি, সর্দি ইত্যাদির মাধ্যমে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কারো এই ড্রপলেটগুলোর সাথে আপনারা যদি সরাসরি কন্টাক্টে আসেন তথা স্পর্শ করেন তখন আপনার শরীরে এই ভাইরাস ঢুকতে পারে।

World Health Organisation (WHO) এর গাইডলাইন অনুযায়ী কোনো সুস্থ মানুষের করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কোনো মাস্ক ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। তাহলে মাস্ক কারা ব্যবহার করবে? যারা অসুস্থ হয়েছেন তারা। যাদের সর্দি, কাশি, হাঁচি হচ্ছে তারা মাস্ক পরে থাকবেন যেন এগুলো বাইরে না ছড়ায়৷ হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করা উচিত৷

কিন্তু টিস্যু যদি না থাকে তখন কী করবেন? আপনার হাতের কনুই ব্যবহার করবেন। হাত ভাঁজ করে কনুইটা মুখের কাছে এনে তারপর হাঁচি বা কাশি দিবেন। হাতের মধ্যে দিবেন না কিন্তু!

সুতরাং করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই৷ বরং পরিষ্কার পানি দিয়ে বারবার হাত ধুয়ে নিন ও প্রচুর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান।

এছাড়া আরও কিছু নরমাল এটিকেট মেনে চলা দরকারঃ

১. কারো জ্বর, সর্দি, কাশি হলে সেটা সাধারণ ফ্লু ই হোক না কেন সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাসা থেকে বের হবেন না।
২. কোনো ব্যক্তির যদি হাঁচি, কাশি থাকে তার থেকে তিন ফিট বা ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন।
৩. যত বেশি পারা যায় হাত ধুয়ে নিন। প্রতিবার নামাজ পড়ার আগে ওযু করার চেষ্টা করুন।
৪. কোনো রকম গুজবে কান দিবেন না। কোনো জড় পদার্থের উপর করোনা ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে না৷ তাই চীন বা করোনা আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ থেকে আনা কোনো জিনিস ব্যবহার করাতে কোনো সমস্যা নেই। রসুন খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। তবে রসুন, করোনা প্রতিরোধে তেমন কিছু করতে পারে না।

নিজে জানুন, অন্যকে জানান। ভয় পাবেন না, ভরসা রাখুন আল্লাহর উপর।

আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের করোনার আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দিন।

 

প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন আইইইডিসিআর এর সাথে

IEEDCR

 

ডা. শাফায়াত হোসেন লিমন

চিকিৎসক, লাইফ স্টাইল মডিফায়ার।

ফেসবুক পেজ: fb.com/dr.shafayat.hossen.limon

ডা. শাফায়াত হোসেন লিমন
Latest posts by ডা. শাফায়াত হোসেন লিমন (see all)