মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

দিনগুলো  ফেলে এসেছি

শারমিন আখতার মনি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮:২০ অপরাহ্ণ ;

স্মৃতিকথা - দিনগুলো  ফেলে এসেছি

আমি তখন খুব ছোট। ক্লাস টু তে কিংবা থ্রি তে পড়ি। আর আমার দুই বছরের বড় ভাই শাহীন, সে ছিল পড়া ফাঁকিবাজির  ওস্তাদ। সে প্রায়ই পড়ায় ফাঁকি দেওয়ার জন্য নানা ধরনের অজুহাত দেখাত। আজ জ্বর , কাল মাথাব্যথা এ ধরনের নানান অজুহাতে পড়ায় ফাঁকি দিয়ে যেত। যা হোক, সে যখন জ্বরের বাহানা দেখাত তখন তার পথ্য হিসেবে মা তাকে প্রায়ই পাউরুটি ও দুধ খেতে দিত। আর আমি ওর পাউরুটি আর দুধ খাওয়া দেখে মনে মনে খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করতাম। কিন্তু কী করে খেতে পারব? আমার তো আর জ্বর হয়নি। তাই মা আমাকে ভুল করেও ওর খাবারগুলি খেতে দিতেন না। তাই মনে মনে একদিন ফন্দি করলাম, কী বলে পাউরুটি দুধ খাওয়া যায়। শাহিনের বানানো জ্বর ভালো হওয়ার চার-পাঁচ দিন পর নিজেকে জ্বরের রোগী সাজিয়ে মার কাছে গিয়ে বললাম, ‘মা, আমার না খুব জ্বর হয়েছে’। মা শুনে আঁতকে উঠলেন বললেন, ‘তাই নাকি? তাহলে তো আর রাতে ভাত খাবার দরকার নেই। আমি এখনোই তোমার জন্য কলা পাউরুটি ও দুধ গরম করে নিয়ে আসছি। তুমি রাতে ভাত খাবে না।’

মায়ের কথা শুনে মনে মনে খুব খুশি হলাম। যাক আজকে তাহলে পাউরুটি দুধ খাওয়া হবে। কিন্তু এর পরিবর্তে আমার পথ্য টা যে হিতে বিপরীত হবে তা ভাবিনি। সেদিন কিন্তু মা রান্না করছিল অন্যরকম কিছু। আমি তো আমার জ্বরের কথা বলেছি বিকেলবেলা। কিন্তু মা সেদিন রাতের রান্না করছে‌ মজাদার আর রসালো সব তরকারি। যা দেখে জিভে পানি এসে যায়। আর আমি মার কাছে জ্বরের রোগী সেজে বসে বসে দেখছি, আর মনে মনে ভাবছি কী জন্য আমি বললাম যে আমার জ্বর হয়েছে। কারণ আমার পথ্য হিসেবে মা তো পাউরুটি দুধ বরাদ্দ করেছে। এর বাইরে তো মা আমাকে এই মজাদার খাবারগুলি খাওয়াবে না। এখন কী আর করি, আর কীভাবে বলি, আমার জ্বর হয়নি।

অনেক ভেবেচিন্তে মার কাছে বলেই ফেললাম, ‘মা আমার জ্বর ভালো হয়ে গেছে’ দেখো আমার একটুও জ্বর নেই।’ এ কথা বলার সাথে সাথে মা বলে উঠলেন, না মা তোমার জ্বর ভালো হলেও আজ রাতে ভাত খাবে না, কারণ ভাত খেলেই আবার ডুকড়ে জ্বর আসবে। অগত্যা কী আর করা, জ্বর না আসলেও জ্বরের রোগী সেজে সেদিনের মতো দুধ পাউরুটি খেতে বাধ্য হলাম। যদিও বা লোভের বশবর্তী হয়ে রোগী সেজেছিলাম। ভাইয়ের সাথে খুনসুটি করার জন্য এমন জ্বরের অভিনয় করেছিলাম। কিন্তু মজাদার খাবারগুলি না খাওয়ার দুঃখটাকে সারা রাত ধরে ঘুম না আসা পর্যন্ত ভুলতে পারিনি। তবে সেদিনই পণ করেছি, আর কখনো মার কাছে মিথ্যে কথা বলব না। কারণ যদি আমি সেদিন মিথ্যের আশ্রয় না নিতাম তাহলে হয়তো মজাদার খাবারগুলো থেকে মা আমাকে বঞ্চিত করতেন না। পরিবারের অন্য সদস্য সহ ভাইবোনদের সাথে মিলেমিশে একসাথে খেতে পারতাম।

মিথ্যে মানুষকে শুধু ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় আর সত্য চিরন্তই সত্য, সুন্দর হয়ে থাকে। সত্য কথা বলার মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ লুকিয়ে থাকে, যা মিথ্যের মাঝে পাওয়া যায় না।

আজ আমি বড় হয়েছি, শিখেছি অনেক কিছুই। হয়তোবা ভুলে গেছি অনেককিছু, কিন্তু ছেলেবেলার পাউরুটি দুধ খাওয়ার স্মৃতিটাকে আজও ভুলতে পারিনি। যা আজও মনে পড়লে আপন মনে হেসে ফেলি। আর বলি মার মনটা কত নরম, আমার মিথ্যে বলার দুষ্টুমিটা ধরতে পারেনি । আসলে মায়েরা বুঝি এমনই হয়।

শারমিন আখতার মনি
Latest posts by শারমিন আখতার মনি (see all)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *