মুগ্ধতা ব্লাড ব্যাংকে আপনার দেওয়া তথ্য বাঁচাতে পারে একটি জীবন। আপনার তথ্য দিন, প্রয়োজনে রক্ত খুঁজুন এখানে।

প্রাণহীন এবারের আমার ঈদের দিন

মাসুদ বশীর

৩০ মে, ২০২০ , ১০:২৬ অপরাহ্ণ ;

প্রাণহীন এবারের আমার ঈদের দিন

ঈদ মুবারক। এবারের রমজান মাসটা যে কি করে নিশ্চুপে ইতি টানলো বুঝতেই পারলাম না। প্রতিবছর রমজানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা অন্যরকম আমেজ মনের মধ্যে দোলা দেয়, কিন্তু এবারের রমজানটা শুধু আতংক, ভয়, উদ্বিগ্নতা, উৎকন্ঠার ভেতরেই কাটলো এবং রমজান পরবর্তী সময় এখনো ওভাবেই কাটছে। আমার তো মনে হয় এখন সারা পৃথিবীর সবার মাঝে একটি কথাই বিরাজ করছে যে, এই বিরুদ্ধ সময়ের ইতি কোথায়? আর কতদিন ঘরে থাকতে হবে? কবে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে? কে দেবে এই অশুভ থাবা থেকে বাঁচতে সত্যিকারের উপায়?

আসলেই- কেউ নেই, কেউ ছিল না এবং কেউ থাকবে না! একমাত্র অসীম আকাশের পানে চেয়ে চেয়ে প্রার্থনা করা ছাড়া কারো মাঝেই আজ এর সঠিক কোন যেন সমাধান জানা নেই। তাইতো বেশিরভাগ মানুষই আজ ভুলে গেছেন দিন, মাস, বছর গণনার হিসেব এবং এর ব্যতিক্রম আমিও নই।

আমার উনিরে প্রায়শই এখন জিজ্ঞেস করি আজ কী বার, মাসের কত তারিখ, ইত্যাদি ইত্যাদি, সে-ও সবসময় উত্তর দিতে পারেনা তখন মোবাইল স্ক্রিনে দেখে এর সমাধান দেয়। এমন কি এই সেদিন আমার মা’কেও জিজ্ঞেস করলাম আজ কত রোজা মা? কিন্তু চট করে মা-ও আমার উত্তর দিতে পারেননি। বয়োবৃদ্ধরা সবসময় রোজার হিসেব রাখেন, অথচ আতঙ্কগ্রস্থ মা আমার এবার যেন রোজার হিসেব ভুলেই বসে আছেন।

আমিতো নিজেই এখন বার গণনা ভুলে গেছি, কেমন যেন প্রতিটা দিনকেই এখন আমার শুধু শুক্রবার শুক্রবার মনে হয়! মসজিদে যাওয়া বন্ধ তাই জুম্মাবার আবার কি জিনিস তা-ও ভুলে গেছি? ছোটদের মতো বড়মনে এখন সেই ছোট্টটিই লাগছে একদম নিজেকে, কী অদ্ভুত ব্যাপার-স্যাপার! সেদিন মসজিদের মাইকে আজান হতে শুনে ভাবলাম- কী ব্যাপার বেলা একটা কি বাজতে চললো, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি তখন বেলা বারোটা, সেকেন্ড খানেক সম্বিতে হুঁশ ফিরলো ও… আজ মনে হয় শুক্রবার, কি একটা অবস্থা! মনে হয়, মানে এখন যেন আমি স্কুল জীবনের বীজগণিত করছি! যাক এভাবেই বরকতময় মহামূল্যবান মাসটি ইতি টানলো চলে আসলো খুশির ঈদ!

ঈদের সাথে খুশির একটা কমপ্যাক্ট বিষয় জড়িত কিন্তু জীবনে এই প্রথম মনে কোনরকম খুশি অনুভব হয়নি আমার, কেমন যেন প্রাণহীন প্রাণহীন ঈদের দিন! এমনকি এবারে ঈদের নামাজটাও পড়া হয়নি আমার, মানে- আমি মন থেকে একটু পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করি তাই বাড়িতে ঈদের নামাজ পড়িনি, যে বিষয়টা সম্পর্কে আমার যথাযথ জ্ঞান নেই সে বিষয় আমি সহজে চর্চা করিনা, করতে ভালোবাসি না, আর মসজিদে তো যাবোই না কারণ আমি সবক্ষেত্রেই একটু অতি সাবধানতা অবলম্বন করে চলি কিনা। এভাবে বাসাতেই ঈদের সকালটা পার করলাম, যথারীতি গোসল সেরে মাকে সালাম করলাম, আমার উনিসহ বাড়ির সকল ছোট সদস্যরা আমার কাছে সালামি আদায় করলো, দুপুরে যথারীতি ঈদের মধ্যাহ্নভোজ সেরে বিছানায় গা এলিয়ে এন্ড্রয়েডে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে কেটে গেল আমার এবারের প্রাণহীন  ঈদ।

সেই ছোট্ট বেলা থেকে- একটু পড়া, লেখালেখি চর্চা ও ঈশ্বর প্রার্থনায় ব্রত থাকা আমার সহজাত স্বভাব, তাই এই অবাধ্য দুঃসময়ে তা যেন আরো জোরালো হয়ে উঠছে দিনদিন। কী পাব? কী পেলাম? এবং, কিন্তু, বরং- এসব ভাবনা আমাকে তেমন স্পর্শ করে না। আমি আমার মতো, তবে এবারের ঈদটা ‘আমার মতো’ করে পালন করা হয়নি আমার, হয়তো আমার মতো অনেকরই এবারের ঈদটা চাঁদের মাঝেই এভাবেই সীমাবদ্ধ ছিলোঃ

রমজান চলে গেল

ঈদ কি দেখা পেল?

চাঁদেতে ঝরছে ঈদ

ধরাতে দুখের নিদ…

ঘরে থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সকলকে নিরাপদ রাখুন এই প্রত্যাশায় পুনশ্চ ঈদ মুবারক।

 

মাসুদ বশীর
কবি, রংপুর

 

মাসুদ বশীর
Latest posts by মাসুদ বশীর (see all)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *