রেজাউল করিম মুকুল

১২ জুলাই, ২০২১ , ১০:০১ পূর্বাহ্ণ ; 758 Views

ডায়াবেটিক রোগটি ক্যাটালাইটিক এজেন্টের মতো

পাঠক মতামত

ডায়াবেটিক রোগটি ক্যাটালাইটিক এজেন্টের মতো-mugdhota

আমাদের প্রাণপ্রিয় পৃথিবীটা যখন মানুষের বসবাস উপযোগী হলো, এমিনো এসিডের খোলোস ভেঙ্গে প্রাণ বেরিয়ে এলো, সেল হলো, জাইগোট হলো, কীট হলো, জলজ পোকা পতঙ্গ হলো, হার্ব-সার্ব, গাছ-বৃক্ষ হয়ে একদল আর একদলকে খেয়ে লালিত পালিত হতে লাগলো আর এতে সময় লেগে গেল প্রায় ৩৮০ কোটি বছর।  এরই মধ্যে বরফ গলে গলে পানি হলো, পানি ভেঙ্গে অক্সিজেন কার্বন-ডাই-অক্সাইডসহ অনেকগুলো গ্যাস হলো, প্রাণীগুলোর পচন আর ধ্বংসাস্তুপ থেকে নাইট্রোজেন হলো।  কীট পতঙ্গ, পোকামাকরের একে অপরের প্রজনন থেকে সৃষ্টি হতে থাকে হাজারও প্রাণের লক্ষ লক্ষ জীববৈচিত্র। এরই ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে পৃথিবীতে সৃষ্টি হলো শান্তশিষ্ট লেজবিশিষ্ট ও পরে লেজবিহীন  মখলুকাতের।  আর সেই মখলুকাতরা আসরাফুল হোয়ে আজ কী কী করছে আর কোথায় গিয়ে পৌঁছেচে কিংবা ভবিষ্যতে কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা যেন ভাবাই যায় না।

বিজ্ঞাপন

বুদ্ধিমান প্রাণি মানুষ যখন যা কিছু করেছে তার নিজের প্রয়োজনেই করেছ। কাঠের গুড়ি গড়িয়ে যেতে দেখে যে মানুষটি সর্বপ্রথম চাঁকার কথা ভেবেছিলো, কিংবা পানিতে বনের বৃক্ষ ভেসে যেতে দেখে ভেলার কথা, আরো পরে পাখিদের উড়তে দেখে সেও উড়তে চেয়েছে আকাশে। বন থেকে উপকারি পশু ধরে এনে বাড়িতে বেধে রেখেছে, তেমনি উপকারি ফলবান গাছ, পাতা, সে তার উঠানে রোপন করেছে। আদিম মানুষের প্রথম আবিষ্কার আগুন।   মানব সভ্যতার সূচনা হয়েছিলো এই আগুন দিয়েই।  সেই আগুনের ক্ষমতা ও তান্ডব অতি প্রাচীনকাল থেকেই মানুষকে ভাবিয়েছে অনেক।  বনের গাছে গাছে ঘষা লেগে জ্বলে উঠা আগুন, পাথরে পাথরে ধাক্কা লেগে জ্বলে উঠা আগুনের ফুলকি, মজা পুকুরের মাঝে অনবরত জ্বলতে থাকা আগুন আদিম মানুষের কাছে খুব বেশীদিন ঐশ্বরীক আর দেবদেবীদের কর্মকান্ড মনে হয় নাই।   গ্রীকরাও প্রমিথিউসকে সূর্য্ থেকে  পৃথিবীতে আগুন  এনে দেয়ার ক্রেডিট খুব বেশী দিন  দিতে চায় নাই।

জন্ম ও মৃত্যুর বিষয়টি মানুষকে আনন্দিত ও ব্যাথিত করেছে আদিমকাল থেকেই। রোগাক্রান্ত মানুষটিকে সুস্হ করে তুলতে সে দেবতাদের স্মরনাপন্ন হোয়েছে ঠিকই, তারপরেও যুক্তিবাদী মানুষের প্রাণপণ আকাঙ্খা ছিলো ঔষধ আবিষ্কারের। এইযে করোনাভাইরাসের কথাই ধরুন না এ যেন ভগবানে বিজ্ঞানে লড়াই। এ লড়াইয়েও  মানুষ ঔষধের কথাই ভাবছে।

বহুমূত্র বা ডায়াবেটিক রোগকে একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট দীর্ঘমেয়াদি, অবক্ষয়ী  রোগ  হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে যা  আমাদের শরিরে  নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।  আমরা যারা এ রোগের শিকার তারা সবাই জানি আমাদের অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট  ইনসুলিন হরমোন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ বা জঠিলতা সৃষ্টি হয় তা হয় সেটাই ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’। তখন আমাদের রক্তে চিনি বা শকর্রার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হল এ রোগের মূল কথা। মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

খুব সহজভাবে বলা যায় ঘন ঘন প্রস্রাব হয় বলেই  এ রোগটির নাম বহুমূত্র রোগ্। কিডনি বা বৃক্কের অক্ষমতার অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস। কারণ কিডনিকে রক্ত থেকে ছাকনি দিয়ে বর্জ্য পদার্থ মূত্রকে আলাদা করতে হয়। অধিক তৃষ্ণা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া, দুর্বলতা;  সার্বক্ষণিক ক্ষুধা ,  ওজন  কমে যাওয়া ; চোখে ঝাপসা দেখা  এসবই এ রোগের লক্ষণ হোলেও আমাদের নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা মেপে দেখা উচিত। ইনসুলিনের ঘাটতি বলেই শরিরে নিয়মিত ইনসুলিন ইনজেক্ট করতেই হবে, যারা মুখে ট্যাবলেট সেবন করি যথারীতি করতেই হবে। কিন্তু এর পাশাপাশি  জীবনধারার পরিবর্তন যেমন  নিয়মিত কিছু ব্যায়াম বা হাটাচলা, খাদ্য গ্রহণে সচেতনতা, অসুখ সম্বন্ধে  পরিষ্কার   ধারণা রাখতে হবে। একজন ডায়াবেটিক পেসেন্ট হিসেবে আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি ও সচেতনতা থেকে বলতে পারি যাদের বয়স পথ্চাশের উর্দ্ধে তারা খাদ্য গ্রহণে সচেতন থাকলেই ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যেমন আমি নিজে মাছ মাংস দুটোই খাচ্ছি না। বীজ জাতীয় খাবার যেমন মসুর ডাল, ছোলা, বাদাম এসব না খেলে  শরিরে মেদ কমে যাবে। খাবার ব্যাপারটা সকাল থেকে দুপুর তারপরে নিউটনের মন্দন সূত্র ধরে কমে আসবে। আমি যতটুকু বুঝি ডায়াবেটিক একটা নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলার লাইফ সাইকেল। মনে রাখতে হবে ডায়াবেটিক রোগ বা সমস্যা রসায়নের ক্যাটালাইটিক এজেন্টের মতো, নিজে বিক্রিয়ায় অংশ নেয় না, কিন্তু বিক্রিয়ায় উপস্হিত থেকে জঠিলতা বৃদ্ধি করে। যেকোন রোগের দ্রুত চিকিৎসা ও আরোগ্য বহুলাংশে নির্ভর করে রক্তে চিনির সামঞ্জস্যতা এবং পরিমিতির উপর। ডায়াবেটিকের জন্যে আমরা নানা রকমের দেশীও ভেষজ কিংবা আয়ুর্বেদিক ঔষধও খেয়ে থাকি। সবক্ষেত্রেই মনে রাখতে হবে সেটি আমদের শরিরে ইনসুলিন তৈরি করতে সক্ষম কি না? যদি সেটি না পেরে থাকে তাহলে টক তেতো যেটাই খান, সেসবে কাজের কাজ কিছুই হবে না।

বিজ্ঞাপন

তাই যেহেতু ডায়াবেটিক রোগটি আমাদের রক্তে  গ্লুকোজের পরিমান হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে ঔষধকে অকার্যকর করে, আমাদেরও উচিত হবে খাদ্য নিয়ন্ত্রন করে ডায়াবেটিককে কাবু রাখা এবং এটাই হবে ডায়াবেটিকের যথোপযুক্ত প্রতিরোধ।

লেখকঃ একজন খাদ্য সচেতন ডায়াবেটিক পেশেন্ট