প্রতিটি জিনিসের একটি সৌন্দর্য, আকর্ষণীয় দিক থাকে যে কারণে জিনিসটি সমাদৃত হয় । ইবাদতের সৌন্দর্য এবং আকর্ষণীয় দিক হলো, একমাত্র আল্লাহ তুষ্টি এবং রাসুল সা. এর তরিকা থাকতে হবে। যে কোন একটির অনুপস্থিতি ইবাদত তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। তা আল্লাহর কাছে গৃহিত হয়না
তাই আল্লাহ তা’আলা আমলের পরিমান দেখেন না। মান দেখেন, সৌন্দর্য দেখেন ।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
‘যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে সুন্দর ও উত্তম আমলকারী। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল।’ (সূরা মুলক, আয়াত ২ )
উক্ত আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তাআলা বলেন: আমি দেখতে চাই তোমাদের মধ্যে কার আমল ভালো, কার আমল সুন্দর। কার আমল বেশী তা বলেননি । কর্মের পরিমাণ বেশী হওয়া এটি কোন আকর্ষণীয় বিষয় নয়, কর্মটি ভালো নির্ভুল ভাবে গৃহিত হওয়াটাই ধর্তব্য । এজন্য কিয়ামতে মানুষের কর্ম গণনা করা হবে না, বরং ওজন করা হবে। আর কর্ম ওজনদার হয় আল্লাহর তুষ্টি ও রাসূল সা. এর তরিকা দ্বারা ।
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী সা. বলেছেনঃ দু’টি কলিমা দয়াময় আল্লাহ্র কাছে অতি প্রিয়, উচ্চারনে খুবই সহজ (আমলের) পাল্লায় অত্যন্ত ভারী। কালিমা দুটি হচ্ছে সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহান্নাল্লাহিল আযীম’—(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭৫৬৩)
উক্ত হাদীস থেকেও প্রতিভাত হয় আমল ওজন করা হবে, গণনা নয়।
আপনি কত লক্ষ টাকা দান করলেন, কত রাকাত নামায পড়লেন তা তখনই আল্লাহর কাছে প্রিয় হবে যখন মানসম্মত হবে । আপনার তাহাজ্জুদ, আওয়াবিন, ইশরাক, তারাবিহ তখনই গৃহিত হবে যখন লৌকিকতা মুক্ত এবং সঠিক ভাবে আদায় করবেন।
আর ইবাদতে সৌন্দর্য, উত্তমতা কখন আসে ? ইবাদতে এমন একটা ভাব তৈরি করা যেন আপনি আল্লাহকে দেখছেন, অথবা আল্লাহ আপনাকে দেখছেন যেমন হাদিসে আছে-
উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
জিবরাইল বললেন: ইহসান কী? রাসূল সা. বললেন: এমনভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করবে, যেন তুমি আল্লাহ্কে দেখছো, যদি তুমি তাঁকে না দেখতে পাও, তবে তিনি তো তোমাকে দেখছেন । (বুখারী )
প্রত্যেকে আমরা আমাদের ইবাদতগুলোর প্রতি লক্ষ করলে বুঝা যাবে যে, আমাদের ইবাদত গুলোর কী অবস্থা । বিশেষ করে রমাযানে তারাবিহ । নামাযে যে গুলো সুন্নাত, মুস্তাহাব এগুলোর তো খোঁজই নেই । ওয়াজিবগুলো নির্দ্বিধায় ছেড়ে দেয়া হচ্ছে । যেমন নামাযে কওমা তথা রুকু হতে একদম সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং জলসা তথা দুই সিজদাহর মাঝখানে স্থির ভাবে বসা, এ দুটি ওয়াজিব । কেউ ছেড়ে দিলে নামায হবেনা অথচ কতেক মসজিদে নামাযের গতি এত দ্রুত এই দুটো ওয়াজিব আমলের সুযোগই হয়না।
আবু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি রুকূ এবং সিজদায় তার পিঠ সোজা রাখে না তার সালাত পূর্ণ হয় না। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১০২৭)
নামাযে দরুদ শরীফ হানাফি মাযহাবে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ সুন্নাত । শাফেয়ি মাযহাবে ফরজ । কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দেয় গুনাহগার হবে। নামায ত্রুটিযুক্ত হবে। প্রয়োজনে তাড়াহুড়ার সময় ছোট দরুদ শরীফ হলেও পড়া যেমন: اللهم صل على محمد আল্লাহুম্মা ছল্লি আ’লা মুহাম্মদ।
(ফতোয়ায়ে শামী: ২/৭৪. ১/৫১২, ৫১৮)
কোন ব্যক্তি যদি এভাবে বিশ রাকাত কেন চল্লিশ রাকাতও নামাজ পড়ে তার নামায কোন কাজে আসবেনা ।
আর কোন ব্যক্তি যদি নামাযের ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব সবগুলো প্রতি খেয়াল রেখে আল্লাহ তুষ্টির জন্য দুই রাকাত নামায পড়ে ওই বিশ রাকাত থেকে অনেক দামি।
তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ অন্যন্য ইবাদতের সাথে রমাযানের রোযা তারাবিহ যথাযথ ভাবে পালন করা।
আয়াতুল্লাহ রাসেল
মুফতি ও মুহাদ্দিস
জামিয়া গাফুরিয়া ইসলামপুর, মোমেনশাহী।
প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি জানতে ক্লিক করুন এখানে