মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

ডায়াবেটিস ও মানসিক স্বাস্থ্য: মনোবিজ্ঞানীর ভূমিকা

সিরাজুম মনিরা

১৪ জুলাই, ২০২১ , ৯:৩৩ অপরাহ্ণ

ডায়াবেটিস ও মানসিক স্বাস্থ্য মনোবিজ্ঞানীর ভূমিকা

ডায়াবেটিস একধরনের দীর্ঘস্থায়ী রোগ। অন্য কথায় বলতে গেলে, কোন ব্যক্তি জীবনের যখনই ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হোক না কেন এরপর থেকে ডায়াবেটিস তার জীবনের অংশ হয়ে যায়। যখন ডায়াবেটিস বা এ ধরনের দীর্ঘস্থায়ী রোগ কোন ব্যক্তির সনাক্ত হয় তখন ঐ ব্যক্তির মাঝে নানা ধরনের প্রভাব দেখা যায়।  এই প্রভাবসমূহ সাধারণত ২ কারণে হয়ে থাকে, প্রথমত, ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা কখনও চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সেরে  যাবে না এবং এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। দ্বিতীয় কারণ হলো, এই রোগ নিয়ে চলতে হলে ব্যক্তির জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন এবং এসকল পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে চলা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

বিজ্ঞাপন

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনযাত্রায় সাধারণত যে সকল পরিবর্তনের আনতে হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: খাদ্যতালিকার বিধিনিষেধ, নিয়মিত রক্তে শর্করার (সুগারের) মাত্রা পরীক্ষা (সহজ কথায় ডায়াবেটিসের মাত্রা পরীক্ষা) করা, ওজন কমানো, নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ (মুখে খাওয়া বা ইঞ্জেকশন), নিয়মিত হাঁটা ইত্যাদি। এসকল পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে চলা বেশ কষ্টকর যার ফলে ব্যক্তি মানসিকভাবে বেশ চাপ অনুভব করে। প্রথম দিকে এই চাপের মাত্রা বেশি থাকে এবং যদিও সাধারণত সময়ের সাথে সাথে চাপের মাত্রা কমে আসে তবে অনেকের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। চাপ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ২ ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে: চাপ ডায়াবেটিসের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে অথবা রক্তে শর্করার (সুগারের) মাত্রার নিয়ন্ত্রনের প্রভাবক হিসেবেও কাজ করতে পারে। আবার এটি যেহেতু দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা এবং চিকিৎসার পরও এর থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি সম্ভব নয় এর ফলে ব্যক্তির মাঝে হতাশা ও বিষন্নতা দেখা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষে রাগ, আগ্রাসনের মত আবেগীয় প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। আবার অনেকে খাদ্যতালিকার বিধিনিষেধ, ওজন কমানো, নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন না করে এসবের প্রতি উদাসীনতা দেখায় যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের জন্য বেশ ক্ষতিকর। অনেকে আবার পরিবারের প্রতি সম্পূর্ন নির্ভরশীল হয়ে পরে এবং নিজের যত্নের ব্যাপারে কোন সক্রিয় ভূমিকা পালন করে না। এসকল আচরণ যে শুধুমাত্র ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায় তা না এর পাশাপাশি পরিবারের উপরও নানা ধরণের প্রভাব পরে। এছাড়াও ব্যক্তির মাঝে দীর্ঘমেয়াদে হতাশা ও বিষন্নতা, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা দেখা যায়।

ডায়াবেটিস যদিও শারীরিক রোগ তবে এর ধরনের কারণে সাধারণত মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, হতাশা, বিষন্নতা, আহার ব্যাধি (eating disorder)  ইত্যাদি মানসিক সমস্যা দেখা যায়। ওয়াটারি ও তার সহযোগীবৃন্দ (২০০৬) সালে একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, যে সকল ব্যক্তির মাঝে ডায়াবেটিস ও বিষণ্নতা উভয়ে বয়েছে তাদের জ্ঞানীয় প্রতিবন্ধকতা (Cognitive impairement) অন্যদের তুলনায় বেশি।

বিজ্ঞাপন

এখন আসি ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় মনোবিজ্ঞানীর কী ধরণের ভূমিকা রয়েছে সেই কথায়।  মনোবিজ্ঞানীরা ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও গবেষণা উভয়ক্ষেত্রে সরাসরি সংযুক্ত হতে পারে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় মনোবিজ্ঞানীগণ পরিবার ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি উভয়ের সাথে কাজ করা প্রয়োজন। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় মনোবিজ্ঞানীগণ বেশ কিছু ধাপ অনুসরণ করে থাকে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. ডায়াবেটিস রোগটি সম্পর্কে ব্যক্তি ও তার পরিবারকে বিস্তারিতভাবে বলা। একে সাইকোএডুকেশন বলা হয়ে থাকে। এই রোগটি সম্পর্কে তাদের জ্ঞান কীভাবে তাদের আচরণের উপর প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কেও খুলে বলা গুরুত্বপূর্ণ।

২. ডায়াবেটিসের চিকিৎসার নিয়মকানুন মেনে চলার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় মনোবিজ্ঞানীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

৩. আচরণগত দক্ষতা প্রশিক্ষণ (Behavioral skill training) ডায়াবেটিসের মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এখানে ব্যক্তিকে শেখানো হয় ব্যক্তির আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে কীভাবে তার জীবনমানের উন্নয়ন হয়।

৪. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা (Problem-solvingskill) ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ও জীবনযাত্রায় প্রযোজনীয় পরিবর্তনে ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে।

এছাড়াও ডায়াবেটিস ফলে সৃষ্ট বিষন্নতা, উদ্বেগ, চাপ ও অন্যান্য মানসিক সমস্যার জন্য প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের (সাইকিয়াট্রিস্ট ও মনোবিজ্ঞানী) পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা।

পরিশেষে, ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় মনোবিজ্ঞানীর অন্যতম ভূমিকা হলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে জীবনযাত্রায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি ব্যক্তি ও তার পরিবারের জীবনমানের উন্নয়ন।

সিরাজুম মনিরা