ভারতের রাজধানী, নতুন দিল্লী। এখানেরই একটি পাঁচ-ছ’তলা বিল্ডিং। পুরো এলাকায় এরকম প্রচুর বিল্ডিং আছে। তো রাস্তার ধারেই এটি। রাস্তার ওপাশে একটি বিরাট টেন্ট হাউস। প্রায়ই অনুষ্ঠান হয়। যখন হয় না তখন এটি পাড়ার খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তা…..
এই বিল্ডিং-এর নীচের তলায় ওরা থাকে। এর সামনের অংশটা কার ও বাইক পার্কিং। পিছনের অংশটায় দুটি ওয়ান বি. এইচ. কে. ফ্ল্যাট আছে। দোতলায় সামনের দিকে দুটি টু বি. এইচ. কে. এবং পিছনের দিকে একটি থ্রি বি. এইচ. কে. ফ্ল্যাট আছে। তিন ও চার তলায় দোতলার মতই। আর পাঁচ তলায় সামনের দিকে ছাদ আর পিছনের দিকে একটি থ্রি বি. এইচ. কে. ফ্ল্যাট আছে। এর ওপরে ছাদ। ছ’তলা-টোটাল।
নীচের তলার ফ্যামিলির ব্যাপারে তাহলে সত্য গল্পটি এখন প্রকাশ করি, ক্যামন!
এরা পাঞ্জাবি পরিবার। লোকটি প্রপার্টি ডিলারের কাজ করে। নীচের দুটি ফ্ল্যাটই এদের। একটিতে নিজেরা থাকে আর অন্যটি ভাড়া দিয়ে রেখেছে।
প্রথম বউটি সংসারের সব কাজ করে। আবার একটি বিউটি পার্লারে গিয়ে পার্ট টাইম জবও করে। এর একটি মেয়ে। ক্লাস নাইনে পড়ে। ও নাইনে উঠতে এরা এখানে ফ্ল্যাট দুটি কিনে নিয়ে বাস করতে এসেছে। আগে পাঞ্জাবে থাকতো। এখন সেখানে বাবা, মা থাকে।
এই মেয়েটি যখন জন্মালো তখন ওদের বিয়ের পাঁচ বছর হয়েছে। আঁতুরের বোনঝিকে দেখতে মাসি এলো। মাসি অবিবাহিতা। দিল্লীতেই থাকে। একটি সরকারি আদালতে চাকরি করে। তার সঙ্গে দিদিমা ও দাদুও এলো, নাতনির মুখ দেখতে। কয়েকদিন বাদে নানা ও নানি নিজের বাড়ি চলে গেল। মাসি থেকে গেল। এখানে থেকে দিদির দেখাশোনা করতে লাগলো। অফিসের ছুটি নিয়ে রইল। দিদির তো সিজারিয়ান কেস। বোনকে কাছে পেয়ে দিদি খুব খুশি। ওর জামাইবাবুও বেশ আনন্দিত। দিনরাত কেটে যাচ্ছে।
তিনমাস পর শালি খুব বমি করছে। দিদি তো ওর বরকে বলে ডাক্তার ডাকালো, ডাক্তার এলেন। উনি বললেন, ” ইনি তো প্রেগন্যান্ট।” কিছু মেডিসিন প্রেসক্রিপশনে লিখে দিয়ে চলে গেলেন।
দিদি বলল, ” বল কে? আমরা তার সঙ্গে তোর শাদি দিয়ে দেবো, এখনই।”
বোন কী বলবে? দিদি জোর করতে লাগলো।
বোন- দিদিরে তোর বর।
দিদি- হ্যাঁ? কী বলছিস, তুই? এই বোন!
বোন-হ্যাঁ রে দিদি! আই লাভ মাই জামাইবাবু! আমি জিজাজিকেই বিয়ে করবো।
দিদি পাথর দৃষ্টি নিয়ে বোনের দিকে তাকিয়েই রইলো, আকাশ ভেঙে পড়লো যে ওর মাথায়।
এরপর আর বিয়ে হলো না। তবে চিরদিনের জন্য সে সতীন হয়ে রয়ে গেল। চাকরি ছেড়ে দিলো। এরপর এরও এক মেয়ে সন্তান জন্ম নিল।
বর বড়র ঘরে শোয় না। ছোটর ঘরেই রাত কাটায়। দিন যায়। সপ্তাহ যায়। মাস যায়। বছর যায়। ছোটর মেয়েটি সাত বছরের হল। নিজের মেয়েরও একে, দুজনকেই বড় লালন পালন করে। সংসারের সব কাজ আবার বিউটি পার্লারের কাজ। বোন পটের বিবি। বর তার কাছে লেপ্টে থাকে। বড় তো একেবারে কঙ্কালসার। আর ছোট টসটসে। বরও লাল্টু। দিনরাত টলছে। পাঁড় মাতাল। সপ্তাহে একদিন করে কাবাড়িওলা এসে খালি বোতলগুলি বস্তায় ভরে কিনে নিয়ে যায়। বিদেশী ব্র্যান্ডের সব, দামি। প্রথমে বিয়ের পর একটি কার কিনেছিল। এবার আর একটি কিনলো। দুটি ফ্ল্যাট। দুটো কার। দুটি বউয়ের তো।
একদিন খুব চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে। বিল্ডিং-এর সবাই নীচে নেমে এসেছে। ধাক্কা দিয়ে ওদের গেট খোলানো হল। বড় বউটি ডাক্তার ডাকছে, ফোন করে। বর ছোটকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে, খাটের ওপরে। মেয়েদুটি কাঁদছে। কভ ব্যাপার? দিদি বলল-
“ছোট এক শিশি ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিয়েছে।”
হ্যাঁ, বর তো রোজ রাতে খেয়ে ঘুমোয়, তাই ঘরে আছেই। ডাক্তার এলেন। চিকিৎসা করার জন্য তাঁর নার্সিং হোমে ভর্তি করে নিয়ে গেলেন। এবার পুলিশকে বড় বউটি ফোন করে নিয়ে এলো। বলল- ” আমাকে আমার বর ও বোন দুজনে মিলে গলা টিপে হত্যা করতে যাচ্ছিল। আমি কোনোপ্রকারে নিজেকে বাঁচাতে পেরেছি। এরপর তিনজনে খুব ঝগড়া হয়। আর বোন ঝট করে গিয়ে, ঘুমের ওষুধ খায়।” পুলিশের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিল বর। পুলিশ চলে গেল। এর কয়েক দিন পর ছোটও সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে এলো। ওরা একসঙ্গে থাকে।
একজন বঞ্চিতা। ও বলে, ” আমি তো বর থাকতেও বিধবা। ”
আর একজন জবর দখল করে সুখ ভোগ করছে।
চোখের সামনে বর ছোটর মেয়েকে আদর করছে আর তার মেয়েকে বকাবকি করছে। ওরা তিনজন বাইরে কারে করে ঘুরতে যাচ্ছে। ওর মেয়ে কেঁদে ভাসছে। ওর মেয়েকে সাধারণ স্কুলে পড়াচ্ছে। আর ছোটর মেয়ে খুব নামিদামি স্কুলে পড়ছে। ওর মেয়ে মায়ের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যায় ও আসে। আর ছোটর মেয়েকে কারে করে তার বাবা স্কুলে দিতে যায়। নিতেও যায়। ওদের দামি দামি পোশাক। এদের কমদামি। চলছে এভাবেই…।
আর একদিন সেদিনও খুব হৈহল্লা হচ্ছে। সবাই নিচে নেমে দেখলো- বউ দুটির মা ও বরের মা, দুজনে এসেছে। বর বলছে, ” আপনার বড় মেয়েকে এখান থেকে নিয়ে যান! আমি ওকে আমার এখানে রাখতে চাই না। ”
বড় বউটিকে ওর মা বলল, ” চ, তুই আমার ওখানে গিয়ে মেয়েকে নিয়ে থাকবি! ” তখন বরের মা বলল, ” না না না, আমি একেই আমার পুত্রবধূরূপে মানি। আমি আমার নাতনী ও বৌমাকে নিয়ে গিয়ে আমার ওখানে রাখবো। ” তখন বড় বলল, ” আমি আমার স্বামীর ঘর ছেড়ে কোথাও যাব না। মরতে হয় যদি, পতির হাতেই মরব। ” অনেক বোঝালো ওকে, দু মায়েতে মিলে। কিন্তু ও গেল না। ওরা দু মা যে যার আপন ঘরে ফিরে চলে গেল। আর এও নিজের স্বামীর ঘরেই রয়ে গেল।
এ যুগেও এরকম পতিব্রতা রমণী আছে…!
নয়াদিল্লি, ভারত থেকে