মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

দখিগঞ্জ শ্মশান গণহত্যা দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

মুগ্ধতা.কম

৩ এপ্রিল, ২০২০ , ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ ;

দখিগঞ্জ শ্মশান গণহত্যা দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল, শনিবার। রংপুর জেলায় ঘটেছিল এক অকল্পনীয় হত্যাযজ্ঞ। হটাৎ করেই মধ্য রাতে দখিগঞ্জ শ্মশানের কাছে গুলির শব্দে ঘুম ভাঙে আশপাশের মানুষের। ঠিক ২৫ মার্চের কালো রাত্রির মতোই। রংপুরবাসী কোন দিন কল্পনাও করতে পারেনি হাত পা বাঁধা অবস্থায় এমনভাবে বাঙ্গালীদের হত্যা করতে পারে পাক হানাদার বাহিনী। রংপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় সবার প্রিয় জররেজ ভাই (শহীদ এ্যাডঃ ইয়াকুব মাহফুজ আলী, যিনি ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ রংপুর শহরের নবাবগঞ্জ বাজারে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন) সহ ১১ জন বাঙ্গালীকে দখিগঞ্জ শ্মশানে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় লাইন ধরে দাঁড় করে গুলি চালিয়ে হত্যা করে হায়েনার দল। গুলিবিদ্ধ এক জন আর একজনের উপরে ঢলে পরে। নিমিষেই ঝরে যায় তরতাজা প্রাণ।

সেই ধ্বংসযজ্ঞের সময় একজন অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। তিনি গুলিবর্ষণের সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে পড়ে যান এবং তার শরীরের ওপর অন্যরা পড়েছিল বলে তার পায়ে গুলি লাগে। এতে পাক বাহিনী ভাবে তিনি মারা গেছেন। কিছুক্ষণ মৃত আরও দশ জনের সাথে শুয়ে থেকে পাক বাহিনী ঐ এলাকা ত্যাগ করার পরে কোন ক্রমে ঐ এলাকা থেকে বেরিয়ে এসে অন্যদের সহযোগিতায় ভারতে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া সেই ব্যক্তি হচ্ছেন রংপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব তাজহাটের দীনেশ চন্দ্র ভৌমিক। তিনি এলাকায় পরিচিতি ছিলেন মন্টু ডাক্তার নামে।

পরদিনই দখিগঞ্জ শ্মশানের হত্যাযজ্ঞের ঘটনা রংপুরের মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এ খবর মুহূর্তের মধ্যে সারা জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। শত শত মানুষ ছুটে আসে শ্মশানের দিকে নিহতদের এক নজর দেখতে। ঐদিন থেকেই রংপুরের পাকিস্তানিদের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ পালাতে শুরু করে শহর ছেড়ে গ্রামে। গ্রাম ছেড়ে আরো নিরাপদ দূরত্বে সীমান্তের ওপারের দেশ ভারতে।

সে রাতে দখিগঞ্জ শ্মশানে সৈন্যদের হাতে যারা শহীদ হন তারা হলেন –

১) শহীদ এ্যাডঃ ইয়াকুব মাহফুজ আলী (জররেজ)। সকলের প্রিয় জররেজ ভাই। ২) মোহাম্মদ মহরম ৩) শ্রী গোপাল চন্দ্র, ৪) উত্তম কুমার অধিকারী ৫)দুলাল মিয়া ৬) রফিক আলী ৭) সতীশ হাওলাদার ৮) দুর্গা দাস অধিকারী ও আরো দু’জন যাদের নাম পাওয়া যায়নি।

আজো কালের সাক্ষী হয়ে আছে রংপুরের দখিগঞ্জ শ্মশান বধ্যভূমি। বেশ কয়েক বছর আগে ঐ এলাকায় শহীদদের নাম লেখা একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছিল। অতি সম্প্রতি এখানে একটি দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হয়েছে। এছাড়া রংপুরের অন্যতম প্রধান এই বধ্যভূমি সংরক্ষণ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ডিসেম্বর এলেই ফুল পড়ে শহীদদের স্মরণে। কিন্তু আজ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। রংপুরের গনমানুষের দাবী দখিগঞ্জ শ্মশান বধ্যভূমিসহ জেলার প্রতিটি বধ্যভূমিতে একটি করে কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হোক। সরকারীভাবে এখনই উদ্যোগ না নেয়া হলে হয়তো আগামী প্রজন্ম জানতেই পারবে না এখানে কেমন পৈশাচিকতার শিকার হয়েছিলেন তাদের পূর্বসূরি নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ।

আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি দখিগঞ্জ বধ্যভূমির সকল শহীদদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *