মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

ডায়াবেটিস: কী, কেন ও কীভাবে

ডা. মো. মারুফ হুসাইন

১৪ জুলাই, ২০২১ , ১১:৩২ অপরাহ্ণ

ডায়াবেটিস কী, কেন ও কীভাবে

ডায়াবেটিসক (বহুমূত্র) এমন একটি রোগ যা রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির উপস্থিতির মাত্রা বৃদ্ধি করে।

বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ফলে আমাদেরকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানতে হবে এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব এবং প্রতিকার বিষয়ে অবগত থাকতে হবে।

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ:

ডায়াবেটিসকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা যায়। তবে আমরা ডায়াবেটিসকে প্রধানত দুইভাগে বর্ণনা করতে পারি। যেমন:

Diabetes Type-I:

এই প্রকার ডায়াবেটিস মূলত কম বয়সী শিশু বা ২০ বছরের কম বয়সী ছেলে মেয়েদের মধ্যে দেখা যায়।অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষসমূহ নষ্ট হবার কারণে এই রোগ সৃষ্টি হয়।

Diabetes Type II:

এই টাইপের রোগীদের বেশীর ভাগই স্থুলকায় এবং বংশের প্রভাব এর মূল কারণ। টাইপ-II ডায়াবেটিসে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয়। তবে এটি সঠিকভাবে কাজ করে না বা শরীরের প্রয়োজনীয় পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি হয় না।

বিজ্ঞাপন

যাদের পিতা মাতা কিংবা ভাইবোনের এ রোগ আছে তারা যদি অলসভাবে জীবনযাপন করে অথবা প্রয়োজনাতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করে দেহের ওজন বাড়িয়ে চলে তবে তারও ডায়াবেটিস অবশ্যম্ভাবী।

ডায়াবেটিসের কারণ:

আমরা বিভিন্ন কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারি। যেমন:

১। জিনগত রোগের কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে।

২। পরিবেশগত কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে।

৩। অতিরিক্ত ওজন ও ওজন বৃদ্ধি।

৪। প্রতিদিনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অনুশীলন না করা বা অলস জীবনযাপন করা।

৫। বেশি পরিমাণে জাঙ্কফুড খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালরি এবং ফ্যাট বেড়ে যাওয়া।

ডায়াবেটিসের লক্ষণসমূহ:

১। ঘন ঘন খিদে লাগা

২। ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ করা

৩। ঘন ঘন তৃষ্ণা লাগা

৪। শারীরিক ক্লান্তি ও দূর্বলবোধ হওয়া

৫। শরীরের কোথাও কেটে গেলে দেরিতে ক্ষত সারতে দেরি হওয়া।

৬। হঠাৎ শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া

৭। ত্বকের সংক্রমণ

৮। চামড়া ফেটে যাওয়া

৯।  দুর্বল দৃষ্টিশক্তি

১০। শুষ্ক ত্বক।

ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব:

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা শরীরের এমন কোন অঙ্গ বা অঙ্গতন্ত্র নেই যাকে আক্রমণ করে না। যেমন এ রোগের জন্য ১) ব্রেইন স্ট্রোক (Brain Stroke), ২) হার্ট এ্যাটাক (myocardial infarction) ৩) কিডনী রোগ (Chronic Kidney disease), ৪) চোখের রক্তনালী বন্ধ হয়ে অন্ধত্ব(Blindness) ৫) পায়ের পচন(Gangrene) ৭। স্নায়ুবিক দূর্বলতা (Peripheral neuropathy) ৮। জীবাণুর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া-

যেমন- ফুসফুসের যক্ষ্মা রোগ

             প্রস্রাবের রাস্তায় প্রদাহ

             ছত্রাকের আক্রমণ ইত্যাদি।

এছাড়াও “Diabetic ketoacidosis” অথবা “Hyperosmolar Hyperglycaemic State” নামক দুটি জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়ে অম্লাধীক্য (Acidosis) ও পানিস্বল্পতা (Dehydration) সৃষ্টি হয়ে মৃত্যুও হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

১। পরিমিত খাদ্যাভাস (Diet)

২। নিয়মিত, পরিমিত ও পরিকল্পিত ব্যায়াস (Exercise)

৩। ওষুধ (Drugs)

পরিমিত খাদ্যাভ্যাস:

» রোগীকে যথাযথ খাদ্যের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।

» চিনি, চিনির তৈরি খাবার, মিষ্টি বা মিষ্টিফল পরিহার করতে হবে।

» সম্পৃক্ত চর্বি কমিয়ে ফেলতে হবে, যেমন ঘি, ডালডা, গরুর মাংস, খাসির মাংস, বড় চিংড়ি ইত্যাদি।

» অসম্পৃক্ত চর্বির পরিমান বাড়াতে হবে। যেমন: সয়াবিন তেল, বড় মাছের নাড়ীর তেল, যেকোনো ধরনের বাদাম ইত্যাদি।

» লাল আটার রুটি, যে সকল খাবারের বেশী পরিমানে আঁশ থাকে তা বাড়াতে হবে। যেমন ফলমূল, শাক সবজি।

» রোগীর উচ্চতা ও বর্তমান ওজন বিবেচনায় রেখে সঠিক পরিমাণে ক্যালরি নির্ধারণ করতে হবে।

মোটকথা ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য আলাদা কিছু নয়। তাই খাদ্যভীতিতে থাকার কারণ নাই। ডায়াবেটিস রোগী সবই খেতে পারবে তবে স্বাভাবিক মানুষের মতই তার ক্যালরির পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে। যেমন-

» শর্করা: ভাত/আলু/আটা-৫০% ক্যালরি

» আমিষ: মাছ/মাংস/ডিম/দুধ-১৫% ক্যালরি

» চর্বি: তেল/মাংসের চর্বি/ঘি/ডালডা-৩৫% ক্যালরি

ব্যায়াম (Exercise)

» নিয়মিত, পরিমিত ও পরিকল্পিত ভাবে ব্যায়াম করতে হবে।

» সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। অথবা ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিন ব্যায়াম করতে হবে।

» হাঁটাচলা, সাইক্লিং, সাঁতার কাটা ব্যায়ামের অন্তর্ভূক্ত।

ওষুধ (Drug)

পরিমিত খাদ্যাভাস এবং ব্যায়ামের পরেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ সেবন করতে হবে এবং নিয়মিত Follow up-এ থাকতে হবে।

করোনা মহামারীতে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়:

রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা অর্থাৎ খালিপেটে রক্তে শর্করার পরিমান ৬ মিলি মোলের কম এবং খাবার দুই ঘণ্টা পর ৮ মিলি মোলের কম মাত্রায় রাখতে হবে। এজন্য যা করতে হবে-

১। যেহেতু করোনাকালিন বিভিন্ন বিধি নিষেধের কারণে বাড়ির বাহিরে খাওয়ার সুযোগ কম তাই বাড়িতে থেকে করোনা প্রতিরোধের নিয়মগুলো মেনে চলুন। যেমন-

» বাড়ির বাহিরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক (Mask) ব্যবহার করুন।

» বাহিরে কারো সাথে হাত মেলাবেন না।

» বাইরে কারো সাথে কোলাকুলি করবেন না।

» কারো সাথে কথা বলার সময় তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন।

বিজ্ঞাপন

২। যাদের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি তারা পারতপক্ষে বাজার, জনবহুল জায়গা, সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলুন।

৩। এ সময় পার্কে বা বাইরে হাঁটতে যাবেন না। শর্করা নিয়ন্ত্রণে বাড়িতে, বারান্দায় বা করিডোরে হাঁটার অভ্যাস করুন।

৪। বাইরে কোনো কিছু ধরলে বাড়িতে এসে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানিতে হাতে ধুয়ে ফেলুন।

৫। বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে বয়স্ক ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে ফেলুন।

৬। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলেও যেমন- জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যাথা, শরীর দূর্বল, ক্লান্তি অনুভব করা, খাবারের স্বাদ না পাওয়া, মাথাব্যাথা, ডাইরিয়া ইত্যাদি দেখা দিলে দ্রুত সরকার নির্দেশিত কেন্দ্রগুলোতে রোগ নির্ণয় ও শনাক্তকরণের জন্য যোগাযোগ করুন। যতদ্রুত সম্ভব ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সঙ্গেও যোগাযোগ করুন।

৭। পরিশেষে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের উপর অগাধ বিশ্বাস রাখুন এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন।

ডা. মো. মারুফ হুসাইন
Latest posts by ডা. মো. মারুফ হুসাইন (see all)