বানরটা মাথা নিচু করে বনের ভিতর হাঁটছে। যে কেউ দেখলে বুুঝবে বানরের খুব মন খারাপ। যে বানর সারাদিন এ ডাল ও ডাল করে। হৈ চৈ করে মাতিয়ে তোলে পুরো বন। সেই বানর মাথা নিচু করে যাচ্ছে বনের ভিতরে। পথে যেতে যেতে দেখা হলো শেয়ালের সাথে। শেয়াল বানরকে দেখে চমকে উঠলো। শেয়াল এলো বানরের কাছাকাছি। বলল, কি হয়েছে বানর ভায়া ? তোমার কী মন খারাপ ?
বানর ওর হাঁটা থামাল শেয়ালের দিকে তাকাল একবার। পরক্ষণে আবার মাথা নিচু করল। আর চুপ করে থাকল। কিছুই বলল না।
শেয়াল আবার জিজ্ঞেস করল,কেন তোমার মন খারাপ?
জবাব দিলো না বানর। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদল আর কাঁদল।
– কি হলো? বলবে না?
বানর মুখটা এবার উচু করল। বলল,আমার চাষ করা গাছটা শেষ।
– তোমার চাষ করা গাছ?
– হু। কলাগাছ।
– কে শেষ করল?
– হাতি। হাতি কচ কচ করে খেল। কদিন হলেই কলা ধরতো।
– হাতি খেয়ে ফেলেছে? বলল শেয়াল।
– হু।
– হাতি জানতো না ওটা তোমার গাছ?
বানর বলল,জানলে বা কী হতো?
শেয়াল বলল,না কোন কিছু হয়তো হতো না। তবে এই হাতিটা অতটা খারাপ না।
– খারাপ না হলে আমার কলা গাছ খায়।
– এর আগে যে হাতিটাকে আমার বাবা বুদ্ধি করে পানিতে ডুবিয়ে বন ছাড়া করেছিল। সেটার চেয়ে ভালো। ঐ হাতিটা হিংস্র ছিল। ছিল বদমেজাজী। হুংকার দিলেই পুরো বন থর থর করে কেঁপে উঠতো। বনের বাঘও ভয় পেত। হাতিটা নিজেকে রাজা মনে করতো। তাই তার আচরণে বনের অন্য প্রাণীরা মিলে পানিতে ফেলে দিয়েছিল। আর পানিতে ফেলে বন ছাড়া করেছিল। এরপর অনেকদিন বনে হাতি নেই। হঠাৎ এই হাতিটা কোথাত থেকে যেন আবার বনে ঢুকলো।
বানর বলল,এই হাতি খালি খায় আর খায়। ভয়ে তো কোন কিছু বলাও যায় না। বটগাছের মতো লম্বা শুঁড় দিয়ে যদি আছাড় মারে আমি তো একবারে শেষ।
– অত ভয় পেলে কি আর চলে। চলো তো দেখি হাতির কাছে যাই।
– না, না । তার দরকার নাই। আমার কলা গাছ খেয়েছে খাক। মোটু হাতির সামনে যাওয়ার আমার কোন ইচ্ছে নাই।
– আরে চলোই না বানর ভায়া। এই হাতিটা কিন্তু হিং¯্র না। গলা ফাটিয়ে চিৎকারও করে না।
– সাহস দেখিয়ে পাছে – – -। কথা শেষই করলো না বানর।
শেয়াল বলল,চলো। কিছুই হবে না।
বানর আর শেয়াল হাঁটতে শুরু করল। হাতির কাছে যাওয়ার জন্য। হাঁটতে হাঁটতে একসময় হাতির সামনে হাজীর হয়ে গেল ওরা। তখনো হাতিটা মুখ নাড়াচ্ছে। কলাগাছ কচ কচ করে চিবুচ্ছেও।
বানর যেন আবার ফুপিয়ে কাঁদবে এমন ভাব করলো। শুধু ভাব করলো না। কান্নাও শুরু করল।
হাতিটা মুখ তুলে দেখল বানরকে। বলল, কী হয়েছে?
বানর কথাই বলল না। কাঁদতেই থাকল।
– আহ্! কী হয়েছে? কী হয়েছে বানর ভাই আমাকে বলো।
হাতির মুখে বানর ভাই শুনে শেয়াল সাহস পেল। বলল,তুমি কলাগাছ খাও তাই।
– ওমা! খাব না? কলাগাছ আমার প্রিয়।
– আর কলা বানরের প্রিয়। যেটা কলাগাছেই ধরে। আর যেটা খাচ্ছ সেটা ওরই।
হাতি বলে, মানে?
– ঐ কলাগাছ বানর চাষ করেছিল।
হাতি শুনে সাথে সাথে বলল,সরি। সরি বানর ভাই। আরও বলল,মন খারাপ করো না। তোমায় থোকায় থোকায় কলা নিয়ে এসে দেব।
– কোথাত থেকে?
– কলাবাগান থেকে। দুজন মিলে চলে যাব কলাবাগানে।
– কলাবাগান তো অনেক দূর। বলল শেয়াল।
– সমস্যা কী তাতে? আমি বানরকে আমার পিঠে তুলে নিয়ে যাব।
– তাই। মূহুর্তেই মন ভালো করলো বানর।
– হু। তুমি চাইলে আমরা বন্ধুও হতে পারি।
– বন্ধু! অবশ্যই হবো। চলো তাহলে আমরা এক্ষুণি কলবাগানে যাই।
– আচ্ছা। বলল হাতি।
বানর পিঠে উঠলো হাতির। পিঠে নিয়ে হাঁটতে থাকল হাতিটা। শেয়ালকে না ডাকলেও পিছু নিল ওদের। হাঁটতে হাঁটতে গেল একটা বড় কলাবাগানে। কলাবাগানে ঢুকে নাঁচ জুড়ে দিলো বানর আর হাতি। নাঁচের তালে হাতির কান নড়ে। নড়ে পা আর চোখও। বানর ছাগল ছানার মতো তিড়িং বিড়িং করতে থাকলো। আর মনের আনন্দে দু’বন্ধু খেতে থাকল। ওদের প্রিয় খাবার। একজন কলাগাছ। অন্যজন কলা।
[২০২০ এর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে শিশু সাহিত্যিক মোকাদ্দেস-এ-রাব্বীর গল্পগ্রন্থ ‘পাঁচটি হাতির গল্প’।গল্পটি এই বই থেকে নেয়া। বইয়ের নাম : পাঁচটা হাতির গল্প লেখকের নাম : মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : সাইফ আলী মূল্য : ১৮০ টাকা প্রাপ্তিস্থান একুশে বইমেলা শিশুচত্বর ৭৭৭-৭৭৮ চট্টগ্রাম বইমেলা ২০৬]