চারু,
শরীরটা আজ কিছুটা দুর্বল লাগছে। উদ্বিগ্নচিত্তে ভাবছো—’কেন? কী হলো আবার!’ উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। জানো নারীদের এই উদ্বিগ্ন হওয়া স্বভাবটা আমার ভীষণ অসহ্য। কিন্তু তোমার চেহারার উদ্বিগ্ন দৃশ্য সাধারণ নারীদের চেহারার উদ্বিগ্ন দৃশ্য হতে ভিন্ন, যা আমার প্রিয়! ভাবছো—’এ কেমন ভালোবাসা? প্রিয় মানুষের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত চেহারা যার প্রিয়, সে কী করে ভালোবাসতে পারে!’ তোমার এমন ভাবনা স্বাভাবিক, কিন্তু ভুল। আমি খুব ভালো করেই অবগত, তুমি আমার সমুখে সবচেয়ে কম উপস্থাপন করো আমার ভালোলাগার বিষয়াদি। যেমন—তোমার মধ্যরাতের নিদ্রারত দেহ, যা আজও দেখা হয়নি। অথচ এ দৃশ্যও আমার ভীষণ প্রিয়।
স্বচ্ছ ঠাণ্ডা পানি ভর্তি একট গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে দু’চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে পান করো। অতঃপর দুচোখ খুলে উপরে চেয়ে ঐ নিঃশ্বাসেই বল—’তোমাকেই ভালোবাসি’। দেখবে ভালোবাসার একটি অন্য অর্থ খুঁজে পাবে তোমার হৃৎপিণ্ড। যে অর্থটি পৃথিবীর কোনো অভিধানে নেই! তোমার বুক শেলফে কি কোনো অভিধান আছে? নাকি বুক শেলফই নেই?
গত বর্ষায় যে মেহগনি বৃক্ষটি লাগিয়েছিলাম, সেটি বেড়ে উঠছে। দেখবে বেড়ে উঠতে উঠতে একদিন বৃক্ষটি কাঠ হয়ে গেছে। লালচে কিংবা কালচে সার কাঠ। কোনও এক বসন্তে কাঠগুলো উপহার স্বরূপ তোমাকে পাঠাবো; সেদিন তোমার জন্মদিন হবে! জানো, বসন্তে যাদের জন্ম, তারা আমার প্রিয় মানুষ হয়। যেমন—তুমি, তুমি এবং তুমি। মনে রাখবে, ‘তুমি’ ব্যতীত বসন্তে কেউ জন্মেনি! শুনেছি, প্রিয় মানুষকে কাঠ উপহার দিলে তা বুক শেলফ হয়ে যায়। দাম্পত্য কোলাহলে যদি কখনও দু-একটি সন্তান দিতে পারি, ঐ বুক শেলফে রেখে দিও তাদের। দেখবে, কোনও একদিন অভিধান হয়ে তারা তোমায় ভালোবাসার অর্থ শেখাবে!
‘রক্ত’ শব্দটি শুনলে শরীর কেমন শিউরে ওঠে আমার। জানি, তোমারও। কিন্তু যখন তুমি দেখবে, ‘রক্ত’—নায়িকা পরীমণি অভিনীত একটি বাংলা চলচ্চিত্র। যেখানে রক্তের চেয়ে নায়িকার স্তনের দৃশ্য অধিকতর গুরুত্ববহ। তখন তুমি শিউরে উঠবে না। আমিও উঠি না।
গত বিকেলে একজন রূপবতী তরুণীর মায়ের একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র ছেলের স্ত্রী একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন। প্রসবকালে তার দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন পড়েছিল। সেই রূপবতী তরুণী দিয়েছিলেন এক ব্যাগ। একটি বিয়োগাত্মক তথ্য, তরুণী তার মামাতো ভাইয়ের প্রাক্তন প্রেমিকা ছিলো। বলা চলে, তরুণী তার শত্রুকে এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন। কিন্তু আরও এক ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন। কে দিবেন? উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, অবশিষ্ট এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছিলাম আমি এবং ঐ রূপবতী তরুণীর জন্ম বসন্তে নয়।
বৃষ্টি নামলো। শেষ বিকেলের অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিতে খোলা ছাদে ফেলে আসা ডায়েরির অমীমাংসিত ভেজা কবিতাটির যতটুকু মুগ্ধতা ছিলো, দিলেম তোমাকে এবেলা। কেমন আছো? সমূহ দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ভালো থেকো। তুমি ভালো থাকলেই ভালো থাকি আমি। জানো—বৃষ্টি, কবিতা এবং তুমি—আমার তিনটি ভালোলাগা পাখির নাম। যারা প্রতিবারেই আমার কাছে আসে নবরূপে বিস্ময়ের বাতাবরণ নিয়ে! ‘বাতাবরণ’ শব্দের অর্থ জানো? ফিরতি পত্রে উত্তর দিও। শরীরটা দুর্বল লাগছে। আজ তাড়াতাড়ি ঘুমাবো।
—অরুণ
অসাধারণ ছোট