ব্রেকফাস্ট করে তিনজন যথারীতি রওনা করেছি লালঝামেলার দিকে। মাঝামাঝি পথে খবর পেলাম গৌতমদা’রা নিউ মাল এ নেমে পড়েছেন। মনটা আনচান করে উঠলো। ফিরে যাবো? তপু বলল, সারা রাত জার্নি করে সবাই ট্রেন থেকে নেমে ক্লান্ত থাকবে, আগে ফ্রেশ হয়ে নিক. ততক্ষণে আমরাও ঘুরে আসি।
(কীসের ফ্রেশ! ফেরার সময় খেয়াল করলাম জঙ্গলের আশে পাশে নদী ঘিরে একদল মানুষ দারুণ ঔৎসুক্য নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লাঞ্চের টাইমে বুঝেছি, এরাই আসলে তারা…)
লালঝামেলা বস্তিতে একটা ব্রিজ আছে ভুটানের। পাহাড়ে হেঁটে উঠতে উঠতে দারুণ একটা গোল পাথর পেয়ে গেলাম। পাথরের একপাশে ভারত আর অন্য পাশে ভুটান লেখা। সীমান্ত!
আমার কাছে সীমান্ত মানেই সন্দেহ। ছোট্ট একটা পিঁপড়া নির্দ্বিধায় বর্ডার ক্রস করে ভুটানে ঢুকে গেল, দেখলাম। কিন্তু আমি দ্বিধাকে ক্রস করতে পারলাম না। যেখানে আমার যাওয়া নিষেধ, সেখানে অগোচরে চলে যাওয়াটা অপমানজনক মনে হল। আমরা জানি একদিন পাথরটা এই নিষেধাজ্ঞা প্রচারের আরোপিত ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। তখন পাথর শুধুই পাথর। আমাকে অসম্মান করার বিন্দুমাত্র ক্ষমতা থাকবে না তার। কিন্তু তখন, হয়তো, আমি থাকবো না!
পাহাড় থেকে নামার সময় কেন যে কী মনে করে, শামসুল বলতে লাগলো, ভাই রসগোল্লা খেতে হবে। রসগোল্লার সন্ধান দিল ড্রাইভার, সেই ধুপঝোরা বাজারে।
যখন ফিরে আসছি, গুগলে সার্চ দিলাম ‘লালঝামেলা’। জানতে চেয়েছিলাম এটার পর্যটন সংক্রান্ত তথ্যাদি। একটা তথ্যই শুধু ঘুরে ফিরে আসছে- ‘বাইসনের আক্রমণে লালঝামেলায় তিন যুবক নিহত।’ পুরনো খবর। লালঝামেলা তো দেখি আসলেই ঝামেলার! বাইসন আমাদের দেখতে পেয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ফেললে কী হতো, এই ভেবে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে এসে পৌঁছলাম উত্তর ধূপঝোরা বাজারে, রসগোল্লার খোঁজে।
মূর্তি ব্রিজ পেরিয়ে যখন বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম, দেখলাম একদল মানুষ হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে নদীর আশেপাশে। কামানের মতো ক্যামেরা তাক করে যিনি ফটো শুট করছেন, পরে জেনেছি তিনিই রাজর্ষিদা’। তার পাশে মুখ ভর্তি দাড়ি নিয়ে শামীম, দেখা মাত্রই চিনে ফেললাম ফেসবুকের সুবাদে। এখানে বেড়াতে আসার ব্যাপারে পরবর্তীতে গৌতমদা’র চেয়ে শামীমের সাথেই যোগাযোগ হয়েছিল আমার বেশি। ওই দলে আর কারা ছিল পরে ঠিকমতো মনে করতে পারি নি।
[ভ্রমণ বিষয়ক গ্রুপ গন্তব্য তে যুক্ত হোন]