ইমিগ্রেশন পার হয়ে কবিরের গাড়িতে যখন আমরা উঠে বসলাম, আর গাড়িটাও স্টার্ট নিলো বাতাবাড়ি হয়ে উত্তর ধূপঝোরা বাজার পার হয়ে মূর্তি নদীর তীরে আমাদের নামিয়ে দিতে, তখন সুখের একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো – যাচ্ছি তাহলে!
কোচবিহার আর রংপুরের ভূপ্রকৃতিতে কোন অমিলই চোখে পড়ে না। এমনকি ড্রাইভার কবির যখন মোবাইল ফোনে কাউকে “মুই এলায় আইতোছো” বলে আশ্বস্ত করে, আমরা রংপুরের রাস্তায় চলে ফিরে বেড়াচ্ছি কি না এই নিয়ে ধন্দে পড়ে যাই। তপু চকিতে একবার আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। কেবল ময়নাগুড়ি আর মৌলানি হয়ে যখন গাড়িটা লাটাগুড়ির দিকে যেতে শুরু করে, তখনই বুঝতে পারি সভ্য সমাজের নোংরা জামাকাপড়গুলি সাময়িকভাবে খুলে ফেলবার সময় এসে গেছে।
শামসুল এর কাছে ডুয়ার্স নতুন জায়গা। চোখের পলক না ফেলে সামান্য সৌন্দর্যটুকুও গিলে নিতে চাইছে, বুঝতে পারছি। কেউ কাউকে বিরক্ত করি না। এমনকি কবিরও আপন মনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে আমাদের সৌন্দর্যানুভূতিকে কোনভাবে আহত না করে।
গৌতমদা’ এর মধ্যে ডুয়ার্স রেসিডেন্সি রিসোর্টের রাজাদা’র নম্বরটা আমাকে দিয়ে দিয়েছেন। আগে থেকে কেন যেন ফোন করা হল না।
উত্তর ধূপঝোরা বাজারে দাঁড়িয়ে ভারতীয় সিমগুলি রিচার্জ করে নিতে নিতে, রিচার্জ করে নিচ্ছিলাম আমাদের মন, যার সৌন্দর্য-পিপাসা সপ্তম রিপু হিসেবে গণ্য হবার সমূহ যোগ্যতা রাখে।
পথ খুঁজে নিয়ে গাড়িটা যখন রিসোর্টের দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে, দেখি দূরে ঋজু একটা মানুষের হাস্যোজ্জ্বল দেহাবয়ব আমাদের স্বাগত জানানোর ভঙ্গিতে দাঁড়ানো। উনিই রাজাদা’। ভারতীয় সময় তখন বিকাল সোয়া পাঁচ।
গৌতমদা’ দের আসতে আসতে পরদিন সকাল। ফাঁকা রিসোর্টে কেবল আমরাই অতিথি। পাড়ে বসে নদীর প্রবহমানতা অনুভব করা ছাড়া বিকালে আর কোন কাজ নাই বলে তিনজন মৃদুস্বরে হৈ হৈ করতে করতে নদীপাড়ে গিয়ে উপস্থিত হলাম। বর্ষায় মূর্তি এরকম ভয়ঙ্কর রূপ ধরে আছে, ভাবাই যায় না। আমরা উপভোগ করি। একদৃষ্টিতে স্রোতের দিকে তাকিয়ে থাকলে মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। গতিময় স্রোত নদীর পরিপার্শ্বকে ধীর করে দিয়ে বয়ে চলে যাচ্ছে আরও অনেক নদীর সাথে মিলেমিশে বাংলাদেশের দিকে।
রাতে রাজাদা’কে পেয়ে গেলাম বন্ধু হিসেবে। আসর জমে উঠল আমাদের চারজনের। পরবর্তী তিন দিন কী ঘটতে চলেছে তার আঁচ যেন খানিকটা অনুভব করা গেল। গল্পে গল্পে জানলাম মূর্তি থেকে ৪০/৫০ কিলো দূরে ভুটানের সীমান্তে একটা পাহাড়ি গ্রাম আছে- ‘লালঝামেলা বস্তি’। ডায়না নদীর তীরে লালঝামেলার সৌন্দর্যও নাকি কম নয়। রাজাদা’ই গাড়ির ব্যবস্থা করে দিলেন সকালে।
(আগস্ট ২৮ – সেপ্টেম্বর ২, ২০১৮)