ফারিহান ও নাবহান প্রতিদিন সকালে স্কুল যায়। বাড়ির পাশেই স্কুল। ওরা প্রতিদিন সকালে একসাথে স্কুলে যায়। দু’জন একসাথে থাকে বলে ভয়ও করে না। ওদের আম্মু খাওয়া দাওয়া করিয়ে স্কুলের ড্রেস পড়িয়ে তৈরি করে দেয়। ওরা মামাতো ফুপাতো ভাই। ওদের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বও বিদ্যমান।
ফারিহান একটু দুষ্ট হলেও নাবহান অতি শান্ত শিষ্ট ভদ্র ছেলে।
ওরা প্রতিদিন সকালে সোজা স্কুলে যায় আবার ছুটি হলে সোজা বাসায় চলে আসে। ফারিহান মাঝে মাঝে অন্য রাস্তায় একটু ঘুরে আসতে চায়। কিন্তু নাবহান তা করতে দেয় না।
একদিন সকালে ওরা স্কুলে পৌঁছে দেখে স্কুলের গেটে তালা মারা। এমনটি হবার কথা না। ওরা স্কুলে পৌঁছার পূর্বেই দারোয়ান মামা গেট খুলে রাখে। কিন্তু আজ নেই। ওরা আশেপাশে দারোয়ান মামাকে কোথাও খুঁজেও পেলো না।
স্কুলে ওরা প্রতিদিন সবার আগে পৌঁছে। এটার অবশ্য একটা বিশেষ কারণও আছে। ওরা দু’জনে প্রথম বেঞ্চে একসাথে একই স্থানে বসে। নির্দিষ্ট সিট হাতছাড়া হবার ভয়ে ওরা স্কুলে সবার আগেই আসে। স্কুলের দারোয়ান মামাও জানে সে কথা। আচ্ছা ওরা কি সময়ের বেশি আগে স্কুলে পৌঁছে গেছে?
ওদের হাতে ঘড়ি নেই বোঝার উপায় নেই।
ফারিহান প্রস্তাব দেয়। ‘চলো বন্ধু আমরা এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে স্কুলের পিছন থেকে ঘুরে আসি।’
নাবহান চুপচাপ থাকে কিন্তু কিছু বলে না। ফারিহান আবার বলে ‘আরে চলো!’ কি হবে? আমরা দু’মিনিটেই চলে আসবো।’
”আচ্ছা চলো।’
ওরা দু’জন স্কুলের পিছনে যায়। সেখানে বেশি নির্জন। বেশ কয়েকটি গাছও আছে। গাছগুলো অনেক পুরানো। এখন বসন্তকাল। চারিদিকে শুকনো পাতা পড়ে আছে। ওরা ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকে। শুধু শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি শুনতে পায়।
হঠাৎ করে নাবহান দুষ্ট হয়ে উঠে।
শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি ও যেন একটু অন্যভাবে শুনতে চায়। সামান্য দৌড়ানোর পর নাবহান উধাও হয়ে যায়। থেকে যায় শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি। ফারিহানও থেমে যায়। ভয় লাগে তার। আশেপাশে চারিদিকে তাকায় সে নাবহানকে কোথায় দেখতে পায় না। ভয়ে শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। স্পষ্টই দেখতে পায় ফারিহান।
সামান্য পরেই চারিদিকে শুনশান নিরবতায় একটি আওয়াজ শুনতে পায় ফারিহান। যেন দূর থেকে নাবহান ডাকছে-ফারিহান, ফারিহান, আমাকে বাঁচাও!
চারিদিকে তাকায়। কিন্তু নাবহানকে কোথাও পায় না। নাবহান ডাকছে এটি সে নিশ্চিত। এদিকে আওয়াজ আরো স্পষ্ট কান্না হয়ে ভেসে আসছে ফারিহানের কানে। সামান্য এগিয়ে যায় সে।
নাবহানের চিৎকার আরো স্পষ্ট হয়। অনেক ভয় পায় সে। কিন্তু বন্ধুকে ছেড়ে এখন থেকে পালানোর চিন্তাও করে না। এক পা দু পা করে কিছু সামনে এগুতেই একটি বিশাল গর্ত দেখতে পায় ফারিহান। তখন স্পষ্টই শুনতে পায় নাবহানের চিৎকার।
গর্তে উঁকি দিতেই নাবহানকে দেখতে পায় সে। নাবহান কান্না জড়িত কন্ঠে তখনো চিৎকার করছে- ফারিহান আমাকে বাঁচাও, আমাকে উপরে তোলো!
-তুমি চিন্তা করো না! আমি ব্যবস্থা করছি।
ফারিহান চারিদিকে কোন বাঁশ কিংবা লাঠি খুঁজতে লাগলো। কিন্তু চারিদিকে কিছুই পেলো না। একবার ভাবলো স্কুলের দারোয়ান মামাকে বলি, তাহলেই তো ব্যবস্থা হয়। তবে এতে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ সকলেই জেনে যাবে।
এইসময় আরো জোড়ে চিৎকার দেয় নাবহান। সাপ সাপ! আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও!
এবার আর উপায় নেই, দারোয়ান মামাকে খবর দিতেই হয়। যেই চিন্তা সেই কাজ। দৌড় দিতে শুরু করলো ফারিহান। কিন্তু এগুতে পারলো না। পিছন থেকে কে যেন তাকে টেনে ধরলো।
আরো ভয় পেলো ফারিহান।
পিছন ফিরে দেখলো বট গাছের একটি ঝুরি তাকে টেনে ধরেছে।
সে ছাড়াতে চেষ্টা করলো, কিন্তু পারলো না। ফারিহান তখন ভয়ে চিৎকার দিতেও ভুলে গেছে।
তবে সে বট গাছের ঝুরির কর্ম দেখে আরো আশ্চর্য হয়। বিশাল বট গাছের আরেকটি ঝুরি নাবহানের দিকে যায়। সাপটি সরিয়ে দেয়। নাবহানকে পেঁচিয়ে উপরে তুলে নিয়ে আসে। এরপর দুজনকেই মুক্ত করে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতার ওরা চুপ হয়ে যায়।
একটি বট গাছ ওদের বাঁচালো! মুক্ত হয়ে ওরা স্কুলের দিকে ছুটে এলো। পিছন ফিরে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে বট গাছের দিকে তাকালো। বট গাছটি যেন আনন্দ ও কান্নার মিশ্রিত ভাব নিয়ে তাদের বিদায় জানালো।