ডিমেনশিয়া নিয়ে আমাদের দেশে আলোচনা খুবই কম হয়। যদিও বর্তমানে সরকার ও বেশকিছু বেসরকারি সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। ফলে কিছু কিছু সচেতনতা বাড়ছে।এই অবস্থায় অনেকেই জানতে চান ডিমেনশিয়া আসলে কী? তাদের জন্য আজকের এই বিষয়।
ডিমেনশিয়া ল্যাটিন শব্দ dementare, যার অর্থ পাগল করে দেয়া-হতে উদ্ভূত। স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির বুদ্ধি, স্মৃতি ও ব্যক্তিত্ব লোপ পাওয়া এবং রোগ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকার অবস্থাকে ডিমেনশিয়া বলা হয়। সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং হঠাৎ করেই অনেক কিছুই মনে করতে পারেন না। ফলে তার আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়।
মস্তিষ্কের কোষ সংখ্যা (নিউরন) বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে কমতে থাকে। বয়সের সঙ্গে শারীরিক রোগব্যাধি মস্তিষ্কের ক্ষতি করে যদি স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ভন্ডুল করে দেয়, একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ডিমেনশিয়া বলে। ডিমেনশিয়ার সবচাইতে প্রচলিত রূপ হল আলঝেইমার রোগ ।
বিভিন্ন রোগের কারণে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ হতে পারে, যেমন, এইডস, দীর্ঘমেয়াদী ধূমপান ও মদ্যপান, আলঝেইমার, ভিটামিন বি’এর অভাব, কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়া, মস্তিষ্কের রোগ এবং অনৈতিক জীবনযাপন ইত্যাদি।
ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক বিস্তার খুবই ধীরে হয়, এমনকি মাস কিংবা বছর ধরেও হতে পারে। ভুলে যাওয়ার কারণে রোগী হতাশা, নিদ্রাহীনতা ও অন্যান্য সমস্যায় ভোগে এবং আস্তে আস্তে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
মূলত প্রবীণ ব্যক্তিরাই এ রোগে ভোগেন। ৬০ বছরের কম রোগীদের হার ০.১ শতাংশ, ৬০-৬৪ বছর বয়সী রোগীদের মধ্যে এ রোগের হার ১ শতাংশ, ৬৫-৮৪ বছর বয়সী রোগীদের মধ্যে এ রোগের হার ৩ থেকে ১১ শতাংশ এবং ৮৫ বছরের বেশি বয়সী রোগীদের মধ্যে এ রোগের হার ২৫ থেকে ৪৭ শতাংশ।
কিছু কিছু ওষুধ যেমন donepezil, nemantidine, এবং tacrine রোগীর চিন্তাশীলতা ও শনাক্তকরণ ক্ষমতা বাড়ায়। এসব ওষুধ ডিমেনশিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। যদিও এসব চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়। ডিমেনশিয়া রোগটি জটিল হয়ে গেলে রোগীর সেরে ওঠার আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
ডিমেনশিয়া রোগটি শনাক্ত হওয়ার পরপরই চিকিৎসা সেবা শুরু করা দরকার। রোগীর প্রত্যহিক জীবনের মান বাড়ানো, তাকে যথাযথ সন্মান, সঙ্গ এবং সেবা দেয়া, রোগী ও তার স্বজনদের প্রাত্যহিক কর্মতালিকার সমন্বয়- রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি-পাওয়াকে কমাতে পারে। এখন পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও এসব রোগীর সেবা দেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কেয়ারগিভার সরবরাহ করে থাকে।
রোগটি নিয়ে মুশকিল হলো, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ভুলে যাবেন—এমনটি ধরেই নেওয়া হয়। ফলে ডিমেনশিয়া রোগটি সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষ সচেতন থাকেন না। এখন এমন অনেক ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে, যেগুলো সেবন করলে ডিমেনশিয়া তীব্র হওয়া রোধ করা যায়। কিন্তু বেশির ভাগ রোগী আসেন একেবারে শেষ পর্যায়ে। বিভিন্ন রোগ থেকে ডিমেনশিয়ার উৎপত্তি। তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকা ও সুস্থ জীবনযাপন করাটা জরুরি।
সূত্র: উইকিপিডিয়া ও পত্রপত্রিকা