যোগব্যায়ক কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদের ২টি বিষয় অবশ্যই জানতে হবে। প্রথমত, ডায়াবেটিসের কারণ কী এবং যোগব্যয়াম শরীরের কী কী উপকার করে।
ডায়াবেটিসের অনেক কারণ রয়েছে। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, মানসিক চাপ এবং রাতে ঘুম না হওয়াকে অনেকে ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। প্রকৃত পক্ষে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৫০ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে যা ডায়াবেটিসের বৃহত্তর জটিলতা সৃষ্টি করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা প্রয়োজন যা তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করত পারবে, স্থূলতা ও মানসিক চাপ কমাবে এবং রাতে ঘুম হয় এমন শারীরিক পরিস্থিতি তৈরি করবে। আর এই জীবনধারার সর্বোচ্চ উপায় হচ্ছে যোগব্যায়ম। ফলে, অনেক ডাক্তার এবং ডায়াবেটিস সেন্টার ডায়াবেটিসের জন্য যোগব্যায়ামের পরামর্শ দিচ্ছেন।
এখন জানতে চেষ্টা করবো যোগব্যায়ম কী? এবং এটি কীভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে?
বিজ্ঞাপন
‘যোগ’ সংস্কৃত শব্দ, যা ‘যুজ’ থেকে এসেছে, এর অর্থ যোগাড় করা, আবদ্ধ হওয়া। যোগব্যায়ামের একটি শাখা হলো যোগাসন। যেখানে আসন বা বসার মাধ্যমে যোগ ব্যায়াম করা হয়। একটি আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া যেখানে দেহ, মন এবং আত্মাকে একত্রিত করা হয়। যোগব্যায়াম চীন, জাপান, তিব্বত, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু এটি এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ, ২০১৪ সালের ১১ ই ডিসেম্বর, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ প্রতি বছর ২১ জুনকে বিশ্ব যোগ দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
যোগব্যায়াম ও ডায়াবেটিস
যোগব্যায়ামের সীমাহীন উপকারিতা রয়েছে। যেখানে কেবল জিম করলে শুধু আমাদের দেহ সুস্থ থাকে, সেখানে যোগব্যায়াম আমাদের দেহের সাথে সাথে মনকেও বেশি সুস্থ্ করে তোলে।
১
যোগব্যায়াম কেবল আমাদের দেহের পেশীগুলিকেই ভাল ব্যায়াম দেয় না, আমাদের মনকে শান্ত রাখতে সহায়তা করে। চিকিৎসা গবেষণাগুলো প্রমাণ করেছে যে, যোগব্যায়াম শারীরিক এবং মানসিকভাবে উভয়ই ভালো রাখতে সহায়তা করে।
যোগব্যায়াম টেনশন বা স্ট্রেস থেকে মুক্তি দেয় এবং ভাল ঘুমের দিকে নিয়ে যায়, ক্ষুধা এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এটি মনকে সর্বদা শান্ত রাখে।
আর আমরা আগে বলেছি যে, মানসিসক চাপ ডায়াবেটিসের একটি অন্যতম কারণ।
২
যোগব্যায়াম শরীরকে সুস্থ করে তোলে, কারণ এটি আমাদেরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি দেয় অর্থাৎ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস কমিয়ে রাখে এবং হাঁপানির মতো অনেক রোগের ক্ষেত্রেও ইয়োগা বা যোগাসনের পরামর্শ দেওয়া হয়। বর্তমানে করোনা থেকে বাঁচার জন্যও যোগব্যায়ামের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
৩
যোগব্যায়াম রক্তে শ্বাসকষ্টজনিত বাধাগুলো মূল থেকে নির্মূল করে। এজন্য আমরা যদি প্রতিদিন যোগব্যায়াম করি তবে আমরা সুস্থ থাকবো।
বিজ্ঞাপন
৪
বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষের স্থূলতা রয়েছে। আমরা আমাদের জীবনযাত্রায় যোগব্যায়মকে যদি অন্তর্ভুক্ত করি তবে স্থূলত্ব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। যোগব্যায়াম শরীরকে নমনীয় করে। এটি আমাদের পেশী শক্তিশালী করে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি হ্রাস করে। এছাড়াও আমাদের পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে। তাই ফিটনেসেরও জন্য যোগব্যায়াম একটি খুব ভাল উপায়।
৫
যোগব্যায়ামের আমরা আমাদের রক্তে চিনির মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এবং রক্তে চিনির বর্ধিত স্তরকে হ্রাস করতে পারি। আর এ জন্যই যোগব্যায়াম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব উপকারী। এটি এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলও হ্রাস করে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যোগব্যায়মের কী কী আসন অনুশীলন করলে আমরা ডায়াবেটিস নামক ভয়ংকর রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি।
যোগব্যায়ামের অনেক আসন রয়েছে যা আমাদের বিভিন্ন প্রকার অসুখ থেকে মুক্তি দিতে পারে। তবে ডায়াবেটিসের জন্য অর্ধবক্রাসন, ধনুরাসন, উত্তনপদাসন, সর্বাঙ্গাসন, ভুজঙ্গাসন ও কপালভাতি অনুশীলন করা যোতে পারে। অন্তর্জালের এই যুগে আমরা যোগাসন অনুশীলন করার সুযোগ লাভ করতে পারি।
আমরা অনেকেই ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যোগব্যায়ম বা ইয়োগাকে এড়িয়ে চলতে চাই। প্রকৃতপক্ষে যোগব্যায়ম কোনো বিশেষ ধর্মের আচার নয়, এটি সার্বজনীন মানবিক সংস্কৃতি। সুস্থ্ থাকার এবং প্রশান্ত থাকার একটি বিজ্ঞানভিত্তিক প্রক্রিয়া। জাতিসংঘ ২১ জুনকে বিশ্ব যোগ দিবস হিসাবে ঘোষণা করে আমাদের এই চেতনারই প্রতিফলন ঘটিয়েছে।