মধুমাস পেরিয়ে, ক্লেশে ভারাতুর হয়ে—
তোমার সাথে শ্যাষ দেখা!
তোমার উদ্যত পা, আমার উরুতে রেখে—যে পায়েল পরিয়েছিলাম; আজ তা নেই।
ধর্ষণের পর-তরুণীকে যেভাবে ছুঁড়ে ফেলা হয়!
ওভাবে হয়তো পায়েলকে ঘিরে নানা শোরগোল,
এ নিয়ে কেউ অভিযোগ দাখিল করেনি;
নেই কোনো জোরালো প্রমাণ।
ঘুম ভাঙ্গলে—
মানুষ যেমনই স্বপ্ন ভুলে,
তেমনই তুমিও ভুলেছো-
আমার সংকলন;
তবে কি জানো এ বুকে অবসাদ কতোটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে? তার আদিষ্ট কোনো জরিপ নেই!
কিন্তু তোমাকে মানতেই হবে—খুব কাছ থেকে সেদিন নিজেকে খুন হতে দেখছিলাম!
খানিকটা দ্বিধার আবজালে— পুড়িয়ে মারছিলে তুমি।
ওহে; শকুন্তলার সখী
যে সন্ধ্যায়, তোমার সাথে সখ্যতা গড়েছি,
সে সন্ধ্যাকে আমি বোঝাবো কি?
যে রাতে বিরাট তেজে—
আমার বাহুতে তুমি শুয়েছিলে,
সে রাতকে আমি বলবো কি?
যে উপগ্রহের মহাকর্ষণে—
আমার সরল মনে জোয়াড়-ভাটা সৃষ্টি হতো,
সে চাঁদের দিকে ইদানীং চাইতে পারি না!
আশা ছিল তোমার আলিঙ্গনে— আমার জরাজীর্ণ কবিতারা হয়ে উঠবে উপজীব্য;
অবহেলা গায়ে মেখে,
উপেক্ষার খামে মুড়ে—
কিভাবে মনের ডাকবাক্সে বন্দী হতে হয়?
তা কেউ তোমাকে দেখে শেখে!
বেলাশেষে তোমাকে জানতে গিয়ে জেনেছি~ভালোবাসা আর বিরহ মিলে হয় সমসত্ত্ব মিশ্রণ।
তবে, তোমার বিদায়—
কবুল করা কষ্টের,
আমলে নেওয়া;
তার চেয়েও বেশি ভয়ের!
লাল ফর্দ অনুযায়ী, গাঙ্গ রাণীর মতোন; বিপন্না তুমি আজকাল—
শুধু দক্ষিণবঙ্গে নয়,
তোমায় খোয়ানোর আশঙ্কায়— নকশাল আন্দোলনের আঁখর; গিয়ে পড়েছে জাজিমবিশিষ্ট বিছানায়।
বিছানার যে পাশটায়—শাদা পাঁচিল গেঁথে,
প্রতিরোধ করা হয়েছে;
নির্বাসনের পর—সেথায় এক ঐশ্বরিক উত্তর
আমাকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে— এগারোবার!
তুমি চলে যাওয়ার পশ্চাতে, হাতের রেখায় ফাটল ধরেছে;
চর্তুভূজ চিহ্ন স্পষ্ট থাকা স্বত্তেও কাজ করেনি—
কর্ণের রক্ষাকবচ।
তোমার ঠোঁটের নিচের—ছোট্ট কালো তিলটা;
নিজ মেরুরেখার পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘুরছে তো ঘুরছে।
আমি একদৃষ্টে চেয়ে দ্যাখছি তো দ্যাখছি।
চরম উৎকন্ঠায়-
ক্রোড়ের ভেতরটায়;সম্মুখ সমরে কর্তৃত্ব নেওয়া— নেতাজী, প্রকাশ্যে বৈরিতার পথ বেছে নিয়েছেন!
এ সংঘাত থামাতে গিয়ে—থেমে যাই আমি, নিষ্ক্রিয় হয় জাভাদেশীয় গন্ডার।
দিনের অন্ধকারে স্মৃতির খুঁটিতে উলটো হয়ে ঝুলে থাকি হালফিল—
একাধারে দৃষ্টিশক্তি কৃশতনু হতে চলেছে;
চলার সময় নক্তচরের কানের শব্দোত্তর হিল্লোলিত করান শুনে মার্গ খুঁজি!
তৃষ্ণার্ত কাকের মতোন, প্লাষ্টিকের সংস্রবে পাথর ফেলতে ফেলতে মাঙ্গলিক দোষ করি পান।
তোমাকে না দ্যাখার শোকে; সিনায় সিনা টান লেগে উঠে আসে চক্রবাল আয়ত বালুরাশি,
উঁচু কুঁজওয়ালা ভারবাহী পশু’র পিঠে চড়ে বেড়ানো বেদুইন লাথি মারে নিয়তির খাতায়—
গোল রন্ধ্র রটনা কোরে জলশূণ্য-মানবহীন সাহারা মরুভূমি!
জোতদার আশ্বিন মাসের শেষ দিন অবধি, ভূস্বামীদের খাজনা-নজরানা শোধে ব্যস্ত সমস্ত—
যেখানে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বিলুপ্ত হওয়ার আগেই বিলুপ্ত হয়েছো তুমি।
নিরেট অলকানন্দাতে ঝাপ দিতে গিয়ে, নিখোঁজ হওয়া মন্দাকিনী বেঁচে থাকে।
সেনোরিটার সাথে, অনুষঙ্ঘের অপরাধে—
এ মর্ত,আমাকে মৃত্যু না হওয়া অবধি’—
ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার বিধান বহাল রেখেছে!
তার’চে বরং,
ফায়ারিং স্কোয়াড কিংবা গিলোটিনের শিরচ্ছেদ যন্ত্রের—
প্রস্থর নিক্ষেপ সরল হতো।
জল্লাদ আজ মুগুড় দিয়ে পিটিয়ে—
আমার হাড়গোড় সব—চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলুক;
গলাকেটে আমার মাথা ভাসিয়ে দেওয়া হোক—
প্রবাহিত জলধারায়।
ফাঁসির আসামী হিসেবে, প্রাণভিক্ষা চাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানলেও;
আবেদন ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছেনা জেলারের কাছে।
ভেন্টিলেটরের ফাঁক-ফুঁকুর দিয়ে,
মঞ্চের সার্চলাইটের আলো টিকরে—
বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে!
কনডেম সেলে আমাকে—মৃত্যু পরোয়ান পড়ে শুনানো হচ্ছে!
জানতে চাওয়া হচ্ছে;
আমার শেষ মনস্কামের কথা!
লম্বা রেইসের ঘোড়ার মতো— আমার রক্তচাপ;
চিচি শব্দ করে—
লাফিয়ে উঠেছে!
পেয়ার করার মতোন,
নোংরামির জন্যে—
বিরাগ থাকার পরেও;
আমার শেষ ইচ্ছে
পূরণ কোরে,
মৃত্যুটি যথাসম্ভব—
আরামদায়ক কোরে তোলার; পায়চারি চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
মৃত্যুর সময় গুনতে গুনতে— অন্তিম ইচ্ছে ব্যক্ত করেছি।
তার ঠোঁটের ঝাঁজ—
আঙ্গুলের ডগায়;
ছুঁয়ে দেখার নামে।
আইনানুগ ফর্মালিটি শেষে, আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে— আবার সে অমলিন মঞ্চে!
জেল সুপারকে দেখছিলাম; কর্ণধারের মতোন—
লাল রুমালটাকে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন,
মঞ্চের পাশে।
ঐ ফুরসতে,
লাল রোমালটাই—
আমায় সীমান্ত পার করিয়ে; প্রবেশ করাবে—
ঔপাড়ের চৌকাঠ।
দাঁতে-দাঁত খিটে আছে,
চোখ মুখে জুড়ে শুধু— আলোকশুন্যতা।
কাঠের-পাটাতনে; দাঁড়িয়ে আমি,
কালো-রংয়ের; জমটুপি পরিয়ে, মাথা ঢেকে দেওয়া হয়েছে।পেছন-থেকে দু’হাত বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
‘ম্যাজিস্ট্রেট’ ঘড়ি ধরে,
ইশারা দিতেই—
কপিকলের দড়িতে;
টান দিয়েছে জল্লাদ।
পাটাতন সরে গেছে—
গলায় আটকে গেছে—
মোটা দড়ি!
একেএকে শুরু হয়েছে—
নিগূঢ় যাত্রা।
‘ঘরের এক কোণে পড়ে রয়েছে আমার নিথর দেহ’,
পাকযন্ত্র পড়ে রয়েছে নির্বাক হয়ে!
অলীক-কল্পনা ভাঙ্গলে—
বোধ হয়;
‘ফাঁসিতে আত্মহত্যাকারী আর প্রেমে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীর মধ্যে কোনো তফাত নেই!’
পরেরদিন সকালেই—
তাজ্জব হয়ে;তাকিয়ে দেখেছি, প্রথম-সারির কয়েকটা দৈনিক পত্রিকায়—
আমার আত্মহননের খবর প্রকাশিত হয়েছে!