বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বে প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে বর্তমানে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯.২ শতাংশ। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়তি মাত্রায় থাকার ফলে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির অজান্তেই দাঁত ও মাড়িসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ খুব সহজেই আক্রান্ত হয়।
বিজ্ঞাপন
ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে ব্যাকটেরিয়ার দ্রুত বৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং দাঁত ও মাড়ির রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের মুখে লালা নিঃসরণ কমে গিয়ে জীবাণুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ফলস্বরূপ দাঁতের মাড়িতে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ বেড়ে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় মুখের ভিতরে জিহ্বা এবং মাড়িতে ছোট ছোট গোটা বা ঘা, এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির আরেকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। এ ছাড়াও মাড়ির মাঝখানে পকেটের মতো জায়গা তৈরি হয়। এগুলোকে অবহেলা করলে অনেক সময় দাঁত মাড়ি থেকে আলগা হয়ে যায়।
১. দাঁতের ফাঁকে কোনভাবেই যেন খাবার জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য খাবার পরে অবশ্যই কুলকুচি করতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।
২. সঠিক নিয়মে দিনে ২ বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালের নাস্তা করার পরে। ব্যবহৃত ব্রাশের ব্রিসল অবশ্যই নরম হতে হবে।
৩. ব্রাশ করার পাশাপাশি ডেন্টাল ফ্লসিং করা দরকারি।
৪. মিষ্টি ও আঠলো খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
৫. সংবেদনশীল দাঁতের জন্য ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ টুথপেষ্ট ব্যবহার করতে হবে।
৬. বছরে অন্তত দুইবার ডেন্টাল সার্জনের ( অবশ্যই বিডিএস ডিগ্রীধারী ) পরামর্শ নিতে হবে। ছোটখাটো যেকোন সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করার আগেই চিকিৎসা নিয়ে পরবর্তী ভোগান্তি এড়ানো সম্ভব।
বিজ্ঞাপন
৭. ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ভাঙা বা ধারালো দাঁতের মাধ্যমে অনেক সময় গালে বা জিহ্বায় ক্ষত তৈরি হয়। এধরণের কিছু পরিলক্ষিত হলে দ্রুত ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশী চর্চিত ও ভয়াবহ মহামারী কোভিড – ১৯ বিশ্বজুড়ে চলমান। সম্প্রতি “ওরাল মেডিসিন অ্যান্ড ডেন্টাল রিসার্চ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলছে, মাউথওয়াশে এমনকিছু পদার্থ থাকে যেগুলো কোভিডের সংক্রমণ কমাতে পারে। মুখ থেকে ফুসফুসে পৌঁছানোর আগেই ভাইরাসকে নিস্তেজ করে দেয়া সম্ভব যদি আপনি নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখেন। অথ্যাৎ দাঁত মাজা, মাউথওয়াশ ব্যবহার ও নিয়মিত ফ্লস করার মতন সাধারণ অভ্যাসগুলো আপনার শরীরে কোভিডের প্রভাব কমিয়ে রাখতে পারে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের দাঁত ও মাড়ির যত্নে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখাই মুখ্য। মনে রাখবেন আপনার সামান্য সচেতনতাই আপনার দাঁত ও মাড়ি সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য যথেষ্ট।