সরি, রং নাম্বার বলেই ক্যান্সেল বাটনের দিকে আঙ্গুল এগিয়ে দিল পিউ। কী কারণে যেন আটকে গেল। ও পাশ থেকে যেন কিছু বলছিল মেয়েটা। ঠিক শোনা গেল না। তাই প্রশ্ন করল
-কী বললেন?
-না, মানে আপনি খুব সুন্দর। মেয়েটা যে কথা এড়িয়ে গেল তা ভেবে পিউয়ের মাথা আরও বিগড়ে গেল। যতদুর শোনা গিয়েছে তাতে মনে হচ্ছে মেয়ে বাজে কমেন্ট করেছিল। এখন ঘুরিয়ে নিল। সে আরও একটু রেগে বললো, হ্যাঁ, তো কী হয়েছে?
-না কিছু হয় নি, তবে হতে কতক্ষন। মেয়ের কন্ঠ আরও নরম হয়ে এলো। আচ্ছা আপনাকে একটা মেয়ে মানুষ কল করেছে, সে যেই হোক তার সাথে কি একটু মিষ্টি করে কথা বলা যায় না, নাকি আপনার মিষ্টি অপছন্দ। মেয়ের কন্ঠে দুষ্টু হাসি।
-তা দিয়ে আপনার কী লাভ? পিউয়ের ঝাড়া জবাব।
-লাভও নেই, আবার ক্ষতিরও সম্ভাবনা নেই। মেয়ে কথা চালিয়ে যেতে লাগল। অন্য সময় হলে রং নাম্বার পর্যন্তই আটকে যেত। কী এক অলিক মায়ায় সে লাইনটা কাটতে পারেনি। উঠতি বয়সে যা হয় আরকি, খেয়ালের বসে অথবা দেখি না কী করে টাইপের চিন্তা করে চালিয়ে যায়। সেও তাই করল।
তিস্তার পানি কি আর বসে থাকে, ছলাৎ ছল চলতে চলতে আষাঢ় শ্রাবণ গড়িয়ে মধ্য আশ্বিন। পাড়ার মোড়ের ফ্লেক্সি লোডের দোকানির আঙ্গুল ফুলে আটিয়া কলা গাছ।
-শোন পিউ, আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। অনেকটা দাবির সুরেই বলল সুজানা।
-তা তো হবে না সোনা যাদু
-কেন হবে না, তুমি চাইলেই হবে। চলনা দেখা করি প্লিজ, মেয়ের কন্ঠে আকুতি ঝড়ে পরে। শুধু ফোনে কথা বলে যাব, আমাদের কি তবে এই জনমে দেখা হবে না!
পিউয়ের মনেও ইচ্ছেটা কাজ করছিল, কিন্তু কিভাবে বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না। শুধু মুখেই না বলছিল। এই না না করতে করতেই দুজনের দোখা হয়ে গেল। শুরু হলো দ্বিতীয় ইনিংস।
দিনে পার্কের বেঞ্চে দীর্ঘ আাড্ডা, রাতে ননস্টপ ফোন আলাপ। এবার পার্কের মালিক না মোড়ের ফ্লেক্সি ব্যাবসায়ী কে বেশি প্রফিট হাতাচ্ছে টের পাওয়া যাচ্ছে না।
আবার মেয়ের আবেগ জড়ানো আকুতি, —তোমার বাসায় কে কে থাকে?
-কেন?
-না, মানে এভাবে আর কতদিন। পর্কে বসতে আর ভলো লাগে না। দেখ না মানুষগুলো কেমন ক্ষুধার্ত কাকের মতো তাকিয়ে থাকে। যেন একটু সুযোগ পেলেই ছিঁড়ে খাবে। চলনা বসায় যাই।
-না বাবা বাসায় যাওয়া যাবে না। পিউয়ের চোখ মুখে ভয় রেখা ফুটে ওঠে।
-তাহলে অন্য কোথাও।
আচ্ছা দেখি। একটু চিন্তা করে পিউ বলে, আগামী পুর্ণিমা আমরা একসাথে উপভোগ করব। মেয়ের শত ডানার আনন্দ আর দেখে কে।
বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থ্যা করতে পারেনি। ওদিকে মেয়ে সাজুগুজু হয়ে বসে আছে। সে আসবেই। অনেক কষ্টে বহু ঘুরাঘুরির পর এক বন্ধুকে ম্যনেজ করলো পিউ। পূর্ণিমার চাঁদ যেন নিজেই নেমে এলো ধরণীর বুকে। সারা রাত খুনসুটি লুটোপুটি। জোসনার রোদে গা শুকিয়ে সকাল নাগাত যে যার ঘরে।
পিউয়ের যে কী হলো। সেই রাতের পর থেকে এক মুহূর্ত সুজানাকে ছাড়া ভাবতে পারছে না। তার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে। কিন্তু সেদিনের পর থেকে সুজানার কোনো খবর নাই। অনেক কষ্টে জেনেছে সেই রাতের কোন সদুত্তোর দিতে না পারায় সুজানা এখন গৃহবন্দি। তার মোবাইলও নিয়ে নেওয়া হয়েছে। পিউয়ের আকুল হৃদয় পগল পারা হয়ে পথে পথে ঘুরলো বহুদিন কিন্তু সুজানাকে আর পাওয়া গেল না। এবার তিস্তার জল গড়িয়ে সমুদ্র ছুলো। দিনে দিনে তিস্তার বুকে পলি জমে বালুচর দীর্ঘ হলো। উদাসী বাউল পিউও বহু কষ্টে মনের যন্ত্রনা থেকে নিজেকে মুক্ত করলো। ধীরে ধীরে একদিন সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেল।
এক বিকেলে হাঁটতে বেরিয়েছে, মোবাইল বেজে উঠল। আপরিচিত নাম্বার। কল রিসিভ করতেই নারী কন্ঠ ভেসে এলো, -হ্যাল, আপনি কি কমল বলছেন?
-জি, না, রং নাম্বার। এবার ক্যান্সেল বাটনে চাপ দিতে একটুও সময় নিল না। ক্যান্সেল!