মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

চোখ বুঝলেই দেখতে পাই পচাত্তরের পনর আগষ্ট

রেজাউল করিম মুকুল

১৫ আগস্ট, ২০২১ , ৩:১২ অপরাহ্ণ ;

চোখ বুঝলেই দেখতে পাই পচাত্তরের পনর আগষ্ট -

পচাত্তরের পনর আগষ্ট ভোর পাচটায় কমলাপুর রেল ষ্টেশনে পা রাখতেই খবরটি কানে এলো বঙ্গবন্ধু আর নেই । আমাদের গন্তব্য মোহসিন হল । কিংকর্তব্যবিমূঢ় , পা চলতেই চায়নি সেদিন । বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ারুল ইসলামকে অনুসরণ করে খাজা খান , ফিরোজ ডীন , অলি , শেখ সাদি এবং আমি রেল লাইন ধরে বাসাবো , মৌচাক , মালিবাগ হয়ে কার্ফু অগ্রাহ্য করে হাটতে হাটতে কেমন করে যেন পৌছে গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে । কি করে ভুলবো আমি সেদিনের থমকে যাওয়া ঢাকা শহরের কথা ? এবং আরো কিছু কথা ।

১৯৫৮ খ্রিঃ ২২ সেপ্টেম্বর কৃষক শ্রমিক প্রজা পার্টি ( কেএসপি ) নিযুক্ত স্পিকার শাহেদ আলী আওয়ামী লীগে যোগ দেন । প্রতিক্রিয়ায় পরদিন ২৩ সেপ্টেম্বর অধিবেশন চলাকালে কয়েকজন সাংসদ চেয়ার ছুড়ে শাহেদ আলীকে আঘাত করলে ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান । ১৫ দিন পরে ৭ অক্টোবর পাকিস্হানের তৎকালিন সেনা প্রধান লৌহমানব আইয়ুব খাঁন এ ঘটনার উল্লেখ করে বলেন পাকিস্হানে গণতন্ত্র চলবে না । সামরিক শাসনই যথোপযুক্ত , তাই মার্শাল’ ল দিলাম । ঐ হত্যাকারী ১৯৭১ এ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির অন্যতম নেতা ছিলেন । ১৯৫৬ খ্রিঃ পাকিস্হানের সংবিধান তৈরী পর্য্ ন্ত দশটি বছর পাকিস্হানী শাসকগোষ্ঠী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক , হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী , আতাউর রহমান খাঁন , খাজা খয়েরউদ্দিন , আবু হোসেন সরকার ও বগুড়ার মোহাম্মদ আলী প্রমুখ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে প্রলোভন ও ষড়যন্ত্রের খেলায় মেতে উঠেন ।

অন্যদিকে ১৯৪৮ খ্রিঃ রাজপথের এক তরুন দেশপ্রেমিক নেতা শেখ মুজিবর রহমান মুসলিম লীগ ছেড়ে দিয়ে প্রথমে আওয়ামী মুসলিম লীগ ও পরে আওয়ামী লীগ গঠন করে শাসক গোষ্ঠীর রক্তচক্ষুর শিকার হন । ১৯৫২ খ্রিঃ ভাষা আন্দোলন , ১৯৫৪ খ্রিঃ যুক্তফ্রন্টের সংসদ সদস্য নির্বাচনে বিশাল বিজয় , ১৯৬২ খ্রিঃ ছাত্র আন্দোলন , ১৯৬৪-১৯৬৫ খ্রিঃ সাধারন নির্বাচন , ১৯৬৯ খ্রিঃ স্বাধীকার ও গণ আন্দোলন , ১৯৭০খ্রিঃ সাধারন নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় , ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ১৯৭৫ খ্রিঃ ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড , এবং পরবর্তিতে জিয়া- এরশাদের সামরিক শাসন , স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন , খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ভোটাধিকার আন্দোলন ও ওয়ান ইলেভেনের আধা সামরিক শাসন মোকাবেলা ইত্যাদি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আন্দোলন সংগ্রামের অংশীদার ও নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর সেই আওয়ামী লীগ আজও একই ধারায় সরব ও সোচ্চার । এরই মধ্যে মুসলীম লীগ , কেএসপি , ন্যাপ , পিডিপি , ডেমোক্রাটিক লীগ , ইউপিপি সহ অনেকগুলো দল আজ আর নেই ।

অনেক নেতৃবৃন্দ পথ ভুল করে ইতিহাস বিচ্ছিন্ন হয়ে রাজনীতির চোরাবালিতে হারিয়ে গেছেন । আবার অনেকগুলোর জন্ম হয়েছে , কতগুলো ভেঙ্গে অনেক হয়েছে , অনেকগুলোর মৃত্যু হয়েছে নয়তো বেচে আছে খবরের কাগজে বিবৃতি দিয়ে , টেলিভিশনে টকশো করে অথবা জোটবদ্ধ হয়ে বড় জনসভায় দুই এক মিনিটের শুভেচ্ছা ভাষন দিয়ে ।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়েও বিচারপতি আব্দুস ছাত্তার ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন মাত্র ৪ মাস ৩ দিন । ১৯৭৫খ্রিঃ পরবর্তি বছরগুলোতে ছত্রভঙ্গ আওয়ামী লীগ যখন কোনরকমে ১৫ আগষ্টে একটি আলোচনা সভা করার চেষ্টা করছিলো তখন “দৈনিক মিল্লাত ” , “দৈনিক ইনকিলাব ” সহ কয়েকটি পত্রিকার হেডলাইন ছিলো , “ আজ নাজাত দিবস ” । আওয়ামী লীগের কর্মীদের চাঁদা তোলা পয়সার কাঙালী ভোজের খিচুরী রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলো ফ্রিডম পার্টির লোকেরা ।

ফ্রিডম পার্টির নেতা বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনি কর্ণেল রশিদকে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার চেয়ারে বসতেও দেখা গেলো । ২০০১ ও ২০০৮খ্রিঃ সংসদ সদস্য নির্বাচনে খুনি রশিদের মেয়ে মেহনাজ এমপি হোতে জনগণের ভোট চেয়েছিলেন । ২০০১ এর পরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার করার বিচারপতি খুঁজে পাচ্ছিলেন না । যেও বা দুই একজন পাওয়া গেলো তারাও বিব্রতবোধ করলেন । ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ দিবাগত রাত ৮টার সংবাদে বিবিসি বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে একটি প্রতিবেদনে বলেছিলেন , “পাকিস্হানী সামরিক জান্তারা বঙ্গবন্ধুকে বিচার করেও ফাঁসি দিতে ভয় পেয়েছিলো , অথচ কতিপয় পথভ্রষ্ট ষড়যন্ত্রকারী তা কত সহজে করে ফেললো। একাত্তরের নয়মাস পাকিস্হানের অবাঙালি সেনারা এদেশে যা কিছু করেছে তার অর্ধেক কৃতিত্ব রাজাকার , আলবদর ও জামায়াতীদের । এরাইতো পাকিস্হানী সৈনিকদের নিজের গ্রামবাসী , মহল্লাবাসী ও প্রতিবেশীদের ঘরবাড়ী চিনিয়ে দিয়েছিলো । ” ১৯৮৬ খ্রিঃ আওয়ামী লীগ ধারকর্জ করে যে সংসদ গঠন করেছিলো সে সরকার ১৫ আগষ্টে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে পেরেছিলো, যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার মতো ক্ষমতা তাদের ছিলো না তবে নাজাত দিবস পালনকারীরা বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছিলো খালেদা জিয়ার প্রথমবার ১৫ আগষ্টে কেক কেটে জন্মদিবস পালনের মধ্য দিয়ে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *