ক্রাউড ফান্ডিং পাশ্চাত্য দুনিয়ায় একটি বহুল প্রচলিত অর্থায়ন পদ্ধতি। বাংলায় আমরা একে গণতহবিল বলতে পারি। এর মূল বিষয় হলো, যে কোন কাজে অনেক মানুষের কাছ থেকে ছোট ছোট পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে বড় কাজ সম্পন্ন করা। মূলত ইন্টারেনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়। প্রাপ্ত হিসাব অনুসারে, এই পদ্ধতিতে ২০১৫ সালে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা হয়েছিল।
গণতহবিল সংগ্রহের ধারণা বহু পুরাতন। জানা যায়, ১৭৩০ সালে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড গণতহবিল গঠন করে তারল্য সংকট থেকে রক্ষা পেয়েছিল! ১৮৮৫ সালে আমেরিকা সরকার স্ট্যাচু অব লিবার্টির ভিত্তির ব্যয় সংস্থান করতে পারছিল না। তখন একটি সংবাদপত্রের আহ্বানে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ অনুদান নিয়ে এগিয়ে এসেছে। এভাবে যুগেযুগে ব্যবসা, অনুদান বা শিল্পের রক্ষার কাজে গণতহবিলের মাধ্যমে মানুষ এগিয়ে এসেছে।
গণতহবিল কোন ব্যবসার জন্য যেমন হতে পারে, তেমনি কোন জনকল্যাণমুখী কাজের জন্যও হতে পারে। ইদানিং গণতহবিলের আরেকটি ব্যবহার বেশ দেখা যাচ্ছে তা হলো, সৃজনশীল কোন কাজ যেমন শিল্প সাহিত্য বা চিত্রশিল্পের কোন কাজ প্রদর্শনের বিনিময়ে শিল্পীর পক্ষ থেকে তার জন্য সম্মানী সংগ্রহ করা।
এই মত অনুসারে, একজন শিল্পী তার মূল্যবান সময় ও মেধা ব্যয় করে একটি কাজ করেন। সেক্ষেত্রে সেই শিল্পের ভোক্তা সন্তুষ্ট হয়ে নিজের ইচ্ছেমত শিল্পীকে অর্থ দিয়ে সম্মানিত করতে পারেন। কারণ, সবাই জানে যে সৃজনশীল কাজগুলোতে শিল্পী বা উদ্যোক্তারা তাদের মেধা বা সময়ের মূল্য যথাযথভাবে পান না। অথচ দিনরাত খেটে যে শিল্পী একটি গান তৈরি করলেন, বা কবিতা লিখলেন তারও কিন্তু খেয়ে পরে বাঁচতে হয়, পরিবার চালাতে হয়। এই যুক্তি অনুসারে বাংলা ভাষাভাষী কিছু সিনেমা পরিচালক সিনেমা তৈরির কাজে গণতহবিল সংগ্রহ করেন। এমনকি কয়েকজন বাঙালি কবিও ইদানিং এই চর্চা করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গণতহবিল নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার উদ্যোগ। সবার অংশগ্রহণে যে কাজ হয়, সেগুলোর প্রতি কাজের উদ্যোক্তা বা স্রষ্টার একটা দায়বোধ তৈরি হয়। সেইসাথে সম্পন্ন হয় একেকটি চমৎকার কাজও।
রেদওয়ান শুভ
নির্বাহী সম্পাদক
মুগ্ধতা.কম