প্রোপা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে!
কাঁদলে তাকে কেমন দেখায়, কাঁদলে তার চেহারায় কতটা অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে এটাই সে দেখতে চায়।কারণ তার ধারনা সে কাঁদলে কেউ বুঝতে পারে না! তার কান্নাতে কারো মন একটুও গলে না! হয়তো চেহারায় অতটা অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে না তাই।
প্রোপা গত তিন দিন ধরে কেঁদেছে। তবু কেউ গুরুত্ব দেয়নি।
বাবা স্রেফ জানিয়ে দিয়েছে, “আমার পছন্দ করা পাত্রকেই বিয়ে করতে হবে। এ বাড়িতে কোনো প্রেমের বিয়ে টিয়ে চলবে না। এসব নোংরা জিনিস আর যদি নিজের সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দিস, তবে আমার কবরে মাটিটা দিয়ে তারপর যা ইচ্ছা করিস…”।
কথাগুলো শুনে প্রোপার কান্না কিছুক্ষণের জন্য থেমে যায়। প্রোপা ভাবে, প্রেম-ভালোবাসা নোংরা? আমার জন্মটা তাহলে শুধুই পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়িয়েছে? কারো ভালোবাসার উপলক্ষ হয়নি। এটা কি আরো বেশি নোংরা না?
নিজের জন্মদাতা সম্পর্কে কঠিন বাস্তব কথাগুলো ভাবতে ভাবতে প্রোপার চোখের পানি চোখেই শুকিয়ে যায়। আবার বাবার শেষ বাক্যটা মনে পড়লেই ভেতরটা কেঁপে ওঠে। ওমন কিছু ভাবতেও পারে না… অসহায় কান্না আবারও এসে ভর করে চোখের পাতায়।
আয়নার জগত থেকে প্রোপাকে বের করে আনে মোবাইলের রিংটোন। খুব চেনা রিংটোন। টাইটানিকের মাই হার্ট উইল গো অন এর সুর। শুধু রাফি কল দিলেই এটা বাজে।
-হ্যালো..
-প্রোপা! তুমি এখনও কাঁদছো? কেঁদো না প্লিজ!
-রাফি, কী করবো আমি?মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার!
-তোমাকে বারবার বলছি, চলে আসো বাড়ি ছেড়ে। কিছু একটা ব্যবস্থা করে ফেলবো আমি।
-কী ব্যবস্থা? বিয়ে করতে পারবা? প্লিজ রাফি… বাঁচাও আমাকে…
-প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো..এখন কীভাবে বিয়ে করি? স্টুডেন্ট আমি। এটা সম্ভব না… তুমি আসো। ব্যবস্থা একটা হবেই..
– বাহ! কত সহজে বলে ফেললে। পুরুষ জাত তো! তাই পারো।বিয়ে না করে আমি তোমার সাথে কীভাবে থাকবো?
আমি মেয়ে। যা ইচ্ছা তাই করতে পারি না…
-আমার উপর আস্থা রাখো প্লিজ…
-কিসের আস্থা রাফি? বিয়ে না করলে আমি পালিয়ে কী করব? তুমি বিয়ে করবা কি না বলো?
-করবো, এখন না… প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো…
-কাপুরুষ কোথাকার। বিয়ে করার হিম্মত থাকলে ফোন দিও-
বলেই প্রচণ্ড রাগে-দুঃখে ফোন রেখে দিলো প্রোপা। কান্না পাচ্ছে, মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা, প্রেম,ভালোবাসা কি তাহলে সত্যি সত্যিই নোংরা?
খানিক পরেই ঘরে ঢুকলেন প্রোপার মা।
-কিরে তুই রেডি তো? ওরা সবাই চলে এসেছে।
-ও
-জানিস, তোর বাবার মুখে শুনলাম, ওরা আংটি এনেছে! পছন্দ হলে আজই পরিয়ে দেবে।”
প্রোপা আবারো বলল, ও।
দ্বিতীয়বার “ও” শুনে মা একটু চুপসে গেলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বললেন, “মা! তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে! কি যে খুশি আমি…”
মায়ের মুখের দিকে প্রোপা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো… কান্না আটকে বললো, “খুশি কেন মা? আমাকে কাঁদাতে পেরে?”
মা প্রোপার মাথায় হাত রেখে বললেন, “এসব কথা বলিস না মা। আমরা তো তোকে সুখী দেখতেই চাই।”
গেস্ট রুমে অচেনা মানুষগুলোর সামনে যেয়েও প্রোপার মনে একটা ক্ষীণ আশা ছিল যে তারা তাকে অপছন্দও তো করতে পারে। প্রোপা ভেবে রেখেছিলো যে সবার সাথে অভদ্র আচরণ করবে। তাহলে আর তাকে পছন্দ করবে না। তাহলেই সে বেঁচে যায়। কঠিন সিদ্ধান্তটা নিতে হবে না আর..
কিন্তু বরপক্ষের সামনে প্রোপা কথা বলার কোনো সুযোগই পেলো না। ছেলের বাবা আর মেয়ের বাবাই সব কথা সেরে ফেললেন। মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে। তারা এখন আংটি পরাতে চায়…
প্রচন্ড কষ্টে প্রোপার চোখ ফেটে কান্না আসছিলো। কাপুরুষ রাফির মুখটা বারবার চোখে ভেসে উঠছিলো। সহ্য করতে পারলো না প্রোপা।সবার সামনে বলেই বসলো, “মাথাটা ঘুরছে খুব। আমি একটু ভেতরে যাব।”
প্রোপার কথা শুনে সবাই চমকে তাকাল। ছেলের মা বললেন, “একি সাংঘাতিক ব্যাপার। মেয়ের কী হয়েছে?”
“কিছু না কিছু না” বলতে বলতে মেয়েকে ঘরে নিয়ে গেলেন ওর মা।
মা ভয় পাওয়া চেহারা নিয়ে বললেন, “কী হলো মা তোর?”
-বাথরুমে যাবো। দুমিনিট পর আসছি। তুমি যাও।
টেবিলে রাখা জগ, ড্রয়ার থেকে দশটা ঘুমের ট্যাবলেট নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো প্রোপা। প্রোপা জানে মাফ সে পাবে না, তবু একবার মনে মনে বললো, “আল্লাহ মাফ করে দিও…”
সবকিছু এলোমেলো লাগছে। মূহুর্তেই ওলট পালট হয়ে গেল সব ভাবনা। কে যেন ডাকছে,”প্রোপা..মা কি হলো রে? গেটটা খোল!”
ঠিক তখনই প্রোপা শুনতে পেলো ফোন বাজছে, “