বর্তমানে যে রোগ নিয়ে বিশ্ব আলোড়িত তা হলো করোনা ভাইরাস, এখন যাকে বলা হচ্ছে COVID-19. চীন থেকে উৎপত্তি হয়ে এ রোগ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপি।
বিশ্বের ১০৩ টি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭০ জনই মারা গেছে চীনে। অন্য ১০ টি দেশে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৪২১ জন।
ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১ লাখেরও বেশি মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে উচ্চ মাত্রার সতর্কতাও জারি করেছে। দেশে দেশে হাসপাতাল, হোটেল, বিমানবন্দর এমনকি পুরো প্রদেশকে কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে। অচল হয়ে পড়ছে দেশগুলো।
মিডিয়ায় বিষয়টি থাকছে লিড আইটেমর। ফলে মানুষজন দরকারের চেয়ে বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে আমাদের দেশে তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রুগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে অন্য আড়াইজন লোককে সংক্রামিত করতে পারে।
গত বছর শেষের দিকে চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে এ ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়। চীন এ রোগ সীমাবদ্ধ রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে সাংহাই, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইরান, ইতালি এবং কানাডায়। বন্য পশুপাখি আর সামুদ্রিক মাছের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
১.জ্বর ১০০ ডিগ্রি বা তার বেশি
২. কাশি
৩. সর্দি
৪. গলাব্যাথা
৫. মাংসপেশী বা গাঁটের ব্যথা
৬. মাথা ব্যথা
৭. যেসব দেশে এ রোগ দেখা দিয়েছে সেখান থেকে ১৪ দিনের মধ্যে আসার তথ্য।
৮. বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ অন্য দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে তাদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশী।
কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস যার শরীরে আছে অর্থাৎ রোগে আক্রান্ত তার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সুস্থ মানুষের শরীরে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দিলে সেই জীবাণু সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
শিশুদের যাদের বয়স ১০ থেকে ৩৯ বছর তাদের কম মাত্র ০.২%, মধ্যবয়সে ৪০ থেকে ৪৯ বছর মাত্র ০.৪%। ৮০ বছর বা তার বেশী হলে মৃত্যঝুঁকি ১৪.৮%।
জ্বর কোন রোগ নয়। রোগের লক্ষ্মণ। সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর হলে সর্দিকাশি থাকবে কিন্ত করোনাভাইরাস জ্বরে সর্দি হয় না। জ্বর ১০৩ /১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হতে পারে সাথে কাশি। শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলোর একটি হলো এই জ্বর। সাধারণত মানব শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এরচেয়ে বেশী তাপমাত্রাকে জ্বর বলে। যেহেতু জ্বর শরীরের রোগ প্রতিরোধের একটা অংশ তাই জ্বর আসলেই আতংকিত হবেন না।
১. ভালোভাবে ঘনঘন সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।
২. করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নাকে, মুখে আঙ্গুল বা হাত দেয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ, মানব শরীরে জীবাণু ঢোকার সদর দরজা হলো নাক-মুখ-চোখ। ৩. জনসমাগমস্থল এড়িয়ে চলতে হবে।
৪. হাঁচি-কাশির সময় টিসু পেপার বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে।
৫. মাস্ক পরা জরুরী তবে আমরা যে পাতলা মাস্ক ব্যবহার করছি এটা দিয়ে হবে না। লাগবে বিশেষ ধরণের মাস্ক। যার কোড N95
৬. হাত মেলানো(হ্যান্ডশেক), কোলাকুলি থেকে বিরত থাকতে হবে।
৭.হাত না ধুয়ে চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ করা যাবে না।
ভাইরাসজনিত রোগ বলেই এর তেমন কোন চিকিৎসা নেই। জ্বর, সর্দি কাশি হলে আপনার নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আতংকিত না হয়ে চিকিৎসা সেবা নিন ভালো থাকুন।
করোনাকে যতটা আত্মঘাতী বলে প্রচার করা হচ্ছে বাস্তবে তা কিন্ত নয়। এরচেয়ে প্রাণঘাতি ছিল ইবোলা ভাইরাস, নিপা ভাইরাস, মার্স ভাইরাস। আমরা কিন্তু সেসব ভাইরাসকে মোকাবেলা করেছি, অতএব অযথা আতংকিত হবেন না।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে চলে গিয়েছে। বাকি আক্রান্ত লোকেরাও চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। কথা পরিস্কার, শিশুরা এই রোগ থেকে অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত এবং যারা মারা গেছে তাদের প্রায় সবারই অন্য রোগের ইতিহাস ছিলো অথবা তারা বয়স্ক মানুষ। সুতরাং অযথা আতঙ্কিত না হয়ে বা গুজব না ছড়িয়ে সতর্ক হোন।
নিজের অথবা পরিবারের কারো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে বাংলাদেশ সরকারের ‘ইনস্টিটিউট অব এপিডেমোলোজি ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ’ বা আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করুন।
এছাড়াও প্রতিটি হাসপাতালে আলাদা আইসোলেটেড ওয়ার্ড প্রস্তুত আছে। সাধারণ জ্বর সর্দি হলে সুস্থ তো হবেনই, এমনকি করোনায়ও যদি আক্রান্ত হয়ে যান তবুও ভয়ের কিছু নেই। সাধারণ চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণ শেষে বাড়ি যেতে পারবেন।
ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ
সহযোগী অধ্যাপক, প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর।
চেম্বার: প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর। সিরিয়াল: 01723672651
বদরগঞ্জ চেম্বার: হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বদরগঞ্জ, রংপুর।
[…] করোনা ভাইরাস: রক্ষা কবচ নিজের কাছে […]