মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

পুত্রকে লেখা ভূদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি

মজিব রহমান

৭ জানুয়ারি, ২০২৩ , ২:৫৪ অপরাহ্ণ

পুত্রকে লেখা ভূদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি

[ভূমিকা: চিঠিটি ভূদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলকাতার বাসভবন থেকে

সংগ্রহ করেন অধ্যাপক ও গবেষক শাহজাহান মিয়া। ভূদেব বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের বিক্রমপুরের

সন্তান ছিলেন। ভারত ভাগের আগেই চলে যান কলকাতায়। তাঁর বিভিন্ন লেখা কলকাতার জাতীয়

পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এমন কয়েকটি লেখা পড়ার সুযোগ হয়েছে। কচুরিপানা

নিয়ে  তাঁর একটি গবেষণাপত্রও পড়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি কেমন মানুষ ছিলেন তার পরিচয় পাওয়া যায় পুত্রকে লেখা চিঠি থেকে। পুত্র চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ও একজন গবেষক এবং সরকারি

কর্মকর্তা হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে

২০০৮ সালে সরোজিনী বসু স্বর্ণপদকে ভূষিত করে।]

চিত্ত,

বাংলামতে কাল ছিল আমার ৮২-তম জন্মদিন। ৩রা অগ্রহায়ণ, ইংরেজি মতে জন্ম ছিল পরশু

১৮.১১.৬৭। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো চক্ষে আর দেখিতে পারিব না। কয়েক দিনের মধ্যে আমার

চোখের আলো নিভে যাবে। তাই আজ উইল লিখিয়া যাইতেছি।

মৃত্যু কবে আসিবে জানি না। মৃত্যুকে ভয় করি না। ভয় করি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি পর্বকে। এই

পর্বে কত কি যে ঘটতে পারে ভাবতে গিয়ে অশান্তি বোধ করি। কাল থেকে পায়ের পাতা বেশী

রকম ফুলছে। ইহা কি জীবনের শেষ পর্বের সূচনা?

জীবনে কোন খেদ নাই। কোনদিন কাহারো অনিষ্ট করি নাই। জনগণের সেবা করিতে চেষ্টা

করিয়াছি। এখন কিছুই করিতে পারি না। আমার মরাই ভাল। দীর্ঘকাল যদি ভূগি কোন ঘুমের

অসুধ দিয়া আমাকে মারিয়া ফেলিয়ো।

জীবনে অনাড়ম্বর দরিদ্র ছিলাম। মৃত্যুর পর আমার শবে ফুল সাজাইয়া শব খাটে স্থাপন করিয়া

আমার জীবনের আদর্শ নষ্ট করিও না। একখানা সবচেয়ে কম দামের খাটালিতে আমার শব শ্মশানে

নিয়ে যাবে। সম্ভব হইলে বিদ্যুতের চুল্লীতে আমার দেহ ভষ্ম করিবে। মরার উপরে খাড়ার ঘার মত

শ্মশানে চিতার উপর আমার মাথার খুলি বাঁশের আঘাতে ভাঙ্গিয়া বর্বরতার পরিচয় দিও না।

মনের বাইরে স্বর্গ নাই। আমাকে স্বর্গে পাঠইবার জন্য কোন মন্ত্র পড়িও না। আমার শ্রাদ্ধ করিও

না। তোমার মন খুশীর জন্য সত্য দরিদ্রকে সাহায্য করিতে পার। ব্রহ্মময় জগতে আমি বুদবুদ মাত্র।

মৃত্যুর পর আমি ব্রহ্মে মিশিয়া যাইব। মৃত হিন্দুকে স্বর্গে পাঠাইবার জন্য ব্রাহ্মণ ভোজন করান

হয়। আমি স্বর্গ মানি না। সুতরাং ব্রাহ্মণ ভোজন অনাবশ্যক। আমার মৃত্যুতে যদি আনন্দ

প্রকাশের জন্য ভোজ দিতে চাও আমি কেন তাতে বাধা দিব?

আমার তিনটি বীমা আছে। মৃত্যুর পর তাহা হইতে আনুকে দিবে পাঁচশত টাকা। তাহার

বিবাহে অন্য মেয়েদের মত গয়না ও যৌতুক দিতে পারি নাই।

আজ আমার নাতিনী এগার জন আর নাতি সাত জন। বাকি টাকা হইতে প্রত্যেক মেয়েকে দিবে

পঞ্চাশ টাকা করিয়া। নাতনীদের প্রত্যেককে দিবে পঁচিশ টাকা করিয়া। আর যে নাতিরা চাকরি

করে না তাদেরও পঁচিশ টাকা করিয়া দিবে। হেন ও রাধারমণকে কিছু দিও।

ইতি

ভূদেব বন্দ্যোপাধ্যায়

২০/১১/৬৭