মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

করোনা সময়ের ঈদ

তাজনিন মেরিন লোপা

২ জুন, ২০২০ , ৮:০৯ অপরাহ্ণ

করোনা সময়ের ঈদ - তাজনিন মেরিন লোপা

গত বছর ঈদের আমেজ পেতে ক্যানবেরা থেকে ছুটে এসেছিলাম বোনের কাছে। সেই দশ ঘন্টার রাস্তা পাড়ি দেয়া। আরমিডেলে বাসিন্দারা ঈদ করে সেই ছোটবেলার মতো রঙ্গিন করে। ঈদ এর নামাজ, দেখা-সাক্ষাত, নতুন জামা পড়ে এই বাড়ি ঐ বাড়ি ঘুরে বেড়ানো। তবে এবারের চিত্র আলাদা।

কভিড-১৯, সারা বিশ্বের মতো এখানকার জীবনযাত্রায়ও প্রভাব রেখেছে। অবশ্য এখনও পরিস্থিতি বেশ ভালো। তিনটা কেসের পরে এখানে আর কোন পজেটিভ পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পরিস্থিতির ভালোর দিকে হওয়ায় একেকটা স্টেটে ধীরে ধীরে একেকভাবে শীথিল করছে। নিউ সাউথ ওয়েলসে স্কুল, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠার খোলা, শপিং মল খোলা, পার্কও খোলা। তবে দশজনের বেশি কোথাও সমাগম করতে পারবেন না। ঈদ এর জামাতের জন্য দশজন করে নামাজ পড়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু সংখ্যাটা নিশ্চিত করা অন্য সব মিলিয়ে বাসায় নামাজ পড়ার নির্দেশনা দেয়া হলো।

আমরা বাসায় চারজন, তাই দুলাভাই দেশী-বিদেশী মিলিয়ে ছয়জনকে জামাতে নামাজের জন্য দাওয়াত দিলেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন সাউথ আফ্রিকান; যিনি ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেন। খুতবা সহ, সকল নিয়ম মেনে আমরা বাড়িতেই ঈদ এর জামাত শেষ করলাম। আমাদের ছোট্ট নাবহানও খুব খুশি। সবাই যখন চলে যাচ্ছিল সে জিজ্ঞেস করে; “ আম্মু ঈদ  মোবারক কি শেষ?” বিদেশে থাকলে বাচ্চাদের জন্য এরকম একটা পরিবেশ খুব জরুরি। এখানকার প্রধান ধর্ম, সংস্কুতি আমাদের থেকে আলাদা। তাই শিশুরা ক্রিসমাস যতো সহজে শেখে; ঈদ হয়তো শেখে না। তাই নিজের ধর্ম, সংস্কৃতিকে সজীব-সতেজ রাখাটা খুব বেশি জরুরি হয়ে যায়।

আগের রাতেই সবাই মিলে খাবার রান্না করে রাখা হয়েছিল। দেশী ঈদ এর খাবারের বেশ প্রশাংসা পেলো ভিনদেশী বন্ধুর কাছে। অনেকেই বলছিলেন, কিন্তু কারো বাড়ি যাওয়া হয়নি; কারণ একই সময়ে দশেজনের বেশি মানুষ হয়ে গেলে আইন ভঙ্গ হয়ে যাবে। অন্যদের বেলাও তাই। সিডনিতে একই বাড়িতে ঈদ এ চব্বিশজন হওয়ার কারণে সব মিলিয়ে প্রায় সাঁইত্রিশ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে পুলিশ।

ঈদের জন্য ইউনিভার্সিটিরও আয়োজন ছিল। সেখান থেকেই সকালে বাংলাদেশী সংগঠন ঈদ এর খাবার দিয়ে গেছে বাড়ি বাড়ি। বিকেলে পার্কে শিশুদের জন্য ঈদ উপহার আর প্যাকেট খাবারের আয়োজন ছিল। তবে দশজনের বেশি একসাথে হওয়া যাবে না। তাই খাবার আর উপহার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গেলো না। সবাই সবাইকে দেখে আপ্লুত; কিন্তু নিয়ম তো মানতেই হবে। তাই শুভেচ্ছা বিনিময় করেই বিদায় নিতে হলো।

শেষ বিকেলে মনের ক্লান্তি মেটাতে একটু দূরে গাড়ি চালিয়ে ঘুরে এলাম সবাই। করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তুলনা করলে অনেক ভালো ঈদ গেলো এই বিদেশের মাটিতে। কিন্তু আপনজনেরা সবাই দেশে; মনটা ঘুরেফিরে ওখানেই চলে যায়। আর বিষন্ন, ভারাক্রান্ত আর দুঃশ্চিন্তায় ভরে উঠে। প্রতিটা মূহুর্ত কাটে সব কিছুর সাথে ভালো একটা সময়ের প্রর্থনায় প্রত্যাশায়।

 

তাজনিন মেরিন লোপা

জন্ম রংপুরের এক সাহিত্যানুরাগী পরিবারে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, রংপুরের জনপ্রিয় মুখ। ’যুগের আলো’ পত্রিকায় নিয়মিত লেখক হিসেবে লিখেছেন ছড়া, কবিতা, সায়েন্স ফিকশন, ছোট গল্প, লিখেছেন কলাম। ঢাকায় ‘ছোটদের কাগজ’ এ লেখক হিসাবে সক্রিয় ছিলেন। শিশু-কিশোর সাহিত্য নিয়ে ২০১৯ একুশে বইমেলায় আত্মপ্রকাশ করছেন ‘ডাইনীর ফলবাগান’, ২০২০ এ ‘অস্ট্রেলিয়ার রূপকথা’ বই নিয়ে। নৃবিজ্ঞানের ছাত্রী হিসাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  স্নাতক আর স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। বাংলাদেশে কলেরা হাসপাতালে সামাজিক গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন অনেকদিন। খুব সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকার এর অনুদানে পরিচালিত ’হিপ্পি অস্ট্রেলিয়া’ নামে একটি সংস্থায় টিউটর হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। সংস্থাটি  মূলত তাদের নিজেদের কারিকুলামে কমিউনিটির ছোট শিশুদের মানসিক ও ইতিবাচক সামাজিক উন্নতির জন্য কাজ করে। বর্তমান নিবাস আরমিডেল, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া ।

তাজনিন মেরিন লোপা
Latest posts by তাজনিন মেরিন লোপা (see all)