শিকারি বিড়াল চেনা যায় তার গোঁফ দেখে আর রোগ চেনা যায় তার লক্ষণ দেখে। একেক রোগের একেক লক্ষণ। শ্বাসকষ্ট হলে হয় এ্যাজমা অথবা নিউমোনিয়া। পাতলা পায়খানা হলে ডায়রিয়া। তেমনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, গলা ব্যথা, জ্বর আর শ্বাসকষ্ট। এসব কথাই আমাদের জানা কিন্তু এসব ছাড়াও কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ নিয়েও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা আসছেন চিকিৎসকের কাছে।
তার একটি হলো রুগীর স্বাদ ও গন্ধ নেবার ক্ষমতা হ্রাস পায়। এ বিষয়ে মুগ্ধতা ডট কম আগে আমার আরেকটি লেখা প্রকাশ করেছিল। রোগী খাদ্যের স্বাদ বুঝতে পারে না আবার অনেকে কোনকিছুর গন্ধ পান না।
এখন নতুন করে জানা যাচ্ছে, এই ভাইরাসের সংক্রমণে কেউকেউ মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভোগে। সময়,স্থান, নাম সঠিকভাবে বলতে পারে না। অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে এনসেফালোপ্যাথি বলে।
৭৪ বছর বয়সের একজন বৃদ্ধ জ্বর এবং কাশি নিয়ে ফ্লোরিডার এক হাসপাতালে জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করেন। তার সমস্যা ছিল জ্বর ও কাশি। এক্সরে করার পর নিউমোনিয়ার কোন লক্ষ্মণ না পাওয়ার কারণে তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরের দিন তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার আত্মীয়রা।
দেখা গেল তার শ্বাসকষ্ট এতই বেড়েছে যে তিনিরতার নামও বলতে পারছেন না। পরে পরীক্ষা করে তার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে।
আর একজন রোগী মাথা ব্যথা নিয়ে চিকিৎসকের চেম্বারে আসেন। তিনি তার নাম বলতে পারলেও অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। ফলে চিকিৎসক ব্রেনের সিটি স্ক্যান করালে দেখতে পান, ব্রেনের স্থানে স্থানে ফুলে গেছে এবং কিছু কোষও মারা গেছে।
হেনরী ফোর্ড হেলথ সিষ্টেমের চিকিৎসক ডা.এলিসা ফোরি বলেন, এতে প্রমাণিত হয় অনেকসময় করোনা ভাইরাস ব্রেনকেও আক্রান্ত করতে পারে।
তবে জন হফকিন্স স্কুল অফ মেডিসিনের নিউরোলজিষ্ট ডা.রবার্ট ষ্টিভেনস বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী মানসিকভাবে কোন অসংলগ্ন আচরণ করে না। তারা জাগ্রত এবং নিউরোলজিকাল পরীক্ষায় স্বাভাবিক থাকে। আর যাদের ব্রেনের অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয় তাদের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শ্বাসকষ্টের কারণে ব্রেনে অক্সিজেন সাপ্লাই কম হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়।
চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল ল্যানসেটের তথ্যমতে করোনার ১৭% রোগী অর্গান ফেইলর, ৮% তীব্র শ্বাসকষ্ট, ৩% কিডনি ফেইলর, ৪% রক্তে ইনফেকশন, ১% ভেন্টিলেটরে থাকার কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। এতদিন আমরা শুধু যেসব লক্ষণ নিয়ে কথা বলতাম এখন এসব নতুন লক্ষণের দিকেও তাদের দৃষ্টিপাত করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ গালফ নিউজ
ডা. ফেরদৌস রহমান পলাশ
সহযোগী অধ্যাপক
প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর